Advertisement
E-Paper

কাটাকুটির জটিল অঙ্ক কষে চলছেন সকলেই

রাজ্যে বামেদের হাতে থাকা দুই আসনের অন্যতম মুর্শিদাবাদের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বুঝতে এই মিছিলের ছবিই বোধ হয় যারপরনাই ইঙ্গিতবাহী। 

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৯ ০১:৫০
ছবি: এপি।

ছবি: এপি।

তপ্ত দুপুরে মিছিল চলেছে গাঁয়ের পথ ধরে! সার-সার টোটোয় লাল পতাকা বাঁধা। মাইকে স্লোগান, প্রচার চলছে। কিন্তু বামেদের ঝাঁঝ? চৈত্র শেষের রোদ যতটা ঝাঁঝালো, মিছিল ততটা নয়।

রাজ্যে বামেদের হাতে থাকা দুই আসনের অন্যতম মুর্শিদাবাদের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বুঝতে এই মিছিলের ছবিই বোধ হয় যারপরনাই ইঙ্গিতবাহী।

দক্ষিণবঙ্গের এই জেলায় গত বিধানসভা ভোট পর্যন্ত কার্যত দাঁত ফোটাতে পারেনি তৃণমূল। কংগ্রেস ও সিপিএমের দাপটই ছিল বেশি। কিন্তু গত এক বছরে পরিস্থিতি অনেক বদলেছে। সেই বদলের হাওয়া মালুম হচ্ছে ভোটের মুখে। জোট না-বাঁধলেও গড় বাঁচাতে কংগ্রেসের ‘হাত’ ধরার আশাতেই রয়েছেন বামেরা।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

রাজ্যে বাম-কংগ্রেস জোট হতে হতেও হয়নি। তবু আগেভাগেই জোট প্রার্থী হিসেবে বদরুদ্দোজার সমর্থনে দেওয়াল লেখা হয়েছিল মুর্শিদাবাদে। জোট না-হলেও দেওয়াল লিখনে ‘জোট প্রার্থী বদরুদ্দোজা খান’ রয়েই গিয়েছেন। বামেদের কথাতেও সেই ‘অলিখিত’ জোটের আভাস!

সাগরপাড়ায় মিছিল সেরে বিদায়ী বাম সাংসদ বদরুদ্দোজা বলছিলেন, ‘‘বহরমপুরে অধীরবাবুকে জেতাতে সিপিএম লড়বে। আমরা ওখানে প্রার্থী দিইনি।’’ কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে তো কংগ্রেস প্রার্থী দিয়েছে! বিদায়ী সাংসদ বলছেন, ‘‘কথা হয়েছিল এখানে জোট শর্ত মেনে এখানে কংগ্রেস প্রার্থী দেবে না। কিন্তু জোট না-গড়ে সোমেনবাবুরা আবু হেনাকে প্রার্থী করলেন। কী আর করা যাবে?’’

কিন্তু বামেদের অন্দরে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে, কংগ্রেসের একাংশের সঙ্গে সমঝোতার কথা। যে সমঝোতা অনেকটাই জটিল গাণিতিক সমীকরণ মাত্র! সেই সমীকরণ তৈরি হয়েছে গত দু’বছরে মুর্শিদাবাদে শক্তি বাড়ানো তৃণমূলকে রুখতে।

কেন্দ্র এক নজরে - মুর্শিদাবাদ

ভোটার
১৭ লক্ষ ২২ হাজার ৭৫২
• ২০১৪ সালের নির্বাচনে জয়ী সিপিএম প্রার্থী বদরুদ্দোজা খান। ব্যবধান ১৮ হাজার ৪৫৩
• ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এগিয়ে বাম ও কংগ্রেস জোট। ৫টি বিধানসভার ৩টি সিপিএম, ২টি কংগ্রেস এবং বাকি ২টিতে তৃণমূল জয়ী।

এই কেন্দ্রে এ বার তৃণমূলের প্রার্থী আবু তাহের খান। নওদার এই বিধায়ক বছর খানেক আগেও মুর্শিদাবাদে কংগ্রেসের কার্যত ‘শেষ কথা’ অধীর চৌধুরীর আস্থাভাজন বলেই পরিচিত ছিলেন। কিন্তু মাস ছয়েক আগে দল ছেড়ে এ বারে লোকসভা ভোটে রাজ্যের শাসক দলের প্রার্থী হয়েছেন তিনি। শোনা যায়, কংগ্রেসের ভোট মেশিনারির বেশ কিছুটা তাঁর সঙ্গেই দল বদলেছে। নতুন দলের হয়ে বড় ম্যাচ খেলতে নামার আগে তাই প্রস্তুতিতে খামতি রাখছেন না তাহের। সকাল থেকে রাত এলাকায় ঘুরছেন। গ্রামে-গ্রামে দেওয়ালে সাঁটানো পোস্টারে তাঁর নামের আগে লেখা, ‘‘মমতা ব্যানার্জি মনোনীত প্রার্থী’’। শুধু দলবদলই নয়, জনসভায় অধীরের বিরুদ্ধে রীতিমতো হুঙ্কারও ছাড়ছেন একদা তাঁর ‘আস্থাভাজন’ তাহের।

ভোটের অঙ্ক আবার বলছে, এই কেন্দ্রের বহু জায়গাতেই কংগ্রেসের পোক্ত ঘাঁটি রয়েছে। কিন্তু গত পঞ্চায়েত ভোটের পর থেকেই কংগ্রেসের ঘর ভেঙেছে। কংগ্রেসেরই একাংশের মতে, লোকসভা ভোটে প্রার্থী না-দিলে ভাঙা ঘরের ফাঁক গলে অন্তত দশ আনা ভোট ঘাসফুলের বাক্সে চলে যেতে পারত। তাই ভোট যাতে তৃণমূলে না-যায় সেই কারণেই লালগোলার বিধায়ক আবু হেনাকে প্রার্থী করা হয়েছে মুর্শিদাবাদে। যদিও এই সমীকরণকে প্রকাশ্যে মানছেন না জেলা কংগ্রেস নেতারা। বহরমপুরের বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘তাহেরকে এই লড়াইয়ে ধর্তব্যের মধ্যেই আনছি না।’’ অনেকেই বলছেন, মুর্শিদাবাদ লোকসভার মাঠ লালগোলার প্রবীণ বিধায়ক আবু হেনার কাছে অচেনা না-হলেও ‘অ্যাওয়ে ম্যাচ’ তো বটেই। প্রবাদপ্রতিম মন্ত্রী আব্দুস সাত্তারের ছেলে, ‘সজ্জন’ ভাবমূর্তির আবু হেনা সকাল থেকে গ্রামে-গ্রামে প্রচারে। লালবাগের কাছে এক গ্রামে হেনার মিছিল দেখছিলেন দোকানি। বললেন, ‘‘সাত্তার সাহেবের ছেলে তো! লড়াই কিন্তু হবে তৃণমূলের সঙ্গেই।’’ গত বছর লোকসভায় জেতা বামেরা তা হলে উধাও? একেবারে উধাও বললে সত্যের অপলাপ হয়। কিন্তু এ-ও সত্যি, ডোমকল, জলঙ্গি, লালবাগের বিভিন্ন গ্রামে কান পাতলে অনেকেই ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন সাংসদের বিরুদ্ধে। তাঁরা বলছেন, যতটা কাজ করার কথা ছিল, তার অনেকটাই হয়নি। অভিযোগ মেনে নিচ্ছেন বিদায়ী সাংসদও। তবে তিনি পাল্টা বলছেন, ‘‘আমার তহবিলের টাকা খরচের হিসেব দিতে জেলা প্রশাসন গড়িমসি করেছে। তা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দফতর পর্যন্ত দৌড়েছি। এই সব জটিলতাতেই অনেক টাকা খরচ করা যায়নি।’’

এবং এ সবের পাশেই রয়েছেন বিজেপি প্রার্থী হুমায়ুন কবীর। একদা কংগ্রেস থেকে তৃণমূল। ফের দল বদলে ফিরেছিলেন কংগ্রেস এবং সেখান থেকে অধুনা বিজেপিতে থিতু! নিজের ঠাঁই রেজিনগর (বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত) ছেড়ে মুর্শিদাবাদে লড়তে এসেছেন। কিন্তু এত বার দল বদলানোয় লোকে তো তাঁকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ বলছে! হুমায়ুন অবশ্য তা মানতে নারাজ। তাঁর দাবি, তিনি তৃণমূলের শত্রু। কিন্তু ঘাসফুলের সঙ্গে লড়াইয়ে তিনি ‘হাত’-এ জোর পাচ্ছিলেন না। তাই গেরুয়া শিবিরে নাম লেখানো! ভোটে নেমে ঘুরছেন-ফিরছেন, প্রচারে দাবি, ‘‘দারুণ সাড়া পাচ্ছি!’’ কিন্তু সে সাড়া কত জোরালো, তা হলফ করে বলতে পারছেন না তিনি। শোনা যাচ্ছে, প্রচারের ফাঁকে ফাঁকে ভোট কাটাকুটির হিসেবেই ব্যস্ত মুর্শিদাবাদের নেতারা। তবে ভোট তো নিছক অঙ্ক নয়। আরও নানা বিষয় জুড়ে থাকে তাতে। অতএব?

আপাতত হাতে শুধুই পেন্সিল!

লোকসভা ভোট ২০১৯ Lok Sabha Election 2019 Political Parties CPM TMC BJP
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy