সাংবাদিক সম্মেলনে। নিজস্ব চিত্র
ভোট যত এগিয়ে আসছে ততই পট পরিবর্তন হচ্ছে ঘন ঘন। বুধবারই দীর্ঘ বিরোধ মিটিয়ে ঝাড়খণ্ডী দুই দল এ বার ভোটে একসঙ্গে লড়ার কথা ঘোষণা করেছে। বৃহস্পতিবার ফাটল ধরল আদিবাসী সমন্বয় মঞ্চে। এ দিন ওই মঞ্চ থেকে বেরিয়ে এল মুন্ডা ও ভূমিজ সমাজ।
শুধু বেরিয়ে আসা নয়। আদিবাসী সমন্বয় মঞ্চের বিরুদ্ধে রাজনীতিকরণের অভিযোগ তুলে মুন্ডা ও ভূমিজ সমাজের নেতারা ঝাড়গ্রাম ও পুরুলিয়া-সহ জঙ্গলমহলের চারটি লোকসভা আসনে নির্দল প্রার্থী দেওয়ার কথা ঘোষণা করলেন। ঝাড়গ্রামের একটি অতিথিশালায় নেতারা আলোচনায় বসেন। পরে সাংবাদিক বৈঠক করে তাঁরা জানান, ঝাড়গ্রাম লোকসভা আসনে সমাজের নির্দল প্রার্থী হচ্ছেন মিত্তন সিংহ এবং পুরুলিয়ায় প্রাথী হচ্ছেন বর্জুরাম সিংহসর্দার। মিত্তন মেদিনীপুরের একটি হাইস্কুলের শিক্ষক। তাঁর বাড়ি ঝাড়গ্রাম লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত পুরুলিয়ার বান্দোয়ানে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী বর্জুরামের বাড়ি পুরুলিয়ার বলরাপুরে। ভূমিজ ও মুন্ডা সমাজের দুই নেতা লক্ষ্মীনারায়ণ সিংহসর্দার এবং বিজয় মুন্ডা জানালেন, মেদিনীপুর ও বাঁকুড়া লোকসভাতেও তাঁরা সমাজের প্রার্থী দেবেন। ওই দু’টি আসনের প্রার্থীদের নাম পরে ঘোষণা করা হবে।
গত পঞ্চায়েত ভোটে বিভিন্ন আদিবাসী জনগোষ্ঠীর নেতারা একযোগে ‘আদিবাসী সমন্বয় মঞ্চ’ গড়ে তুলেছিলেন। সাঁওতালদের সর্বোচ্চ সামাজিক সংগঠন মাঝি পারগানা মহলের একাংশ এই মঞ্চের সঙ্গে ছিলেন। যদিও পারগানা মহলের নেতৃত্ব পরে জানিয়ে দেন, ওই মঞ্চের সঙ্গে তাঁদের কোনও সম্পর্ক নেই। লোকসভা ভোটের দিন ঘোষণা হতেই আদিবাসী সমন্বয় মঞ্চের সভাপতি বাবলু মুর্মু ঝাড়গ্রামে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে জানিয়েছিলেন, বিজেপি বাদে আদিবাসী দরদী অন্য রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের সঙ্গে তাঁরা জোটে যেতে আগ্রহী। এমনকী পারগানা মহলের এক নেতাকে প্রার্থী করার সুপারিশ করেও তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে চিঠি দিয়েছিলেন বাবলু। সেই চিঠি সামাজিক মাধ্যমে ফাঁস হয়ে যায়। পারগানা মহলের ওই নেতাকে প্রার্থী করেনি তৃণমূল। কিন্তু ওই সামাজিক সংগঠনের অন্য এক নেতার স্ত্রীকে শাসক দল ঝাড়গ্রাম কেন্দ্রে প্রার্থী করায় তৈরি হয় বিতর্ক। প্রশ্ন ওঠে, সামাজিক সংগঠনে যুক্ত থাকার পরও কেন রাজনৈতিক দলের প্রার্থী হবেন ওই নেতার স্ত্রী। পারগানা মহলের অন্দরে বিভাজন দেখা যায়।
এ বার একই প্রশ্ন সামনে রেখে আদিবাসী সমন্বয় মঞ্চ থেকে বেরিয়ে এল মুণ্ডা ও ভূমিজ সমাজ। ভূমিজ ও মুণ্ডা সমাজের দুই নেতা লক্ষ্মীনারায়ণ সিংহসর্দার এবং বিজয় মুন্ডা এ দিন সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, ‘‘আদিবাসী সমন্বয় মঞ্চ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের হয়ে সাফাই গাইছে। এবং রাজনৈতিক দলকে সমর্থনের প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত দিয়েছে, তাতে আমরা বিরক্ত। তাই আমরা আদিবাসী সমন্বয় মঞ্চ থেকে বেরিয়ে এসেছি। আমরা সাঁওতাল ছাড়াও অন্যান্য আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে নিয়েও ভাবতে চাই। সেই কারণে ভোটে লড়ছি।’’ তাঁদের বক্তব্য, আদিবাসীদের মূল সমস্যা গুলি সম্পর্কে রাজনৈতিক দলগুলি উদাসীন। তাই তাঁরা কোনও রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করবেন না। আদিবাসী সমন্বয় মঞ্চের সভাপতি বাবলু মুর্মু বলেন, ‘‘মঞ্চ ছাড়ার কথা আমাকে কেউ জানাননি। আমার কাছে খবর নেই। মুষ্টিমেয় কেউ টাকাপয়সার বিনিময়ে এ কাজ করতে পারেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy