Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Lok Sabha Election 2019

রাজ্যের ভোটে আইএমএ-র প্রচার ঘিরে বিতর্ক সংগঠনে

রাজ্যের একাধিক চিকিৎসক সংগঠন এ ব্যাপারে প্রতিবাদ জানিয়ে দিল্লিতে আইএমএ সদর দফতরে চিঠি লিখেছে।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০১৯ ০১:৪৯
Share: Save:

দেশের সর্ববৃহৎ চিকিৎসক সংগঠন ‘ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন’ (আইএমএ) লোকসভা ভোটে যুক্ত হওয়ার ব্যাপারে নিজেদের অবস্থান বদলালেও সংগঠনের অধিকাংশ সদস্য এবং স্থানীয় শাখা সেই সম্পর্কে অন্ধকারে বলে অভিযোগ উঠেছে।

রাজ্যের একাধিক চিকিৎসক সংগঠন এ ব্যাপারে প্রতিবাদ জানিয়ে দিল্লিতে আইএমএ সদর দফতরে চিঠি লিখেছে। তারা জানিয়েছে, তাদের সংগঠনের প্রত্যেক সদস্য আইএমএ-র সঙ্গে জড়িত। আইএমএ-র নীতিতে কোনও পরিবর্তন হলে বা নতুন অবস্থান নেওয়া হলে তা চিঠি দিয়ে প্রত্যেককে জানানো এবং প্রত্যেকের মতামত নেওয়ার কথা। কিন্তু তা করা হয়নি বলে তাদের অভিযোগ।

সম্প্রতি রাজ্যে আইএমএ-র একাধিক আঞ্চলিক শাখা নিজেদের এলাকায় লোকসভা ভোটে দাঁড়ানো শাসক দলের প্রার্থীদের হয়ে সভার আয়োজন করেছিল। আইএমএ ভবনে সেই সব সভায় সংগঠনের ব্যানারে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীদের বিপুল ভোটে জেতানোর ডাক দেওয়া হয়েছে।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

সেই তালিকায় ব্যারাকপুরের প্রার্থী দীনেশ ত্রিবেদী, বহরমপুরে অপূর্ব সরকার, বর্ধমানের মমতাজ সঙ্ঘমিতার মতো অনেকে ছিলেন। আইএমএ-র সর্বভারতীয় সচিব আর ভি অশোকন বলেন, ‘‘আমাদের এত দিন অবস্থান ছিল, কোনও চিকিৎসক ভোটে প্রার্থী হলে আইএমএ তাঁর হয়ে প্রচার করত। কিন্তু সম্প্রতি তা একটু পরিবর্তিত হয়েছে। এখন ঠিক হয়েছে, চিকিৎসক ছাড়াও যে-সব প্রার্থী ‘স্বাস্থ্যবন্ধু’ হিসেবে পরিচিত, তাঁদের হয়ে আইএমএ প্রচার করতে পারে। তবে অবশ্যই এর জন্য সংশ্লিষ্ট শাখার সদস্যদের একমত হতে হবে।’’

এর প্রতিবাদ করে চিকিৎসকদের বাম মনোভাবাপন্ন সংগঠন ‘অ্যাসোসিয়েশন ফর হেলথ সার্ভিস ডক্টর্স’-এর সাধারণ সম্পাদক মানস গুমটা বলেন, ‘‘আইএমএ-র এই অবস্থানের কথা আমরা কেন জানলাম না? আমরা তো সকলেই তার সদস্য। চুপিচুপি কোনও নীতি বদলাতে পারে না।’’ তাঁর প্রশ্ন, কে স্বাস্থ্যবন্ধু, সেটা কী ভাবে ঠিক হচ্ছে? কে ঠিক করছেন? বামফ্রন্টের চিকিৎসক প্রার্থী রেজাউল করিম, ফুয়াদ হালিম বা রামচন্দ্র ডোম দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসার ও চিকিৎসা আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত। তাঁরা কি স্বাস্থ্যবন্ধু নন? তাঁদের হয়ে আইএমএ-র কোনও শাখা প্রচার করছে না কেন?

‘ওয়েস্টবেঙ্গল ডক্টর্স ফোরাম’-এর সচিব কৌশিক চাকীরও প্রশ্ন, ‘‘এমন সিদ্ধান্ত আমাদের, আইএমএ-র সদস্যদের জানানো হয়নি কেন? এ বার রাজ্যে সব দল মিলিয়ে ১৪ জন চিকিৎসক প্রার্থী রয়েছেন। কেন এই নতুন নীতি বেছে বেছে শাসক দলের প্রার্থীদের ক্ষেত্রে প্রয়োগ হচ্ছে। আর ‘স্বাস্থ্যবন্ধু’র সংজ্ঞা কী?’’ রাজ্যে বিজেপির চিকিৎসা সেলের প্রধান বিবেকানন্দ মজুমদার বলেন, ‘‘আইএমএ-র মাথায় এখন তৃণমূলের লোকজন বসেছে। ওরা নিজেদের মতো করে নিয়ম করছে। কাউকে কিছু জানাচ্ছে না। আমরা আইএমএ-র মুখাপেক্ষী না-হয়ে আমাদের চিকিৎসক সেলের তরফেই বিজেপির প্রার্থীদের হয়ে প্রচার চালাচ্ছি।’’

কেন সকলকে নীতি বদলের কথা জানানো হয়নি? স্বাস্থ্যবন্ধুর সংজ্ঞাই বা কী? অশোকন বলেন, ‘‘এই সব বিতর্কিত প্রশ্নের উত্তর দেব না।’’ রাজ্য আইএমএ-র সভাপতি নির্মল মাজি অবশ্য ব্যাখ্যা দেন, ‘‘চিকিৎসকদের জ্বলন্ত সব সমস্যায়, অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে যাঁরা তাঁদের পাশে ছিলেন, যাঁরা সুস্থ চিকিৎসানীতির জন্য লড়েছেন, তাঁরাই স্বাস্থ্যবন্ধু।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, কেন্দ্র যখন চিকিৎসক ও সাধারণ মানুষের স্বার্থবিরোধী কমিশন গড়তে চেয়েছিল, তখন দীনেশ ত্রিবেদীদের মতো অনেকে তার প্রতিবাদ করেন। বন্ধুদের পাশে তো থাকতেই হবে। নীতি বদলের কথা না-জানানোর অভিযোগ সম্পর্কে নির্মলবাবু বলেন, ‘‘জানার ইচ্ছা থাকলে সব জানা যায়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE