Advertisement
E-Paper

৪৫ বছর এই দেশে, ভোট দেন! চন্দননগরে ধৃত ‘পাকিস্তানি’ বৃদ্ধার পাশেই প্রতিবেশীরা, ফতেমা এখন জেল হেফাজতে

অবৈধ ভাবে ভারতে বসবাসের অভিযোগে শনিবার সকালে চন্দননগরের ১২ নম্বর ওয়ার্ড থেকে এক ফতেমাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বৃদ্ধার স্বামী এবং দুই মেয়ে রয়েছেন। বিয়ের হয়ে গিয়েছে দুই মেয়ের।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০২৫ ১৫:২৮
প্রশ্ন উঠছে, পাকিস্তানের নাগরিক ফতেমা বিবির নাম ভারতের ভোটার তালিকায় উঠল কী ভাবে?

প্রশ্ন উঠছে, পাকিস্তানের নাগরিক ফতেমা বিবির নাম ভারতের ভোটার তালিকায় উঠল কী ভাবে? গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

আদতে পাকিস্তানের নাগরিক। কিন্তু ভারতের ভোটার তালিকায় তাঁর নাম রয়েছে। দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে এ দেশেই রয়েছেন চন্দননগরের ফতেমা বিবি। পাক নাগরিক হয়েও কী ভাবে এত বছর ধরে তাঁর নাম ভোটার তালিকায় থেকে গেল, কেন কারও চোখে পড়ল না, সেই প্রশ্নই উঠছে এখন। কিন্তু গোটা বিতর্কে ফতেমার পাশেই দাঁড়িয়েছেন স্থানীয়েরা। তাঁদের বক্তব্য, বিষয়টি মানবিক ভাবেই দেখা উচিত প্রশাসনের।

অবৈধ ভাবে ভারতে বসবাসের অভিযোগে শনিবার সকালে চন্দননগরের ১২ নম্বর ওয়ার্ড থেকে ফতেমাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বৃদ্ধার স্বামী এবং দুই মেয়ে রয়েছেন। বিয়ে হয়ে গিয়েছে দুই মেয়ের। শনিবার ফতেমাকে চন্দননগর আদালতে হাজির করানো হয়েছিল। আদালত ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে।

ফতেমার গ্রেফতারিতে বিস্মিত প্রতিবেশীরা। তাঁদের অনেকেরই বক্তব্য, বৃদ্ধা যে পাকিস্তানি, সেটা তাঁরা জানতেন না। আইনি জটিলতা কাটিয়ে সকলেই অবশ্য ফতেমার মুক্তি চান। এক প্রতিবেশী বলেন, ‘‘৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এ দেশে রয়েছেন বৃদ্ধা। এখানেই উনি ভোট দেন। আইন মেনেই বিয়ে হয়েছিল ওঁর। এই মহিলাকে এখন পাকিস্তানে ফেরত পাঠালে কার কাছে যাবেন উনি? ওঁর তো পাকিস্তানে কেউ নেই।’’

পহেলগাঁও কাণ্ডের পর পাক নাগরিকদের ঘরে ফেরানোর নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র। এর পরেই নড়েচড়ে বসে সব রাজ্যের প্রশাসন। চন্দননগর কমিশনারেটের গোয়েন্দা বিভাগ বছর ষাটের ফতেমার খোঁজ করা শুরু করে। শনিবার তাঁর গ্রেফতারির পর জানা যায়, ১৯৮০ সালে টুরিস্ট ভিসা নিয়ে বাবার সঙ্গে ভারতে এসেছিলেন ফতেমা। ১৯৮২ সালে মুজফ্‌ফর মল্লিক নামে চন্দননগরের এক বেকারি মালিকের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। পরিবার সূত্রে দাবি, ফতেমার জন্ম ভারতেই। হুগলির নালিকুলে তাঁর পূর্বপুরুষের বাড়ি। এক সময়ে তাঁর বাবা মেয়েকে নিয়ে কর্মসূত্রে পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডি চলে যান। অনুমান, সেখানে গিয়ে তাঁরা পাক নাগরিকত্ব নিয়েছিলেন। পরে ভিসা নিয়ে এ দেশে এসে আর ফিরে যাননি ফতেমা। এখানেই থেকে গিয়েছেন। বিয়ে করেছেন। সংসার পেতেছেন। স্বামী বলেন, ‘‘ফতেমা অসুস্থ। হাঁটুতে অস্ত্রোপচার করতে হবে। ওষুধ ছাড়া এক মুহূর্ত চলে না। এই অবস্থায় কী করে জেলে থাকবে ও?’’

পাড়াপড়শিরা ফতেমার পাশে দাঁড়ালেও, ভোটার তালিকায় তাঁর নাম থাকা নিয়ে রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে। চন্দননগর পুরসভার ডেপুটি মেয়র মুন্না আগরওয়াল বলেন, ‘‘৪৫ বছর আগে এই বিষয়টি খোঁজখবর করা উচিত ছিল। ১৯৮০ সালে আমাদের সরকার ছিল না। যাদের সরকার ছিল, তারা বলতে পারবে কী ভাবে ভোটার লিস্টে নাম উঠল।’’ তবে ফতেমার বিষয়টি মানবিক দিক থেকে দেখা উচিত বলে মনে করেন ডেপুটি মেয়র। তিনি বলেন, ‘‘যে হেতু উনি ৪৫ বছর ধরে এখানে সংসার করছেন, তাই ট্রাইবুনালে মানবিক দিক থেকে এর মীমাংসা হওয়া উচিত। মহিলার কোনও অবৈধ কার্যকলাপ নেই। সেই দিক থেকে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিতে বিবেচনা করা হোক।’’

পাল্টা সিপিএমের চন্দননগর এরিয়া কমিটির সম্পাদক ঐকতান দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘আমাদের দেশে ১৯৮৫ সাল থেকে ২০২৫ সাল অবধি একাধিক বার সরকার বদল হয়েছে। এটা কোনও রাজ্যের বিষয় না। দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের একটা বড় গাফিলতি থেকে গিয়েছে, যা তারা অস্বীকার করতে পারে না। রাজ্যকে নোটিফিকেশন দিলে সেই অনুযায়ী রাজ্য কাজ করে। টুরিস্ট ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও কী ভাবে উনি এত বছর এখানে থেকে গেলেন, এর উত্তর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের দেওয়ার কথা। তবে বিষয়টি মানবিক দিক থেকে বিবেচনা করা উচিত।’’

অন্য দিকে, চন্দননগরের বিজেপি নেতা গোপাল চৌবে বলেন, ‘‘শুধু চন্দননগর নয়, আশপাশে উর্দিবাজার, চাঁপদানি, ভদ্রেশ্বর, বিলকুলিতে খুঁজলে অনেক পাক নাগরিক পাওয়া যাবে। এঁদের সব হয়ে যাচ্ছে এখানে। আধার, প্যান, রেশন কার্ড পেয়ে যাচ্ছেন ওঁরা। আমার আবেদন, এঁদের সকলকে চিহ্নিত করে বার করা দরকার। প্রশাসন এত দিন কি ঘুমোচ্ছিল?’’

Chandannagar Pakistani Woman arrested Pakistani arrested
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy