গত ৭ ডিসেম্বর সুরকার পলাশ মুচ্ছলের সঙ্গে বিয়ে ভাঙার কথা ঘোষণা করেছিলেন স্মৃতি মন্ধানা। সেই ঘোষণার ১৪ দিন পর মাঠে নামলেন মন্ধানা। বিশাখাপত্তনমে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ভারতের জার্সি গায়ে দেখা গেল তাঁকে। তবে ছন্দ পেলেন না তিনি। ২৫ বলে ২৫ রান করে আউট হলেন তিনি।
খেলা শুরুর আগে থেকেই মন্ধানার দিকে ক্যামেরা তাক করেছিল। তিনি অনুশীলন করছিলেন এক মনে। খেলা শুরুর আগে সতীর্থদের সঙ্গে হাসিমুখেও দেখা গেল তাঁকে। খুনসুটিও করলেন। কিন্তু খেলতে নামার পর মাঝেমধ্যেই উধাও হয়ে যাচ্ছিল হাসি। দেখে মনে হচ্ছিল, মনের মধ্যে কোথাও ব্যক্তিগত জীবনের ধাক্কা কাঁটার মতো বিঁধছে।
ভারতের ফিল্ডিংয়ের সময়ও মন্ধানাকে খুব একটা সপ্রতিভ দেখায়নি। ফিল্ডিং মিস করেন। ক্যাচও ছাড়েন। তাঁর হাতে লেগে বল বাউন্ডারির বাইরে চলে যায়। পরে ওপেন করতে নেমে শুরুতে সমস্যা হচ্ছিল মন্ধানার। ঠিকমতো টাইমিং হচ্ছিল না। কয়েকটি বল ব্যাটের কানায় লাগে। যে বলে তিনি চোখ বন্ধ করে অফ সাইডে চার মারেন, সেই বলই সোজা ফিল্ডারের কাছে যাচ্ছিল।
চামারি আটাপাট্টুর এক ওভারে দু’টি চার মারেন মন্ধানা। সেখানেই স্ট্রাইক রেটে কিছুটা বাড়ে। নইলে এক সময় বলের থেকে রান ছিল কম। তিনটি চার মারলেও ১০০-র বেশি স্ট্রাইক রেটে রান করতে পারেননি মন্ধানা। ইনোকা রণবীরার বলে কভারের উপর দিয়ে ছক্কা মারতে গিয়ে নীলাক্ষী ডি’সিলভার হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ভারতের সহ-অধিনায়ক।
ভারতের বিশ্বকাপ জয়ে বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন মন্ধানা। ন’ম্যাচে ৪৩৪ রান করেছিলেন তিনি, যা প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় সর্বাধিক। ভারতীয় ব্যাটারদের মধ্যে মহিলাদের এক বিশ্বকাপে সর্বাধিক রানের রেকর্ডও করেছিলেন তিনি। ৫৪.২৫ গড়ে একটি শতরান ও দু’টি অর্ধশতরান করেছিলেন মন্ধানা।
বিশ্বকাপের ফাইনালের পর সুরকার পলাশ মুচ্ছলের সঙ্গে মাঠেই উল্লাস করতে দেখা গিয়েছিল মন্ধানাকে। ডিওয়াই পাটিল স্টেডিয়ামের পিচেই মন্ধানাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন পলাশ। ২৩ নভেম্বর বিয়ের কথা ছিল তাঁদের। সঙ্গীত, মেহেন্দি, গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানও হয়েছিল ধুমধাম করে। উপস্থিত ছিলেন মন্ধানা বেশ কয়েক জন সতীর্থ। কিন্তু বিয়ের আগের দিন জানা যায়, হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়েছে মন্ধানার বাবাকে। বিয়ে পিছিয়ে যায়।
আরও পড়ুন:
এর পর প্রকাশ্যে আসে পলাশের একাধিক মহিলার সঙ্গে সম্পর্কের কথা। শুরু হয় নতুন জল্পনা। ক্রিকেটারের সঙ্গে সুরকারের দূরত্ব তৈরি হয়েছে বলে শোনা যায়। এর মধ্যেই শোনা গিয়েছিল, ৭ ডিসেম্বর বিয়ে হতে পারে দু’জনের। যদিও সেই খবরের সত্যতা স্বীকার করেননি মন্ধানার ভাই। শেষ পর্যন্ত ৭ ডিসেম্বর সকালেই বিয়ে ভাঙার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন মহিলাদের এক দিনের ক্রিকেটে বিশ্বের এক নম্বর ব্যাটার।
বিয়ে ভাঙার ঘোষণা করে সমাজমাধ্যমে মন্ধানা লেখেন, ‘‘গত কয়েক সপ্তাহ ধরে আমার জীবন নিয়ে অনেক জল্পনা-কল্পনা চলেছে। আমি মনে করি এই মুহূর্তে আমার কথা বলা গুরুত্বপূর্ণ। আমি খুবই ব্যক্তিগত প্রকৃতির। আমি সে ভাবেই থাকতে চাই। কিন্তু আমার স্পষ্ট করে বলা দরকার যে, বিয়ে বাতিল করা হয়েছে। আমি এই বিষয়টি এখানেই শেষ করতে চাই এবং আপনাদের সকলকে একই অনুরোধ জানাচ্ছি।’’
তিনি আরও লেখেন, ‘‘আমি আপনাদের অনুরোধ করছি, দয়া করে এই মুহূর্তে উভয় পরিবারের গোপনীয়তাকে সম্মান করুন এবং আমাদের নিজস্ব গতিতে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ দিন। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের সকলের এবং আমার একটি উচ্চতর উদ্দেশ্য রয়েছে। সব সময় সর্বোচ্চ স্তরে দেশের প্রতিনিধিত্ব করে আসছি। আমি আশা করি, যতদিন সম্ভব ভারতের হয়ে খেলা চালিয়ে যাব এবং ট্রফি জিততে পারব। তাতেই আমার মনোযোগ থাকবে। আপনাদের সকলের সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ। এগিয়ে যাওয়ার সময় এসেছে।’’
তার পরেই নেটে অনুশীলন করতে দেখা যায় মন্ধানাকে। একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে মন্ধানা জানান, ক্রিকেট তাঁর সবচেয়ে বড় ভালবাসা। ক্রিকেট তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের সমস্যাকেও দূরে সরিয়ে দিতে পারে। মন্ধানা বলেন, “আমার মনে হয় না, ক্রিকেটের থেকে বেশি আমি কিছু ভালবাসি। ভারতের জার্সি পরে খেলা আমার কাছে সবচেয়ে গর্বের। ক্রিকেট আমার ব্যক্তিগত জীবনের সমস্যাকেও দূরে সরিয়ে রাখে। জীবনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে।” আপাতত ক্রিকেটেই তিনি মন দিতে চান বলে জানিয়ে দেন ভারতের হয়ে বিশ্বকাপজয়ী ক্রিকেটার।