Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
জেলে বসে কুণাল ঘোষের লেখা

সুদীপ্ত সেনের সঙ্গে সাম্প্রতিক কথোপকথন

গ্রেপ্তারের পর বিধাননগর কোর্ট, আলিপুর কোর্টে দেখা হয়েছে। এরপর আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে দেখা হল। কথা হল। কিছু অংশ এরকম: আমি: কোন্ অন্যায় করেছি যে এভাবে মিথ্যায় ফাঁসালেন? সুদীপ্ত: আমি তো অভিযোগ করিনি। পুলিসকে জিজ্ঞেস কর। তুমি ফিনান্স দেখতে না। মানি মার্কেটেও ছিলে না। পুলিস তোমাকে জড়াচ্ছে। আমি কী করব? তৃণমূলের সঙ্গে ঝগড়া করলে কেন?

শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:২৭
Share: Save:

গ্রেপ্তারের পর বিধাননগর কোর্ট, আলিপুর কোর্টে দেখা হয়েছে। এরপর আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে দেখা হল। কথা হল। কিছু অংশ এরকম:

আমি: কোন্ অন্যায় করেছি যে এভাবে মিথ্যায় ফাঁসালেন?

সুদীপ্ত: আমি তো অভিযোগ করিনি। পুলিসকে জিজ্ঞেস কর। তুমি ফিনান্স দেখতে না। মানি মার্কেটেও ছিলে না। পুলিস তোমাকে জড়াচ্ছে। আমি কী করব? তৃণমূলের সঙ্গে ঝগড়া করলে কেন?

আমি: সিবিআইকে চিঠিতে ওইভাবে আমার নাম? কার কথায়?

সুদীপ্ত: (একটু চুপ থেকে)এটা আমার চিঠি নয়।

আমি: সেটা বলতে এত মাস লাগল?

সুদীপ্ত: (চুপ)

আমি: নিজাম প্যালেসে সেই বৈঠকের পরদিন কথামতো মুকুল রায় পাঠিয়েছিল রজত মজুমদারকে?

সুদীপ্ত: হ্যাঁ। একটা ব্যাঙ্ক ড্রাফট এনেছিল। কথা হল অনেক। (চুপ)

আমি: কোম্পানির খারাপ অবস্থা গোপন করলেন কেন? পালালেন কেন?

সুদীপ্ত: কী আর বলব! তবে পালাই নি। একটু সময় চাইছিলাম।

আমি: কাদের কথায় এসব করলেন?

সুদীপ্ত: (চুপ)

আমি: সবাই বলছে পরিবারকে বাঁচাতে পুলিশের কথায় চলছেন আপনি।

(তখনও ইডি স্ত্রী/পুত্রকে অ্যারেস্ট করে নি)

সুদীপ্ত: তারা যে কোথায়, কিছুই জানি না আমি।

(বিধাননগর কোর্টে প্রথম দিন কথার ফাঁকে ছেলের সঙ্গে যোগাযোগের কথা বলেছিলেন)

আমি: প্রাণ ঢেলে কাজ করলাম। এই দিনটা দেখতে হল!

সুদীপ্ত: পুলিশকে তো কোম্পানির মধ্যে থেকে কারা ডুবিয়েছে, বলেছি। এরা নিজেদের মত করছে। বললাম, আমাকে একটা সুযোগ দিলে টাকা ফিরিয়ে দেব। অন্য সংস্থাকে যে মডেলে রাজ্য সরকার সুযোগ দিচ্ছে, এখন আমাকে দিচ্ছে না। এটা নিয়ে রাজনীতি করছে। নিজেরা টাকা ফেরত দিয়ে হাততালি কুড়োচ্ছে। তৃণমূলের জন্য সব করলাম, আজ সবচেয়ে বড় বিশ্বাসঘাতকতা ম্যাডাম করলেন। কী করিনি ওঁর জন্য?

আমি: তদন্তে বলেছেন? বলবেন?

সুদীপ্ত: (চুপ) কাকে বলব? কে বিশ্বাস করবে? পুলিশকে বলা যাবে না। আর গোটাটা পুলিশ যেভাবে সাজাচ্ছে, তাতে এসব দিকে আর কে তাকাবে? আমি ছাড়া, সারদা ছাড়া ওই তৃণমূলের পাশে কে ছিল? ম্যাডাম যে প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন, আমি ওঁকে বলেছিলাম।

আমি: কোম্পানি ডুবছে, মিডিয়া চলবে না, সময় থাকতে বললেন না কেন?

সুদীপ্ত: (গোঁজামিল জবাব) ভেবেছিলাম সামলে নিতে পারব।

কথার সময় খানিকটা অংশ মনোজ নেগেল (সারদার এক ডিরেক্টর), অরবিন্দ চৌহান (সুদীপ্তবাবুর গাড়িচালক) ছিল।

মনোজ: স্যর, আপনি কেন বলছেন না নির্দোষদের ধরা হয়েছে। আমি কী করলাম? চাকরি করা ছাড়া। চৌহান কী করল? সোমনাথ স্যর, কুণাল স্যর কী করলেন?

সুদীপ্ত: আমি তো বলছি তোমরা নির্দোষ। পুলিশ যদি না শোনে, ওদের মত চালায়, আমি কী করব? আমি সম্পূর্ণ দোষ স্বীকার করতে রাজি আছি।

আমি: সেটা তো আইনসম্মতভাবে বলতে হবে।

সুদীপ্ত: (চুপ) পুলিশ মানবে না।

আমি: আপনি তো আমাকে বিশ্বাসই করেননি। কবে বলেছিলাম মিডিয়া কমান, প্রেস বসান নিজে, খরচ কমান শোনেন নি।

সুদীপ্ত: (গোঁজামিল) শুনতাম। প্রেস বসানোর কথা ভাবছিলাম।

আমি: কত কষ্ট করে নিজেকে তৈরি করেছিলাম। কী অবস্থায় এনে ফেললেন!

সুদীপ্ত: (নীরব)। তৃণমূল এটা অন্যায় করল। সব সুবিধাটা নিয়ে এখন মামলার পর মামলা। আমাকে টাকা ফেরতের সুযোগ দিচ্ছে না।

আমি: সেই পরিস্থিতিটা তো আপনিই তৈরি করে দিলেন। বিনা নোটিসে মিডিয়া বন্ধ। আপনি উধাও। কত লোক বিপদে। আমরা অন্ধকারে।

সুদীপ্ত: ওগুলোই তো দখল করে চালাচ্ছে। তৃণমূল মানেই তো সারদা। মিঠুনদা, শতাব্দী, ইমরান, শুভাদা, অর্পিতা ঘোষ যে যার ফায়দা নিয়ে গেল। ম্যাডাম ওদের নিয়ে নাচছেন। আজ ওঁঁর এত কিছু। সেদিন সারদা ছাড়া কে ছিল? এখন ওঁর কে ডি সিংকে দরকার!

আমি: মুকুলদের পাল্লায় পড়লেন কেন?

সুদীপ্ত: (নিরুত্তর)

(একটু থেমে-) তুমি তৃণমূলের সঙ্গে আর ঝগড়া কোর না। যা করেছে ওরা, তা তো করেছেই, এখন আরও রেগে যাচ্ছে।

আমি: সারদার টাকা কোথায়, আপনি সব বলে দিচ্ছেন না কেন? অনেকে ভাবছে আমরা কোটি কোটি টাকা সরিয়েছি। দোষ না করে অপবাদ নিয়ে ঘুরতে হচ্ছে।

সুদীপ্ত: (গোঁজামিল) বলছি তো সব। তাছাড়া সত্যি কজন লগ্নি, সত্যি কত টাকা, সরকার দেখুক। আমার হিসেবে ৫০০-৬০০ কোটির বেশি ফেরত দেওয়ার নেই, তাও ২০২৪ পর্যন্ত!

আমি: আমাদের কাছে অন্য নানা ব্যবসার গল্প দিতেন কেন?

সুদীপ্ত: ছিল তো। এক্সপোর্ট ইউনিটও ছিল। যে কোম্পানিগুলি টাকা তোলার, সেগুলোর সঙ্গে বাকিগুলোও বন্ধ করে দিল। অল্প হলেও কাজ হত। চালু রাখলে ব্যবসাটা করা যেত।

আমি: পঞ্জি স্কিম ছিল?

সুদীপ্ত: (ধীরে) ওই ধরণের কিছু ছিল।

আমি: তবে যে বলতেন ওসব নেই। ব্যাঙ্কিং-এ যাব। এটিএম হবে!

সুদীপ্ত: কিছু এজেন্ট, কর্মী, ঘরের লোকেরাই শেষ করে দিল। আর তৃণমূল-।

আমি: যাদের নগদে বড়সড় টাকা দিয়ে রেখেছেন, কী হবে?

সুদীপ্ত: তারা না দিলে, শেষ। বললে কে বিশ্বাস করবে? আর ম্যাডাম (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়)? উনি তো সব নিয়েছেন আর এখন সব মুছে ফেলে দিতে নেমেছেন।

আমি: অ্যাকাউন্টস যারা দেখত, তারা কোথায়?

সুদীপ্ত: বেইমান। একজন ব্যবসায়ীর কথায় একজনকে বড় পদে নিয়েছিলাম। ধ্বংস করে দিয়ে গেল। নিজেরা এখন ভাল সাজছে।

আমি: আপনি তো পুলিসের কথায় আমাকেই গালমন্দ দিচ্ছেন। ৫০ লক্ষ ঋণ দিলাম। সেদিন কত ভাল ভাল কথা। এখন যাতা বললেন কেন?

সুদীপ্ত: (অপ্রস্তুত) না, ওটা বলতে চাই নি। বললাম, আমিও ওটা তোমায় পাওয়ার ব্যবস্থা করে দেব। তুমি তো বিপদে কোম্পানিকেই দিয়েছিলে।

আমি: আপনার কথা এক এক সময় এক এক রকম লাগছে। এটা আমার পাওনা ছিল না। আপনি কারুর কথায় চলছেন।

সুদীপ্ত: (দরজার বাইরে উদাস চোখে তাকিয়ে সিগারেট ধরালেন)।

আমি: সত্যি অত টাকা দিয়ে ছবি কিনেছিলেন?

সুদীপ্ত: অতটা না। টুম্পাই বলেছিল দিতে, দিয়েছি। নগদে। ওরা সব জানেন তো। তবে ছবিটা পেয়েছিলাম কিনা, মনে নেই।

(বানান অপরিবর্তিত)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE