মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। — ফাইল চিত্র।
মমতা জানালেন, এখনও পর্যন্ত ২৭ জনের মৃত্যুর হিসাব পাওয়া গিয়েছে। তার মধ্যে পাঁচ-ছ’জন শিশু। নিহতদের মধ্যে ১৮ জন মারা গিয়েছেন মিরিক-কালিম্পঙে। নাগরাকাটায় আরও পাঁচ জনের দেহ মিলেছে। নেপাল ও ভুটানের দুই নাগরিকের দেহও মিলেছে। সকলের দেহ এখনও শনাক্ত করা যায়নি।
বুধবার দুপুরে কলকাতার উদ্দেশে রওনা দেবেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রথমে যাবেন নবান্নে। তার পর খড়্গপুরে যাবেন। এর মাঝে নিহতদের পরিজনদের চাকরি দেওয়া-সহ সরকারি কাজগুলি এগোবে। তার পর আগামী সপ্তাহের সোমবার ফের উত্তরবঙ্গে যেতে পারেন মমতা।
মমতা বলেন, ‘‘প্রাথমিক পর্যায়ে যা যা করার করে গেলাম, প্রশাসনিক কর্তারা বাকি কাজ করবেনই। কাল এখান থেকে বেরিয়ে গেলেও দু’তিন দিনের মধ্যে আবার ফিরে আসব। তত দিনে ফিল্ড সার্ভে করে ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত খতিয়ান জানার সময়ও পাওয়া যাবে।’’
শুকনো খাবার, জামাকাপড়, রান্নার গ্যাস থেকে শুরু করে যাবতীয় ত্রাণসমেত কিট বিলি করা শুরু হবে। এ ছাড়া, মিরিক, নাগরাকাটা-সহ নানা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় কমিউনিটি কিচেন চালানো হচ্ছে। যত দিন দুর্গতেরা নিজেদের ঘরে ফিরতে না পারছেন, তত দিন কমিউনিটি কিচেন চালানো হবে।
কয়েক কোটি টাকার বিদ্যুতের খুঁটি জলের তলায় চলে গিয়েছে। সে সংক্রান্ত কাজও চলছে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। শর্টসার্কিট হয়ে কিংবা জমা জলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার মতো দুর্ঘটনা এড়াতে যাবতীয় সতর্কতা মেনে কাজ করা হচ্ছে। মমতা বলেন, ‘‘এখানে ১২ ঘণ্টায় ৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। তার মধ্যে ৫৬টা নদীর জল ছাড়া হয়েছে। সিকিমে ১৪টা হাইডেলপাওয়ার। ওগুলোর জন্য জল বইতে পারছে না। গরমে তিস্তার এক রূপ, বর্যায় আর এক রূপ। প্রকৃতিকে অত্যাচার করলে তার ফল ভুগতে হবেই। ফ্লরিডাতেও হাজার হাজার লোক তলিয়ে গেছে। পাহাড়ে ভূমিকম্প বেশি হয়। এখানে পাহাড়-জঙ্গল দুটোই রয়েছে। বনেরও অনেক ক্ষতি হয়েছে।’’
মমতা: ‘‘দুর্যোগের রাতেই সতর্ক করে দিয়েছিল প্রশাসন। তাই আরও বড় দুর্ঘটনা এড়ানো গিয়েছে। আমরা ঘটনা ঘটার পর পরই চলে এসেছিলাম। উদ্ধারের জন্য ২৪ ঘণ্টা সময় দেওয়া হয়েছিল। না হলে উদ্ধারকাজে কম গুরুত্ব দিয়ে আমাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ত জেলা প্রশাসন। সে রকম হলে যারা বেঁচে ফিরে এসেছেন, তাঁদের আরও অনেকে মারা যেতে পারতেন।’’
মমতা বলেন, ‘‘মানুষ মারা যাচ্ছেন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে, অথচ বলা হচ্ছে সেতু ভেঙে মৃত্যু হয়েছে। অন্য রাজ্যেও তো সেতু ভাঙছে। মহারাষ্ট্র থেকে শুরু করে দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ হিমাচল, উত্তরাখণ্ড— সর্বত্র এত দুর্যোগ হচ্ছে। দেখে নিন কারা কী কাজ করে আর আমরা কী কাজ করি। মহাকুম্ভেও তো বিপর্যয় হয়েছিল। আমরা তো তা নিয়ে রাজনীতি করিনি। গতকাল থেকে নাগরাকাটা ব্রিজের কাজ শুরু করে দিয়েছে পূর্ত দফতর। আমাদের কেন্দ্র এক টাকাও দেয়নি। গত বাজেটেও আপনারা দেখেছেন একমাত্র বাংলাকে টাকা দেওয়া হয়নি।’’
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘‘মানুষ যখন অসহায়তায় ভোগেন, তখন মাথা ঠান্ডা রেখে পরিস্থিতি বিচার করতে হয়। তাই আমরা যতটা পেরেছি মানুষের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছি। তাঁদের হাতে সামান্য অর্থসাহায্য তুলে দিয়েছি। ১৫ দিনের মধ্যে চাকরিও দেওয়া হবে তাঁদের।’’
মমতা: ‘‘প্রচুর বাড়ি, রাস্তা ভেঙেছে। অনেক জায়গায় সেতুও ভেঙেছে। জল একটু নামলে ফিল্ড স্টাডি শুরু হবে। আর ওই দিন যদি আসতাম, আমাদের মতো ভিআইপিদের দেখতে গিয়ে জেলা প্রশাসন ব্যস্ত হয়ে পড়ত। কোনটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ? দুর্গতদের উদ্ধার করা, তাদের পাশে দাঁড়ানো, তাদের ত্রাণ দেওয়া? না কি শুধু ভিআইপিদের দেখাশোনা করা? ভিভিআইপিরা কেউ কেউ ৩০-৪০টি গাড়ির কনভয় নিয়ে যাতায়াত করছেন। এত গাড়ির চাপে গ্রামীণ রাস্তা ভেঙে যাচ্ছে। আমাদের কড়া নির্দেশ দেওয়া আছে, কেউ গেলে তিনটির বেশি গাড়ি ব্যবহার করতে পারবেন না।’’
মমতা বলেন, ‘‘কেউ কেউ রাজনীতি শুরু করে দিয়েছেন তখন বাংলায় কেন কার্নিভাল হল? আরে কার্নিভাল তো বাংলার গর্ব! বাংলার ক্লাবগুলো অপেক্ষা করে থাকে এর জন্য, তার কি কোনও মূল্য নেই? কোনও দুর্যোগের পর কাজ শুরু করতে ন্যূনতম সময় লাগে। সে দিন যদি আসতামও, এসে কী করতাম?’’
উল্লেখ্য, উত্তরে দুর্যোগ চলাকালীন রবিবার কলকাতায় কার্নিভাল নিয়ে কটাক্ষের মুখে পড়তে হয়েছে মমতাকে। শনিবার বিকেল থেকে রবিবার সকাল পর্যন্ত ভয়াবহ বৃষ্টির জেরে দার্জিলিং-সহ উত্তরবঙ্গে বিপর্যয়ের পরেও মুখ্যমন্ত্রী কেন রবিবারই দার্জিলিং রওনা হলেন না, কেন বিসর্জনের কার্নিভালে যোগ দিতে কলকাতায় রয়ে গেলেন, রবিবারই তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। একই সুরে মমতাকে আক্রমণ করেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য-সহ অন্য নেতারা।
মমতা বলেন, ‘‘৪ তারিখ ভোর ৫টায় ডিজি এবং মুখ্যসচিবের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলাম। স্থানীয় স্বাস্থ্য ও জেলা আধিকারিকেরা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখছিলেন। একটা দুর্যোগ ঘটে গেলে উদ্ধারকাজ শুরুর জন্য অন্তত ৪৮ ঘণ্টা সময় দিতে হয়।’’ দুর্যোগ শুরুর দিন সকালেই উত্তরের জেলাগুলির প্রশাসনিক আধিকারিকদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক সারেন মমতা। প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেন তখনই।
বিকেল ৪টে নাগাদ উত্তরকন্যা থেকে সাংবাদিক বৈঠক শুরু করলেন মমতা।
দুপুরেই জখম বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মুকে দেখতে হাসপাতালে যান মুখ্যমন্ত্রী। শিলিগুড়ির হাসপাতালে মালদহ উত্তরের সাংসদকে দেখার পর তাঁর সঙ্গে কিছু ক্ষণ কথা হয় মমতার। কথা হয় সাংসদের স্ত্রী ও সন্তানের সঙ্গেও। মুখ্যমন্ত্রীর সৌজন্যে খুশি খগেনের পরিবার। তাঁরা জানিয়েছেন, কোথায় আঘাত পেয়েছেন সাংসদ, তার খোঁজ নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
যাঁদের ঘরবাড়ি নষ্ট হয়ে গিয়েছে, তাঁদের নামের তালিকা তৈরি করার জন্য দার্জিলিঙের জেলাশাসককে নির্দেশ দিয়েছেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, যত দিন দুর্গতেরা নিজেদের ঘরে ফিরতে না পারছেন, তত দিন কমিউনিটি কিচেন চালানো হবে। যাঁদের নথিপত্র নষ্ট হয়ে গিয়েছে, তাঁদের জন্য বিশেষ ক্যাম্প চালু করা হবে। আধার কার্ড, প্যান কার্ড, রেশন কার্ড, ছোটদের স্কুলের বইপত্র-সহ সমস্ত প্রয়োজনীয় জিনিসের ব্যবস্থা করা হবে সেই ক্যাম্পে।
সকালেই মমতা জানিয়েছেন, মিরিকের দুধিয়ায় ১৫ দিনের মধ্যে সেতু তৈরি করে দেওয়া হবে। মুখ্যমন্ত্রী জানান, প্রথমে আধিকারিকেরা জানিয়েছিলেন এক মাস সময় লাগবে সেতুটি তৈরি করতে। কিন্তু পরে বৈঠক করে স্থির করা হয়েছে যে ১৫ দিনের মধ্যেই সেতু তৈরির কাজ সেরে ফেলা হবে।
দুর্যোগ পরবর্তী পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে সোমবারই উত্তরবঙ্গে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার মিরিকের পরিস্থিতি পরিদর্শনে যান তিনি। সেখান থেকে দুর্গতদের সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার দুপুর দেড়টা নাগাদ মিরিকের দুধিয়ায় পৌঁছোন মমতা। সেখানে স্বজনহারা কিছু পরিবারের সঙ্গে দেখা করে এক মাসের মধ্যে পরিবারের এক জনকে স্পেশ্যাল হোমগার্ডের চাকরি দেওয়া হবে বলে জানান তিনি। তা ছাড়া, উত্তরের পাঁচ জেলায় দুর্যোগের কারণে যে সব কৃষকের চাষের জমির ক্ষতি হয়েছে, তাঁদেরও পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দেন মমতা। রাজ্যের কৃষি দফতর শস্যবিমার আওতায় কৃষকদের সুবিধা দেবে বলে জানান তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy