Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

বামেদের জমি রামকে ছেড়ে দিতে রাজি নন বুদ্ধ-কারাট

তৃণমূলের হাতে আক্রান্ত হয়ে বেশ কিছু জায়গায় গুটিয়ে যাচ্ছেন বাম নেতা-কর্মীরা। আবার আক্রান্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রেও অনেক জায়গায় পিছিয়ে পড়ছেন তাঁরা। আর সেই সুযোগে বামেদের রাজনৈতিক জমি দখল নেওয়ার চেষ্টা করছে বিজেপি। নিজেদের দুর্বলতা মেনে নিয়েই এই বিপদ রুখতে এ বার দলের কর্মী-সমর্থকদের সতর্ক করলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তাঁর সাফ কথা, “এ রাজ্যে বামের জমি রামের হাতে দেওয়া যাবে না কিছুতেই!”

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:৩৬
Share: Save:

তৃণমূলের হাতে আক্রান্ত হয়ে বেশ কিছু জায়গায় গুটিয়ে যাচ্ছেন বাম নেতা-কর্মীরা। আবার আক্রান্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রেও অনেক জায়গায় পিছিয়ে পড়ছেন তাঁরা। আর সেই সুযোগে বামেদের রাজনৈতিক জমি দখল নেওয়ার চেষ্টা করছে বিজেপি। নিজেদের দুর্বলতা মেনে নিয়েই এই বিপদ রুখতে এ বার দলের কর্মী-সমর্থকদের সতর্ক করলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তাঁর সাফ কথা, “এ রাজ্যে বামের জমি রামের হাতে দেওয়া যাবে না কিছুতেই!”

বুদ্ধবাবুদের বাড়তি পাওনা, কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদীর রাজত্বে বিজেপি-র বিপদ যে বহু গুণ বেশি, তা মেনে নিয়েই বাম দলগুলির পাশাপাশি গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিকে একজোট করে লড়াই করার কথা এখন বলছেন প্রকাশ কারাটও। বুদ্ধবাবুকে পাশে বসিয়েই বৃহস্পতিবার কলকাতায় সপ্তম পার্টি কংগ্রেসের (অর্থাৎ পৃথক দল সিপিএম প্রতিষ্ঠার) ৫০ বছর পূর্তির সভায় এই বৃহত্তর গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ ঐক্যের কথাই বলেছেন দলের সাধারণ সম্পাদক। এই প্রশ্নেই সম্প্রতি বিতর্ক বেধেছে সিপিএমের অন্দরে। শুধু বাম ঐক্যে সীমাবদ্ধ না থেকে গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলিকে সঙ্গে নিয়ে সাম্প্রদায়িক বিজেপি-র বিরুদ্ধে লড়াই করার লাইনের পক্ষে সওয়াল করছিলেন দলের পলিটব্যুরো সদস্য সীতারাম ইয়েচুরি। এই মতের পক্ষে ছিলেন বুদ্ধবাবুও। দিল্লিতে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে এই প্রশ্নে তুলকালাম বিতর্ক হয়েছে। তার পরে কলকাতায় এসে দু’দিনের রাজ্য কমিটির বৈঠকেও স্বয়ং কারাট শুনেছেন, বঙ্গ ব্রিগেডের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশই এ রাজ্যে তৃণমূল ও বিজেপি-র মোকাবিলায় বৃহত্তর গণতান্ত্রিক ঐক্যের পক্ষে। কারাটের এ দিনের বক্তব্য সেই বাস্তবতারই স্বীকৃতি বলে দলের একাংশের মত।

রাজ্য কমিটির বৈঠকের শেষে এ দিনের সভায় বুদ্ধবাবু অবশ্য বক্তা তালিকায় ছিলেন না। কিন্তু পরিস্থিতি বিচার করে জরুরি সিদ্ধান্ত হয়, গেরুয়া শিবিরের উত্থান মোকাবিলায় এ রাজ্যের সিপিএম কর্মী-সমর্থকদের কাছে কড়া বার্তা দিতে গেলে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীই উপযুক্ত লোক। রাজ্য কমিটতে এক প্রাক্তন সাংসদও একই প্রস্তাব দিয়েছিলেন। সেইমতোই এ দিন প্রধান বক্তা কারাটের পরে চাঁছাছোলা ভাষায় শুধু মোদীর বিজেপি-কেই বিঁধেছেন সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য বুদ্ধবাবু। নামই নেননি তৃণমূলের! বিজেপি মোকাবিলার কৌশল হিসাবে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, আক্রান্ত মানুষের পাশে দ্রুত গিয়ে দলকে দাঁড়াতেই হবে। ‘পাশে আছি’, এই আশ্বাস পেলে তবেই নিচু তলায় বাম সমর্থকদের বিজেপি শিবিরে যাওয়ার প্রবণতা রোখা সম্ভব। প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে এ দিনের সভায় বুদ্ধবাবু বলেছেন, ‘রামের জমি’ মানে রথযাত্রা, মন্দির-মসজিদের বিভেদের রাজনীতি। আর ‘বামের জমি’ মানে কৃষক-শ্রমিকের লড়াই। বুদ্ধবাবুর কথায়, “যে জমি কৃষক-শ্রমিকের রক্তে লাল হয়ে আছে, তার রং কিছুতেই গেরুয়া হবে না!” একই সঙ্গে তিনি অবশ্য স্বীকার করেছেন, আক্রান্ত এলাকায় দৌড়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে তাঁদের তরফে কিছু ঘাটতির সুযোগ বিজেপি নিচ্ছে। তাই বুদ্ধবাবুর বার্তা, “কোনও কোনও এলাকায় আক্রান্ত হয়ে আমরা একটু পিছু হঠেছি। বিজেপি এসে বলছে, আমাদের দিকে এসো! এটা হতে দেওয়া যাবে না। সেখানে গিয়ে বলতে হবে, আমরা আছি, আমরা আসছি!” বাম শিবির ছেড়ে যাঁরা গেরুয়া বাহিনীতে আশ্রয় নেওয়ার কথা ভাবছেন, তাঁদের প্রতি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর আবেদন, “মাথা নিচু করবেন না! অনৈক্যের চোরাবালিতে পা দেবেন না! ধর্মনিরপেক্ষতার জমি ধরে রাখুন।”

এই পরিস্থিতিতে কী বলছেন কারাট? সিপিএমের সাধারণ সম্পাদকের ব্যাখ্যা, এক দিকে কর্পোরেট জগৎ সমর্থন করছে মোদীকে। তাঁর সরকার এমন আর্থিক নীতি নিচ্ছে, যা আখেরে সাধারণ মানুষের বিপক্ষেই যাবে। আর এর সঙ্গেই মিশছে সঙ্ঘ পরিবারের হিন্দুত্ববাদী চিন্তাধারা। যা গরিব মানুষের মধ্যে ধর্ম নিয়ে বিভাজন বাধাবে। কারাটের উপলব্ধি, দক্ষিণপন্থী আর্থিক নীতি ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মাঠ বড় করতে হবে। কারাটের বক্তব্য, “সমস্ত গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিকে এই লড়াইয়ে পাশে পেতে চাই।”

বিজেপি-র বিপদ নিয়ে এখন সরব তৃণমূলও। তবে তাতে বিজেপি নিয়ে পাছে দলীয় মহলে বেশি আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে, তা ভেবেই সম্ভবত এ দিন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় বামেদেরই প্রধান বিরোধী বলে অভিহিত করেছেন। লোকসভা ভোটের ফলের নিরিখে তৃণমূল ৩৬, বাম ২৩, বিজেপি ১৭ ও কংগ্রেস ১৪টি পুরসভায় এগিয়ে। এই তথ্য দিয়েই এ দিন মেদিনীপুরে মুকুল বোঝাতে চেয়েছেন, তাঁদের প্রধান বিরোধী বামেরাই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE