Advertisement
E-Paper

বলা বারণ! ডেঙ্গি-তথ্য কেন্দ্রকে দেয়নি রাজ্য

গত বছর সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে এনভিবিডিপি-র কাছে ডেঙ্গি-তথ্য পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছিল রাজ্য। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে শেষ পর্যন্ত সে তথ্য প্রকাশ করতে বাধ্য হয় তারা। পরে তার ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের কাছে ডিসেম্বর পর্যন্ত তথ্য পাঠায়। সেই রিপোর্ট অনুয়ায়ী, ওই বছর রাজ্যে ৩৭ হাজার ৭৪৬ জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হন। মারা যান ৪৬ জন। তবে যাঁরা বেসরকারি হাসপাতালে মারা গিয়েছেন, তাঁদের তথ্য তালিকায় ছিল না বলে স্বাস্থ্যভবন সূত্রের খবর।

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০১৮ ০৪:৪৩

গত বছরের পুনরাবৃত্তি এ বারেও! কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের কাছে পতঙ্গবাহিত রোগের হিসেব দিচ্ছে না পশ্চিমবঙ্গ।

চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত একমাত্র পশ্চিমবঙ্গই কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের অধীন পতঙ্গবাহিত রোগ প্রতিরোধ বিভাগের (এনভিবিডিপি) কাছে রাজ্যে সংক্রামক রোগের পরিসংখ্যান পাঠায়নি। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ পরিসংখ্যান না পাঠানোয় বছরের প্রথম ছ’মাসে দেশের কোথায় সংক্রামক রোগের কতটা প্রভাব পড়েছে, তার পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট তৈরি করা যাচ্ছে না। রাজ্যকে দেওয়া সাহায্যের পরিমাণও স্থির করা যাচ্ছে না।’’ পতঙ্গবাহিত রোগ প্রতিরোধ কর্মসূচিতে মশা নিধনের কীটনাশক সরবরাহ করে কেন্দ্র। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের কর্তা বলেন, ‘‘আমাদের কাছে রিপোর্ট না পাঠিয়ে নিজেদেরই ক্ষতি করছে পশ্চিমবঙ্গ।’’

গত বছর সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে এনভিবিডিপি-র কাছে ডেঙ্গি-তথ্য পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছিল রাজ্য। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে শেষ পর্যন্ত সে তথ্য প্রকাশ করতে বাধ্য হয় তারা। পরে তার ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের কাছে ডিসেম্বর পর্যন্ত তথ্য পাঠায়। সেই রিপোর্ট অনুয়ায়ী, ওই বছর রাজ্যে ৩৭ হাজার ৭৪৬ জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হন। মারা যান ৪৬ জন। তবে যাঁরা বেসরকারি হাসপাতালে মারা গিয়েছেন, তাঁদের তথ্য তালিকায় ছিল না বলে স্বাস্থ্যভবন সূত্রের খবর।

স্বাস্থ্যভবনের কর্তাদের দাবি, ডেঙ্গি মোকাবিলার পরিকল্পনায় এ বছর বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে তথ্য সংগ্রহে। রাজ্য সরকারের তরফে তৈরি করা নতুন সফটওয়্যার ব্যবহার করে জানুয়ারি থেকেই তথ্য সংগ্রহ হচ্ছে। কোন পুর-এলাকায় কতজন জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন, রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী সেই তথ্য ‘আপডেট’ করা হচ্ছে। এবং জ্বর-আক্রান্ত এলাকায় ‘রেড অ্যালার্ট’ দেখাচ্ছে। স্বাস্থ্য, পঞ্চায়েত, পূর্ত, নগরোন্নয়ন দফতরের যে সব বিভাগকে ডেঙ্গি মোকাবিলায় সমন্বয় রাখতে হয়, তাদের কাজের সুবিধার জন্য তথ্য সংগ্রহে বা়ড়তি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ওই তথ্য দেখার অধিকারও তাই সংশ্লিষ্ট দফতরের শীর্ষকর্তাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।

কিন্তু তথ্য তৈরি থাকলে তা কেন্দ্রীয় মন্ত্রকে পাঠানো হচ্ছে না কেন? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্যভবনের এক শীর্ষকর্তার কথায়, ‘‘কেন্দ্রকে তথ্য পাঠানোর দায়িত্ব রাজ্যের নয়। কেন্দ্রের একাধিক সংস্থা রাজ্যে কাজ করেছে। রাজ্যের ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে কেন্দ্র উদ্বিগ্ন হলে তাদের তথ্য সংগ্রহের কাজে লাগাতে পারে। তাহলে রাজ্যের উপর নির্ভর করতে হবে না।’’

রাজ্যের এই যুক্তি ‘তথ্য গোপনের কৌশল’ বলেই দাবি কেন্দ্রের। তাদের যুক্তি, স্বাস্থ্য কেন্দ্র-রাজ্য যৌথ তালিকার বিষয়। রাজ্য স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়ে কাজ করলেও কেন্দ্রের নজরদারির সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে। তা ছাড়া, গত তিন বছর ধরে ডেঙ্গি-পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে কেন্দ্রের নজরদারি থাকার যৌক্তিকতা রয়েছে বলেই তাদের দাবি।

ডেঙ্গি-তথ্যে বাড়তি গোপনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে স্বাস্থ্য দফতরের অন্দরেও। স্বাস্থ্য কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, ডেঙ্গি জনস্বাস্থ্যের বিষয়। তাই রাজ্যের কোন অঞ্চলে প্রাদুর্ভাব বেশি, সেই তথ্য সকলের জানা জরুরি। রাজ্য সরকার জন সচেতনতা বাড়াতে একাধিক বিষয় সংশ্লিষ্ট দফতরের ওয়েবসাইটে দেয়। তাহলে ডেঙ্গিপ্রবণ এলাকার পরিস্থিতি কেন ওয়েবসাইটে থাকবে না! সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দারা সেই তথ্য জানতে পারলে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে পারেন। রাজ্যের এক জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের মন্তব্য, ‘‘রাজ্যের মনোভাব কালিদাসের মতোই। নিজেদের ক্ষতি জেনেও তথ্য গোপন করছে।’’

Dengue Information NVBDP State Government Central Government
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy