Advertisement
০১ মে ২০২৪

বিধিভঙ্গের নোটিস গেল পিপি-র কাছে

প্রশাসন সূ্ত্রে জানা গিয়েছে,  মলয়বাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, নির্বাচনী আচরণ বিধি চালু হওয়ার পরে জেলার গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা সত্ত্বেও সম্প্রতি তিনি শাসকদলের সভায় উপস্থিত থেকেছেন।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
সিউড়ি শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৯ ০৩:০৪
Share: Save:

দলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের পরে এ বার নির্বাচনী আচরণ বিধিভঙ্গের অভিযোগে নোটিস গেল তৃণমূলের বীরভূম সহ-সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায়ের কাছে। তিনি একাধারে জেলা আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটরও (পিপি)।

প্রশাসন সূ্ত্রে জানা গিয়েছে, মলয়বাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, নির্বাচনী আচরণ বিধি চালু হওয়ার পরে জেলার গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা সত্ত্বেও সম্প্রতি তিনি শাসকদলের সভায় উপস্থিত থেকেছেন। এবং সেই সভায় অনুব্রত তাঁকে (মলয়বাবুকে) উদ্দেশ করে খুনে অভিযুক্ত এক তৃণমূল নেতার জামিন করানোর সুপারিশ করছেন। অভিযোগ পাওয়ার পরেই অ্যাসিস্ট্যান্ট রিটার্নিং অফিসার তথা মহকুমাশাসক (সিউড়ি সদর) রাজীব মণ্ডল পিপি-কে নোটিস পাঠিয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাঁর উত্তর চেয়েছেন। মহকুমাশাসক জানিয়েছেন, বিধিভঙ্গের একটি অভিযোগের প্রেক্ষিতেই জেলাশাসকের নির্দেশে ওই নোটিস পাঠানো হয়েছে। অন্য দিকে মলয়বাবু বলেছেন, ‘‘তিনটি প্রশ্ন সংবলিত একটি চিঠি কমিশনের তরফে পেয়েছি। তার উত্তরও দিয়েছি।’’

নির্বাচনী নির্ঘণ্ট ঘোষণা হওয়ার পরে গত সপ্তাহে নানুরে একটি সভায় অনুব্রত মণ্ডল বিরোধী রাজনৈতিক দলের উদ্দেশে ‘হুমকিমূলক’ বক্তব্য পেশ করেছেন— এই মর্মে একটি অভিযোগ আসার পরে সোমবারই জেলা নির্বাচনী আধিকারিক তথা জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু অনুব্রতকে একটি নোটিস পাঠিয়েছেন। এর পাশাপাশি অনুব্রতের বিরুদ্ধে তাঁর নকুলদানা দাওয়াই , পাঁচন তত্ত্ব নিয়ে অভিযোগ দায়ের করেছিল বিজেপি। মঙ্গলবার ফের কমিশনের তরফে আরও একটি নোটিস অনুব্রতকে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। অনুব্রত অবশ্য দাবি করেছেন, নির্বাচন কমিশনের তরফে তেমন কোনও চিঠি তিনি পাননি। পেলে পদক্ষেপ করবেন। বুধবার নোটিস গেল দলের সহ সভাপতির মলয়বাবুর কাছে।

গত রবিবার বীরভূম ও বোলপুর দুই লোকসভা আসনে দলীয় দুই প্রার্থী শতাব্দী রায় ও অসিত মালকে জেতাতে কী কৌশল হবে, সেটা নিয়ে আলোচনার জন্য সিউড়ির রবীন্দ্রসদনে বৈঠক ডেকেছিলেন অনুব্রত। অভিযোগ সেই সভায় ছিলেন পিপি মলয়বাবুও। খয়রাশোলের তৃণমূল ব্লক সভাপতি দীপক ঘোষ খুনে অন্যতম অভিযুক্ত দলেরই নেতা উজ্জ্বল হক কাদেরিকে জামিনে মুক্ত করানোর জন্য মলয়বাবুকে ওই সভায় অনুব্রত নির্দেশ দেন বলেও অভিযোগ ওঠে। একটি ছড়িয়ে পড়া ভিডিয়ো ফুটেজে জেলা তৃণমূল সভাপতিকে বলতে শোনা গিয়েছে, “মলয়, উজ্জ্বলের জামিন করিয়ে দাও।’’

এই ঘটনাকে ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়। তৃণমূলের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন বিরোধীরাও। তাঁদের বক্তব্য, পাবলিক প্রসিকিউটারকে কী ভাবে এমন নির্দেশ দিতে পারেন অনুব্রত? একই সঙ্গে প্রশ্ন ওঠে, দলের নেতা হলেও কেনই বা সরকারি আইনজীবীর মতো কেউ নির্বাচনী আচরণবিধি চালু হওয়ার পরে রাজনৈতিক মঞ্চে থাকবে? এতে সাধারণ মানুষ বিচার কী ভাবে পাবে?

এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের কাছে বিধিভঙ্গের অভিযোগও দায়ের হয়। অভিযোগ হয়েছে কলকাতা থেকে বিরোধী রাজনৈতিক দলের তরফে। তারপরই নোটিস গিয়েছে মলয়বাবুর কাছে। প্রশাসন সূত্রের খবর, মূলত তিনটি প্রশ্নের উত্তর চাওয়া হয়েছে। এক, তিনি সেদিন বৈঠকে ছিলেন কিনা। দুই, অনুব্রত মণ্ডল এই ধরণের কোনও নির্দেশ দিয়েছিলেন কিনা। তিন, এ ব্যাপারে আপনার বক্তব্য কী।

মলয়বাবু অবশ্য প্রথম থেকেই দাবি করেছেন, কোন মলয়কে অনুব্রত ওই কথা বলেছেন, তিনি জানেন না। চিঠি পাওয়ার পরে মলয়বাবু লিখিত ভাবে জানিয়েছেন, তিনি ওই বৈঠকে ছিলেনই না! তিনি বলেন, ‘‘যে মামলার (দীপক-খুন) কথা বলা হয়েছে, সেই মামলার অভিযুক্তপক্ষের বা সরকারি আইনজীবী আমি নই। অন্য এক জন সরকারি আইনজীবী হিসাবে রয়েছেন। তা ছাড়া, মামলাটি দুবরাজপুর কোর্টে বিচারাধীন। মামলা সিউড়ির উচ্চ আদালতে আসেনি। কাজেই ওই মামলায় আমার কোনও ভূমিকা নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

ELection Commission Lok Sabha Election 2019
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE