E-Paper

লতিফের বাড়ির দিকে এগোতেই সাবধানবাণী, ‘যাচ্ছেন যান, কাউকে কিছু জিজ্ঞাসা করবেন না’

সুখবাজারের রাস্তাঘাট খাঁ খাঁ করছে। লতিফের বাড়ির ঠিক পঞ্চাশ মিটারের মধ্যে কয়েক জনকে বসে থাকতে দেখা যায়। অচেনা মোটরবাইক এবং আরোহীদের মাথায় হেলমেট দেখে তাঁরাও সচকিত হয়ে ওঠেন।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০২৩ ০৭:৪৮
Raju Jha and Abdu latif

রাজু ঝা এবং আব্দুল লতিফ। ছবি: সংগৃহীত।

বোলপুর থেকে ইলামবাজার যাওয়ার রাস্তায় বাঁ দিকে পড়ে সুখবাজার। এই এলাকার দু’শো মিটারের মধ্যে রয়েছে আব্দুল লতিফের বাড়ি। গরু পাচারকারী সন্দেহে যাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায় সিবিআই। এলাকায় ঢোকার মুখে এক পথচারীর সঙ্গে দেখা। লতিফের খোঁজ করতেই তিনি বললেন, ‘‘যাচ্ছেন যান। কিন্তু কাউকে কিছু জিজ্ঞাসা করবেন না। পরিস্থিতি ভাল না।’’

সোমবার দুপুরে সুখবাজারের রাস্তাঘাট খাঁ খাঁ করছে। লতিফের বাড়ির ঠিক পঞ্চাশ মিটারের মধ্যে কয়েক জনকে বসে থাকতে দেখা যায়। অচেনা মোটরবাইক এবং আরোহীদের মাথায় হেলমেট দেখে তাঁরাও সচকিত হয়ে ওঠেন। কিছুটা যাওয়ার পরে লতিফের বিলাসবহুল বাড়ি। তার থেকে খানিক দূরে কয়েক জনকে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়। ছড়িয়েছিটিয়ে বসেও ছিলেন কয়েক জন। সেখানে দাঁড়িয়ে ক্যামেরা বার করতেই তাঁদের থেকে দু’-চার জন উঠে দাঁড়ান। ঠিক যেমনটা দেখা যায় বোলপুরের নিচুপট্টিতে অনুব্রত মণ্ডলের বাড়ির সামনে। দাঁড়ালেই মনে হয়, চার দিক থেকে কয়েক জোড়া চোখ যেন নজর রাখছে। সুখবাজারেও ঠিক তেমনটাই হল। তবে শেষ পর্যন্ত কেউ বাইক আটকে কিছুজিজ্ঞেস করেননি।

শনিবার এই সুখবাজারে গরুর হাট বসে। রাজ্যের অন্যতম বড় গরুর হাট এটি। সিবিআইয়ের দাবি, এই হাটেই পাচারের জন্য গরু কেনাবেচা হত। তদন্তকারীদের আরও দাবি, সেই কেনাবেচায় অনুব্রত তো বটেই, আব্দুল লতিফের জড়িত থাকারও যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। তদন্তকারীরা যে সব ব্যাঙ্ক নথি পেয়েছেন, তা থেকেই গরু পাচার সংক্রান্ত লেনদেনের সূত্রটি ধরার চেষ্টা করছেন। তবে এ দিন গরুর হাট বন্ধ ছিল। আগে হাট রোজই বসত। যদিও স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা গিয়েছে, কড়াকড়ি শুরু হওয়ার পর থেকে সপ্তাহে শুধু শনিবার বসে।

স্থানীয় ও সিবিআই সূত্রে দাবি, কোটির সম্পত্তি রয়েছে লতিফের। ইলামবাজার থেকে দুবরাজপুর যাওয়ার রাস্তায় একটি গাড়ির এবং বোলপুরের মহিদাপুর সংলগ্ন এলাকায় একটি মার্বেলের বিশাল শো-রুম রয়েছে। ওই মার্বেলের শো-রুম এ দিন খোলা ছিল। কিছু কর্মীকে কাজকর্ম করতেও দেখা যায়। এ ছাড়াও নামে-বেনামে লতিফের আরও অনেক সম্পত্তি আছে বলে অভিযোগ।

অথচ স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এক সময় সুখবাজার পশুহাট সংলগ্ন এলাকার একটি টেলিফোন বুথে কাজ করতেন এই লতিফ। পরে গরু নিয়ে হাটে আসা গাড়ি পরিষ্কার করার কাজ ও খড়ের ব্যবসা শুরু করেন। সেই থেকে গরু কেনাবেচার কাজে হাতেখড়ি। সিবিআইয়ের দাবি, আন্তর্জাতিক গরু পাচারের অন্যতম চক্রী এনামুল হক এবং পরে তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুবাদে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি লতিফকে। তবে, গরু পাচার মামলায় অনুব্রত গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই তাঁকে আর এলাকায় দেখা যায়নি। সিবিআইয়ের খাতায় তিনি ফেরার। মনে করা হয়েছিল, লতিফ বাংলাদেশে চলে গিয়েছেন। কিন্তু শনিবার রাজু ঝা হত্যাকাণ্ডের সময় থেকে ফের লতিফের ‘খোঁজ’ মিলেছে। তিনি সেখানে হাজির ছিলেন বলেই একাংশের দাবি। সূত্রের দাবি, ১৫-২০ দিন আগে তিনি ঘরে ফিরেছেন। যদিও শনিবারের পর থেকে তিনিফের বেপাত্তা।

যেখানে গরু পাচার মামলায় এনামুল হকের পরেই লতিফের নাম, সিবিআইয়ের চার্জশিটেও তাঁর নাম আছে, তাঁকে হন্যে হয়ে খুঁজছে সিবিআই, সেখানে লতিফ নিজের বাড়িতে ফিরে এলে সিবিআই কেন খবর পেল না, সেটাও বড় প্রশ্ন।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Raju Jha Crime Murder

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy