Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

মাছ-ভাত আর পোস্ত খেয়ে নজরবন্দি অনুব্রত বললেন, নকুলদানার জয়

কোথায় কমিশনের নজরদারির টিম! তাঁরা যখন ভগবৎ নিম্ন বুনিয়াদি বিদ্যালয়ে পৌঁছলেন, তার কয়েক মিনিট আগেই সেখানে ভোট দিতে ঢুকে গিয়েছেন অনুব্রত।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

প্রদীপ্তকান্তি ঘোষ
বোলপুর শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০১৯ ০১:৫১
Share: Save:

তিনি নজরবন্দি! খোদ নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে। রবিবারই বলেছিলেন, ‘‘তাতে আমার বয়ে গেল।’’ সোমবার ভোটের দিন আরও এক ধাপ এগিয়ে তাঁর সদর্প ঘোষণা, ‘‘আমিই জেলার কমিশনার।’’

ফলে তিনি কতটা নজরবন্দি, সেই প্রশ্ন ঘুরপাক খেল দিনভর। বোলপুর কালিকাপুরের নিচুপট্টিতে অনুব্রত মণ্ডলের বাড়ির দরজা থেকে কয়েক হাত দূরে ‘কুইক রেসপন্স টিম’-এর গাড়ি দাঁড়িয়েছিল। আর বাড়ি থেকে অনেকটা দূরে ছিল অনুব্রতের উপর নজরদারির নেতৃত্বে থাকা ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়ি। সকাল এগারোটা নাগাদ ভোট দিতে বেরোলেন তিনি।

কিন্তু কোথায় কমিশনের নজরদারির টিম! তাঁরা যখন ভগবৎ নিম্ন বুনিয়াদি বিদ্যালয়ে পৌঁছলেন, তার কয়েক মিনিট আগেই সেখানে ভোট দিতে ঢুকে গিয়েছেন অনুব্রত। তিনি যখন ভোট দিয়ে বেরোচ্ছেন, সেই সময় নজরদারি টিমকে দেখা গেল।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

অনুব্রত দিব্যি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলে বেরোলেন। সেখানে কমিশনের ভিডিয়োগ্রাফি কতটা কাজ করল, তা নিয়েও প্রশ্ন থেকে গেল। সেখান থেকে বাইকে চড়ে বোলপুর জেলা তৃণমূল কার্যালয়ে পৌঁছে গেলেন তিনি। সেখানেও অনেক পরে আসতে দেখা গেল নজরদারি টিমকে। দেরির কারণ হিসেবে সঙ্কীর্ণ পরিসরের রাস্তার কথাই বললেন দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার।

নজরবন্দির সিদ্ধান্ত জানার পরেই অনুব্রত বলেছিলেন, ‘‘জ্বর, সর্দি-কাশির ওষুধ আগেই দেওয়া হয়ে গিয়েছে।’’ তবে কি সারাদিন সেই সব ওষুধ কতটা প্রয়োগ হল, তা যাচাই করলেন? কার্যত সব্যসাচীর মতোই দু’হাতে ফোন সামলালেন তিনি। ল্যান্ডলাইনেও দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বললেন। এ দিন যেন ফোনের ব্যবহার আরও বেড়ে গিয়েছিল। অথচ নজরবন্দির সিদ্ধান্তের পরেই নিয়ম অনুযায়ী তাঁর নিজস্ব ফোন কমিশনের কাছে জমা দিতে হয়েছে। এ নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘ওই ফোন নিক। হাজার হাজার মানুষ। হাজার হাজার ফোন।’’ সেই ফোনেই কখনও বললেন, ‘‘হাত চালাও।’’ কখনও প্রশ্ন, ‘‘হাতের আঙুলে, না পায়ের আঙুলে দিচ্ছিস।’’ কখনও তাঁর নির্দেশ, ‘‘কাজ করো। কাজ আরম্ভ করো।’’ এ সব কথার সামান্য নড়চড় হলেই কর্মীদের ধমক দিয়েছেন তিনি। তার মাঝেই দুবরাজপুরে কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলি চালানোর খবর আসতেই বললেন, ‘‘গুলি, বোমা থাকবে না আগেই বলেছিলাম। কথা রাখলাম। আজ কেন্দ্রীয় বাহিনী চালিয়েছে। তবে বাহিনীর সকলেই খারাপ নয়।’’ এরই মাঝে দলের কাউকে ফোন করে বললেন, ‘‘বলে দিন, ওদের থেকে আমাদের গুলি বেশি আছে।’’

ফোন কানে ভোট সামলানোর মাঝেই মিনিট পাঁচেকে দুপুরের খাওয়া সেরে নিলেন অনুব্রত। খেলেন দু’টি রুটি, সামান্য ভাত, পোস্ত, চারা পোনার ঝোল, কাতলার টক।

তারপরেই ফের ফোনে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন তিনি। ভোট কেমন হচ্ছে, তা জানাতে একের পর এক ফোন বাড়িয়ে দিলেন কর্মী ও নিরাপত্তা রক্ষীরা। তাতেই পর পর বললেন, ‘‘নব্বইয়ের বেশি নয়।’’ এই কথার ব্যাখ্যা দিলেন জেলার নেতারা। তাঁদের মতে, তার বেশি হলে পুনর্নির্বাচন হতে পারে। এ সবের মাঝে নদিয়ায় দলীয় পর্যবেক্ষক অনুব্রত সেখানেও খোঁজ নিলেন। বললেন, ‘‘কৃষ্ণনগরে আমরাই জিতব।’’ আবার এ-ও জানালেন, বীরভূমে ৩,৮৬৫টি বুথের মধ্যে ৭০০-র বেশি বুথে বিরোধীরা এজেন্টই দিতে পারেননি। এই দাবির সঙ্গেই তাঁর কটাক্ষ, ‘‘আবার বেশি ভোটে জিতলে তো সামনের বার কেউ ভোটেই দাঁড়াবে না!’’

অনুব্রতর ঘরের খবর, রবিবার রাতে দেরি করেই ঘুমোতে গিয়েছিলেন তিনি। সোমবার সকালে ঘুমও ভেঙেছে কিছুটা দেরিতে। তবে এ দিন ভোট চলাকালীন ‘দিদি’র সঙ্গে একাধিকবার ফোনে কথা হয়েছে বলে তাঁর দাবি। ‘দিদি’র পরামর্শ ছিল, মাথা ঠান্ডা রাখার। মাথা ‘ঠান্ডা’ রেখেই এ দিন নির্বাচন শেষে বোলপুরে সাত লক্ষ এবং বীরভূমে পাঁচ লক্ষ ভোটে জেতারও দাবি করেছেন তিনি। এবং দিনের শেষে মুণ্ডিত মস্তকে হাত বোলাতে বোলাতে ‘স্বস্তির হাসি’ হেসে ভোটপর্ব ‘নির্বিঘ্নে’ মিটেছে বলে দাবি করেছেন বীরভূমের ‘কেষ্ট’। এ-ও বললেন, ‘‘জয় হয়েছে নকুলদানার।’’

তবুও খেদ রয়ে গেল! মেয়ে আর স্ত্রীকে এ দিন ভোট দিতে নিয়ে যেতে পারেননি অনুব্রত। তাঁর স্ত্রী নিউটাউনের একটি হাসপাতালে ভর্তি। সেখানেই মায়ের কাছে রয়েছেন মেয়ে। ভোটপর্বে কেষ্টর আক্ষেপ শুধু এটুকুই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE