শ্রমিক সংগঠন সচরাচর কাজ করে কল-কারখানা এবং শিল্প ক্ষেত্রে। প্রথাগত সেই ছক ভেঙে শ্রমজীবী মানুষের পরিবারের কাছে পৌঁছনোর পরিকল্পনা নিল সিটু। মূলত অসংগঠিত ক্ষেত্রের বিপুল সংখ্যক শ্রমিকের কাছে পৌঁছনোই তাদের লক্ষ্য। তার মধ্যেও আবার অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমজীবী মহিলাদের দিকে বিশেষ করে নজর দিতে চায় সিপিএমের শ্রমিক সংগঠন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের দেওয়া নানা প্রকল্পের সুযোগ-সুবিধা মোকাবিলা করেই এই অংশের কাছে পৌঁছতে চাইছে সিটু।
নানা ধরনের সুরক্ষা প্রকল্পের ছাতার নীচে শ্রমিকদের নিয়ে এসে অসংগঠিত ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। রাজ্যে এখনও পর্যন্ত অসংগঠিত ও নির্মাণ শ্রমিক মিলে এক কোটি ৭৯ লক্ষ জন ‘বিনা মূল্য সামাজিক সুরক্ষা যোজনা’য় (বিএএমএসএসওয়াই) নথিভুক্ত হয়েছেন। তার মধ্যে পরিষেবা পেয়েছেন ৩৬ লক্ষ, প্রকল্প বাবদ সরকারি তরফে দেওয়া হয়েছে ২৭০০ কোটি টাকা। বরং, সংগঠিত শিল্প এলাকায় কিছু অসন্তোষের কারণে তৃণমূল একটু পিছিয়ে আছে। শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র মাধ্যমে কিছু কঠোর পদক্ষেপ নিয়ে ভাবমূর্তি উদ্ধার করে সংগঠিত শিল্পে এখন জমি শক্ত করার দিকে নজর দিয়েছে শাসক দল। এমতাবস্থায় অসংগঠিত ক্ষেত্রের বিস্তৃত এলাকায় কাজের জায়গা বাড়াতে চাইছে সিটু। সিপিএমের কৃষক, খেতমজুর, শ্রমিক ও বস্তি সংগঠনের আয়োজনে গত এপ্রিলের ব্রিগেড সমাবেশ থেকে ডাক দেওয়া হয়েছিল প্রতি পরিবারের কাছে পৌঁছনোর। সিটুর রাজ্য সম্মেলনে ব্লক ও বুথ স্তরে সমন্বয় করে সেই পরিকল্পনারই খসড়া করা হয়েছে।
হলদিয়ায় ১৩ তম রাজ্য সম্মেলন থেকে রাজ্য নেতৃত্বেও রদবদল সেরে নিয়েছে সিটু। সংগঠনের নতুন রাজ্য সম্পাদক হয়েছেন জিয়াউল আলম। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য, উত্তরবঙ্গের চা-বলয়ের শ্রমিক নেতা জিয়াউলের সাংগঠনিক দক্ষতা বাম মহলে সুবিদিত। উত্তরবঙ্গ থেকে সিটুর রাজ্য সম্পাদকের দায়িত্ব পাওয়ার ঘটনাও তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক শিবিরের একাংশ। সিটুর বিদায়ী রাজ্য সম্পাদক অনাদি সাহুকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে রাজ্য সভাপতি পদে। অব্যাহতি নিয়েছেন আগের রাজ্য সভাপতি, পরিবহণ শিল্পের নেতা সুভাষ মুখোপাধ্যায়। সম্মেলনে তৈরি হয়েছে ৩৫ জনের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী এবং ৩৫৫ জনের রাজ্য কাউন্সিল। তার মধ্যে দু’টি জায়গা আপাতত ফাঁকা। সেই সঙ্গেই গঠিত হয়েছে ১২৭ জনের কর্মসমিতি। গোটা রাজ্য থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রের মোট ৯৬১ জন প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেছিলেন সিটুর সম্মেলনে।
সিটুর এক রাজ্য নেতার কথায়, ‘‘আগের মতো সংগঠিত ক্ষেত্রে শ্রমিকদের পাওয়ার সুযোগ কমে আসছে। নিয়োগ কমছে, সংগঠিত ক্ষেত্রও সঙ্কুচিত হচ্ছে। অসংগঠিত ক্ষেত্রে এখন বিপুল সংখ্যক মানুষ কাজ করেন, তাঁদের কাছে পৌঁছনোর উপযুক্ত পথ বাড়ি বাড়ি যাওয়া। এর মধ্যে আছেন বড় সংখ্যায় মহিলা, পরিযায়ী শ্রমিকদের মধ্যেও তাঁরা আছেন। এঁদের কাছে আমাদের পৌঁছতে হবে, তাঁদের সমস্যা, দাবি-দাওয়া নিয়ে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।’’ শ্রমিকদের মধ্যে যে ধর্মীয় বিভাজনের পরিবেশ তৈরি করছে বিজেপি, তার মোকাবিলার কথাও উঠে এসেছে সম্মেলনে।
হলদিয়ার সম্মেলনে এসেছিলেন সিটুর ত্রিপুরা রাজ্য সম্পাদক মানিক দে। তিনিও বলেছেন, সে রাজ্যে শাসক বিজেপির বাহিনী সিটুর কম-বেশি ১৫৬টি দফতর কার্যত বন্ধ করে দিয়েছে। শ্রমিকদের কর্মস্থলে বামপন্থীদের ঢুকতে বাধা আসছে, তাই তাঁরাও বাড়ি বাড়ি পৌঁছে যোগাযোগ গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)