Advertisement
E-Paper

এখনই বিজেপিতে নয়, তবে বন্ধ হয়নি কথাবার্তা, বলছেন বৈশাখী

গত সপ্তাহে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের প্রতিনিধিরা।

ঈশানদেব চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০১৯ ১৫:১২
বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় ও শোভন চট্টোপাধ্যায়।—ফাইল চিত্র।

বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় ও শোভন চট্টোপাধ্যায়।—ফাইল চিত্র।

তুমুল জল্পনা চলল সপ্তাহ দুয়েক ধরে। শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় যোগ দিতে পারেন বিজেপিতে— রাজ্যের রাজনৈতিক শিবিরে আলোড়ন তুলে দিল এই গুঞ্জন। কিন্তু শোভন বা বৈশাখী সে বিষয়ে মুখ খুলছিলেন না কিছুতেই। মুখ খুললেন তৃণমূলের প্রার্থীতালিকা ঘোষিত হওয়ার পরের দিন। আনন্দবাজারকে দেওয়া এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় জানালেন, এখনই বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন না। কিন্তু বিজেপির সঙ্গে কথা শেষ, এমনটা ভাবার কোনও কারণ নেই বলেও স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়ে রাখলেন তিনি।

গত সপ্তাহে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের প্রতিনিধিরা। একটি বৈঠকে সঙ্ঘের প্রতিনিধিও ছিলেন। বিজেপি, সঙ্ঘ বা শোভন-বৈশাখী— কেউই ওই বৈঠকগুলি নিয়ে প্রকাশ্যে মন্তব্য করছিলেন না। কিন্তু বুধবার বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘‘ওঁরা যে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন আমার সঙ্গে, সে কথা ঠিক। সে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গেই কথা হয়েছে, এ-ও ঠিক। কিন্তু কাদের সঙ্গে বৈঠক করেছি বা কথা বলেছি, সে কথা নীতিগত কারণেই বলা উচিত হবে না।’’

বৈঠকের ফল কী? বিজেপিতে কি তা হলে যোগ দিচ্ছেন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়? সঙ্গে কি শোভন চট্টোপাধ্যায়ও? সপ্তাহ দুয়েক ধরে চলতে থাকা জল্পনার অবসান ঘটিয়ে কলেজ শিক্ষিকার জবাব, ‘‘এখনই কোনও দলে যোগ দিচ্ছি না। আপাতত সিদ্ধান্ত এটুকুই।’’

আরও পড়ুন: রায়চকের ঘটনা নিয়ে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ বৈশাখীর, জুড়লেন অনুব্রতর নাম​

কেন এমন সিদ্ধান্ত? বিজেপি-র সঙ্গে যে দফায় দফায় আপনার বৈঠক হয়েছে, তা তো নিজেই মানছেন। বিজেপিতে যোগ দেওয়ার এবং ভোটে লড়ার প্রস্তাবও যে ছিল, তা-ও কারও অজানা নয়। তা হলে পিছিয়ে আসার কারণ কী? বৈশাখী বললেন, ‘‘যাঁদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে, তাঁদের আমি বার বারই বলেছি, যে দলে আমার কোনও অবদান এখনও নেই, সেই দলে আচমকা যোগ দিয়ে একটা লোকসভা আসনের টিকিট নিয়ে নেওয়া আমার লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য নয়। অতএব প্রস্তাব যা-ই থাক, নিজের সেই নীতি থেকে সরে আসা সম্ভব নয়।’’

তা হলে বিজেপি নেতাদের সঙ্গে কথা এগোলেন কেন? ওই দলে যে আপনার কোনও অবদান নেই, সে কথা তো আগেই জানতেন। কলেজ শিক্ষিকার জবাব, ‘‘এখনও পর্যন্ত কোনও অবদান নেই, তাই বিজেপির হয়ে লোকসভা নির্বাচনে লড়তে চাই না। তার মানে তো এই নয় যে, এখানেই সব শেষ হয়ে গেল। একটা লোকসভা নির্বাচনের প্রেক্ষিতে গোটা বিষয়টাকে দেখছেন কেন? এর পরেও তো অনেক বিধানসভা বা পুরসভা বা অন্য কোনও সভার নির্বাচন আসবে। তার আগে যে বিজেপিতে আমার কোনও অবদান তৈরি হবে না, এমন কথাও তো বলছি না। শুধু বলছি যে, আপাতত কোনও সিদ্ধান্ত নিচ্ছি না।’’

অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই মন্তব্য। লোকসভা নির্বাচনের আগেই বিজেপির হয়ে তাঁকে ময়দানে নেমে পড়তে দেখা না গেলেও, ভোটের পরে যে তেমন কিছু হতে পারে, সে ইঙ্গিত খুব স্পষ্ট। সে ক্ষেত্রে কলকাতার প্রাক্তন মেয়র তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সহকর্মী শোভন চট্টোপাধ্যায়কেও নিশ্চয়ই দেখা যেতে পারে বিজেপির মঞ্চে? বৈশাখীর জবাব, ‘‘শোভন চট্টোপাধ্যায় এখনও তৃণমূলের বিধায়ক, তৃণমূলের টিকিটে নির্বাচিত কাউন্সিলর। তিনি একবারও বলেননি যে, তিনি তৃণমূলে আর নেই।’’

শোভন চট্টোপাধ্যায় যে সে রকম কোনও কথা বলেননি, তা ঠিক। কিন্তু বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় তো একাধিক বার বলেছেন, ‘যে সিদ্ধান্তই নিই, দু’জনে একসঙ্গে নেব। কোথাও গেলে একসঙ্গেই যাব।’ বৈশাখী বললেন, ‘‘হ্যাঁ আমি বলেছি, এখনও তা-ই বলছি।’’ তা হলে আপনার এবং শোভন চট্টোপাধ্যায়ের দলবদলের সম্ভাবনা তো জিইয়েই রইল? বৈশাখীর সহাস্য প্রশ্ন, ‘‘সে রকম কোনও সিদ্ধান্ত নিলে আপনাদের না জানিয়ে নেব, এমনটা ভাবছেন কেন?’’

প্রশ্ন কিন্তু এর পরেও থেকেই যাচ্ছে। শোভন-বৈশাখীর বিজেপিতে যোগদানের জল্পনা দাবানলের মতো ছড়িয়েছিল গোটা রাজ্যে। বিজেপি নেতারা তাঁদের স্বাগত জানিয়ে মন্তব্যও করতে শুরু করেছিলেন। তা হলে আচমকা সব কিছু থমকে গেল কেন? লোকসভা নির্বাচনে না লড়তেই পারতেন। বিজেপি-তে যোগ দিয়ে আপাতত দলের জন্য নিজেদের ‘অবদান’ তৈরি করতে পারতেন। তা না করে আপাতত বিজেপিতে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত কেন?

তৃণমূল সূত্রের খবর, দলের শীর্ষ নেতৃত্ব হস্তক্ষেপ করেছেন বিষয়টিতে। লোকসভা নির্বাচনে শোভনকে তৃণমূলের জন্য কাজে লাগানো যাক বা না যাক, শোভন যাতে বিজেপিতে না যান, তা নিশ্চিত করতে শীর্ষ নেতৃত্বই সক্রিয় হয়েছিলেন। তার পরেই শোভন থমকে দাঁড়িয়েছেন। লোকসভা নির্বাচনের আগে দলের অস্বস্তি আর বাড়াননি।

আরও পড়ুন: রাহুল-মমতা-মায়াবতী-অখিলেশকে টুইট করলেন মোদী, কী বললেন জানেন?​

তৃণমূলে শোভনের শিকড় যতটা গভীর, বৈশাখীর তো ততটা নয়। তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের সক্রিয়তায় শোভন থেমে যেতেই পারেন। কিন্তু বৈশাখী কেন থামলেন? সেটা কি শোভনেরই পরামর্শে? বৈশাখীর মন্তব্যেই এর উত্তর রয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘রাজনৈতিক বিষয়ে শোভন চট্টোপাধ্যায়কে আমি পথপ্রদর্শক মনে করি। তাঁর রাজনৈতিক পরামর্শে আমি অন্ধের মতো বিশ্বাস রাখতে পারি।’’ অর্থাৎ এই মুহূর্তে গেরুয়া শিবিরে নাম না লেখানোর ‘যৌথ সিদ্ধান্ত’ যে শোভনের পরামর্শ-প্রেরিত, তা নিয়ে সংশয়ের অবকাশ খুব একটা নেই।

তবে একান্ত সাক্ষাৎকারে বার বারই বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় বুঝিয়ে দিয়েছেন, বিজেপিতে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখা হয়েছে মাত্র, বাতিল করা হয়নি। সে প্রসঙ্গে রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ সম্পর্কে বিরক্তি টের পাওয়া গিয়েছে বৈশাখীর মন্তব্যে। শোভন চট্টোপাধ্যায় ‘বিতর্কিত’, তাঁকে বিজেপিতে স্বাগত জানানো নিয়ে দলেই ‘দ্বিমত’ রয়েছে— এমন কিছু মন্তব্য দিলীপ সম্প্রতি করেছেন। সে প্রসঙ্গে বৈশাখীর জবাব, ‘‘আমি যাঁদের সঙ্গে কথা বলেছি, তাঁরা বিজেপির সর্বভারতীয় নেতৃত্ব। তাই দিলীপ ঘোষ সবটা জানেন না। তিনি কতটা জেনে বলছেন, কতটা না জেনে বলছেন, তা নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না। কারণ কখনও তিনি বলেন, শোভন চট্টোপাধ্যায় মেয়র পদ ছাড়ায় মানুষ হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। তার পরেই কখনও বলেন আবার দলে স্বাগত জানানোর বার্তা দেন। কিছু দিন পরে আবার বয়ান বদলে ফেলেন। ওঁর কথাবার্তা যে খুবই অসঙ্গতিপূর্ণ, সেটা গোটা রাজ্যই জানে।’’

পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাংলায় খবর জানতে পড়ুন আমাদের রাজ্য বিভাগ।

Lok Sabha Election 2019 Baishakhi Banerjee Trinamool BJP Sovan Chatterjee
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy