Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
CPM

CPM-Congress: রাজ্যে বিরোধী পরিসর দখলে কর্মসূচি সাজাচ্ছে বামেরা, সাড়া মিলছে না কংগ্রেসের

জোট গড়েই বিধানসভা ভোটে লড়ে ভরাডুবি হয়েছিল বাম ও কংগ্রেসের। তার পর থেকে আলাদা ভাবেই পথ চলছে তারা।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সন্দীপন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০২২ ০৬:২২
Share: Save:

বিধানসভা নির্বাচনের ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার আগেই একাধিক উপনির্বাচন এবং পুরসভার ভোটে লাগাতার বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে বিজেপি। তার সঙ্গে এখন আবার শুরু হয়েছে দলত্যাগের হিড়িক। বিজেপির প্রতীকে নির্বাচিত বিধায়ক, সাংসদেরা দল ছাড়ছেন। আরও অনেকে একই পথে আসতে পারেন ধরে নিয়ে ‘দরজা’ খুলে রাখার জন্য দলে বার্তা দিচ্ছেন তৃণমূল কংগ্রেসের নেতৃত্ব। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যে বিরোধী পরিসর দখল করার সুযোগ দেখছে সিপিএম। সেই লক্ষ্যেই আন্দোলন কর্মসূচি সাজাচ্ছে তারা। কিন্তু তাদের প্রস্তাব সত্ত্বেও এখনও তেমন সাড়া মিলছে না কংগ্রেসের!

জোট গড়েই বিধানসভা ভোটে লড়ে ভরাডুবি হয়েছিল বাম ও কংগ্রেসের। তার পর থেকে আলাদা ভাবেই পথ চলছে তারা। কিন্তু ‘বৃহত্তর লক্ষ্যে’র কথা মাথায় রেখে দলের রাজ্য সম্মেলন ও পার্টি কংগ্রেসে রাজনৈতিক লাইন বদল করেনি সিপিএম। রাজ্যের ক্ষেত্রে বিজেপি ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে সব শক্তিকে একজোট করার লক্ষ্যই বজায় রেখেছে তারা। আনিস-কাণ্ড থেকে শুরু করে বগটুইয়ের ঘটনা, নারী নির্যাতন এবং স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগকে সামনে রেখে যৌথ ভাবে রাস্তায় নামার পর্যাপ্ত সুযোগ রয়েছে বলেই সিপিএম নেতৃত্বের অভিমত। নীতিগত ভাবে রাজ্যের কংগ্রেস নেতৃত্ব এই ব্যাপারে সিপিএমের সঙ্গে একমত হলেও পরিকল্পনার ঘাটতি মিটতে দেখা যাচ্ছে না।

রাজ্যে বিধানসভা ভোটের পরে সিপিএম ও কংগ্রেস নেতৃত্বের আর আনুষ্ঠানিক কোনও বৈঠক হয়নি। তবে শহরতলিতে একটি অনুষ্ঠানের অবসরে বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু কথা বলেছেন কংগ্রেসের বর্ষীয়ান সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্যের সঙ্গে। রাজ্যে একের পর এক যা ঘটনা ঘটছে এবং তার প্রেক্ষিতে জোরদার আন্দোলনের কথা বিমানবাবু বলেছেন প্রদীপবাবুকে। বামফ্রন্ট চেয়ারম্যানের মতে, রাজ্যে বিজেপির কোনও হাওয়া এখন নেই। তৃণমূলের বিকল্প যে বিজেপি হতে পারে না, তা ক্রমশই আরও স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় বিরোধী পরিসরে বাম, কংগ্রেসেরে মতো ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক শক্তির আরও সক্রিয় হওয়া প্রয়োজন। বিষয়ের কোনও অভাব নেই। কিন্তু তাঁরা বার্তা দিয়ে রাখলেও কংগ্রেসের দিক থেকে তেমন কিছু দেখা যাচ্ছে না। সূত্রের খবর, বিজেপির দুর্বল হয়ে যাওয়ার সুযোগ যে কংগ্রেস ও বামেদের কাজে লাগাতে হবে, এই বিষয়ে একমত হয়েছেন প্রদীপবাবুও।

সব ঠিকমতো চললে আগামী বছর রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন হবে। সেই ভোটে কৌশল ঠিক হয় স্থানীয় স্তরেই। কিন্তু তার পরে লোকসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে প্রথমে আন্দোলনের ঐক্য এবং সেই সূত্রে ভোটের সমঝোতা গড়ে তোলার পক্ষপাতী কংগ্রেস নেতৃত্বের বড় অংশ। গত লোকসভা নির্বাচনে দু’পক্ষের সমঝোতা না হলেও কংগ্রেসের যে দু’জন জয়ী হয়েছিলেন, সেই অধীর চৌধুরী ও আবু হাসেম (ডালু) খান চৌধুরীর বিরুদ্ধে প্রার্থী দেয়নি সিপিএম। লোকসভা ভোটের জন্য কংগ্রেসের তাগিদই বেশি হওয়া উচিত বলে মনে করেন সিপিএম নেতৃত্বের একাংশ। কংগ্রেসের অধিকাংশ নেতাই এখন অবশ্য যুব কংগ্রেসের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় ব্যস্ত। আবার উদয়পুরের চিন্তন শিবিরের পরে ‘এক ব্যক্তি, এক পদ’ নীতি মেনে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি পদে পরিবর্তন আসতে পারে, এমন জল্পনাও আছে কংগ্রেসের অন্দরে। সব মিলিয়ে বামেদের তুলনায় কংগ্রেসের তৎপরতা অনেকটাই ম্রিয়মান। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, ‘‘আমরা বিজেপি ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্যের পক্ষেই আছি। কিন্তু সবটা তো আমাদের হাতে নেই!’’

ঘটনাচক্রে, মেয়ো রোডে গান্ধী মূর্তি এবং শহিদ মিনার ময়দানে মাতঙ্গিনী হাজরার মূর্তির কাছে অবস্থানরত দু’দল শিক্ষক চাকরি-প্রার্থীদের দুই মঞ্চে মঙ্গলবার গিয়েছিলেন কংগ্রেসের প্রদীপবাবু। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে বেরিয়েও তিনি বলেছেন, ‘‘মেধা তালিকায় নাম থাকা শিক্ষক পদপ্রার্থীরা অসহনীয় পরিস্থিতিতে দিনের পর দিন বসে থাকবেন, এটা মেনে নেওয়া যায় না। প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলব, যাতে সব প্রতিবাদী শক্তি মিলে একসঙ্গে আন্দোলন করে সরকারকে স্বচ্ছ নিয়োগে বাধ্য করা যায়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

CPM Congress
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE