Advertisement
০৪ মে ২০২৪
Amitav Ghosh

সুন্দরবন, জোশীমঠ নিয়ে হতাশ অমিতাভ

লেখার প্রতিধ্বনি করেই অমিতাভ বলতে চেয়েছেন, পৃথিবীর সম্পদই এখন তার শত্রু! প্রকৃতিকে ভোগ, লুটের ময়দান হিসেবে দেখা লোভী ঔপনিবেশিক মানসিকতাই এখন সবার মধ্যে ছেয়ে গিয়েছে।

‘কলকাতা লিটারারি মিট’-এ অমিতাভ ঘোষ। বুধবার। নিজস্ব চিত্র

‘কলকাতা লিটারারি মিট’-এ অমিতাভ ঘোষ। বুধবার। নিজস্ব চিত্র

ঋজু বসু
শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০২৩ ০৭:৪৪
Share: Save:

পরিবেশরক্ষার ভেক বা গ্রিনওয়াশিংয়ে বীতশ্রদ্ধ তিনি। বুধবার কলকাতা লিটারারি মিটের আসরে সাহিত্যিক অমিতাভ ঘোষ তাই বার বার সুন্দরবন বা জোশীমঠের হাল নিয়ে সরব হয়েছেন।

তাঁর কথায়, “জোশীমঠে হলটা কী? তীর্থযাত্রী বাড়াতে গিয়ে তো তীর্থস্থানটাই নষ্ট করা হচ্ছে! তীর্থযাত্রার ক্লেশ না থাকলে আর কীসের তীর্থযাত্রা। ছোটবেলায় দেখেছি, কী কষ্ট করে বুড়োবুড়িরা হামাগুড়ি দিয়ে কেদার-বদ্রীর পথে চলেছেন। মানুষের নানা কাজে বিপর্যয়ের মাত্রা বেড়েই চলেছে।” সুন্দরবন দেখা তাঁর জীবন পাল্টে দিয়েছিল বলে জানিয়ে ‘দ্য হাংরি টাইড’-এর লেখক বলছিলেন, ‘‘২৩ বছর আগেও চোখে পড়েছে, সুন্দরবনে জলস্তর উঁচু হচ্ছে, নোনা জল ঢুকছে! কিন্তু এখন বন্যপ্রাণীই প্রায় উধাও! আগে কত রকমের শিকারি পাখি দেখা যেত। এখন ক’টা শঙ্খচিল ছাড়া কিচ্ছু নেই! আরে শঙ্খচিল তো দিল্লিতেও দেখা যায়! ওই নিয়ে সিনেমা অস্কারেও গিয়েছে।’’ অমিতাভের গভীর আক্ষেপ, ‘‘সব থেকে বড় কথা সুন্দরবনের বিখ্যাত নৈঃশব্দ্য হারিয়ে গেছে। কী বিকট আওয়াজ রে বাবা! শ’খানেক টুরিস্ট বোট চলছেই! সারা ক্ষণ লাউডস্পিকার বাজছে! এ তো পুরোপুরি ডিসটোপিয়া (দুঃস্বপ্ন জগত)!”

অতিমারি পর্বে লেখা ও প্রকাশিত তাঁর তিনটি বই দ্য নাটমেগস কার্স, জাঙ্গল নামা এবং দ্য লিভিং মাউন্টেন—এর মধ্যে পাহাড়, নদী, জঙ্গলের বয়ানে এক ধরনের ইতিহাস চেতনা ও নৈতিক মূল্যবোধ চারিয়ে দিতে চেয়েছেন অমিতাভ। সেই প্রেক্ষাপটে ‘প্যানডেমিক, প্যারাবেল অ্যান্ড প্রফেসি’ শীর্ষক আলোচনায় এ দিন লেখকের সঙ্গী ছিলেন কলকাতার মেয়ে, নৃতত্ত্ববিদ, অধ্যাপক অণু জালে। সুন্দরবন চর্চার সুবাদেই অমিতাভের দীর্ঘ দিনের সুহৃদ তিনি। নিজের লেখার প্রতিধ্বনি করেই অমিতাভ বলতে চেয়েছেন, পৃথিবীর সম্পদই এখন তার শত্রু! প্রকৃতিকে ভোগ, লুটের ময়দান হিসেবে দেখা লোভী ঔপনিবেশিক মানসিকতাই এখন সবার মধ্যে ছেয়ে গিয়েছে। অমিতাভের কথায়, “খনির লোভে ওড়িশা বা মধ্য ভারতের জঙ্গল যাঁরা ধ্বস্ত করছেন, তাঁরা অনেকেই কঠোর নিরামিষাশী। তাঁদের ধর্ম, সংস্কৃতি প্রতি পদে বলেছে এটা অন্যায়। কিন্তু সম্পূর্ণ বাস্তুতন্ত্র ধ্বংস করতেও ওঁদের বিবেক দংশন নেই।”

নিজেকে এক ধরনের অ্যানিমিস্ট বা প্রকৃতিবাদী বলা অমিতাভের মতে, ইংরেজির ‘নেচার’ শব্দটি নিষিদ্ধ হওয়া উচিত। কারণ তা প্রকৃতি, পশুপাখি, পরিবেশকে মানুষের থেকে বিচ্ছিন্ন সত্ত্বা হিসেবে দেখে। অপ্রচলিত শক্তির ব্যবহার, পরিবেশবন্ধু যানবাহন ও জলের পরিমিত ব্যবহার নিয়ে রাষ্ট্রনীতির পক্ষেও অমিতাভ এ দিন সওয়াল করেছেন।

তাঁর সাম্প্রতিক বইয়ে প্রাচীন লোকবিশ্বাসের প্রজ্ঞায় জোর দিয়েছেন অমিতাভ। তবে অতিমারি-উত্তর পৃথিবীতে একই সঙ্গে কুসংস্কার, বুজরুকির বিপদও প্রবল। এ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে অমিতাভ বলেন, “মনে রাখতে হবে, অন্য জ্ঞানতত্ত্বের মতো বিজ্ঞানেরও ভুল হয়। তবে গোমূত্র, গোবরে আমি অবশ্যই বিশ্বাস করি না। ব্যক্তি হিসেবে আমরা শুধু গোলমেলে প্রশ্ন করে যেতে পারি!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Amitav Ghosh Joshimath Disaster Sundarbans
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE