Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Lok Sabha Election 2019

ভোটে বাধা, জলপাইগুড়ির ঘুঘুডাঙায় বুথের বাইরে চলল গুলি

তিন কেন্দ্রের ভোটগ্রহণে নজর রয়েছে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদেরও।

শান্তি বজায় রাখতে পুলিশ বাহিনীর টহল।

শান্তি বজায় রাখতে পুলিশ বাহিনীর টহল।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৯ ০৮:০০
Share: Save:

বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ জলপাইগুড়ি সদরব্লকের ঘুঘুডাঙায় একটি বুথে গোলমালের অভিযোগ আসে। অভিযোগ, বুথের বাইরে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা ভোটারদের লক্ষ্য করে গুলিও চালানো হয়েছে বলে খবর। বিজেপির অভিযোগ, তৃণমূলের কর্মীরাই এই গুলি চালিয়েছেন। ঘুঘুডাঙার ওই বুথের প্রিসাইডিং অফিসার জানিয়েছেন, তিনি গুলি চালানোর শব্দ শুনেছেন।

ভোটদানে বাধা দেওয়ার অভিযোগ দার্জিলিঙ কেন্দ্রের চোপড়ায়। শান্তিপূর্ণ ভোটের দাবিতে ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ বাসিন্দাদের। পুলিশকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান তাঁরা। এই ঘটনায় অভিযুক্ত এক তৃণমূল কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। তৃণমূল কর্মীদের পাল্টা অভিযোগ, তাঁদের উপর হামলা চালাচ্ছে বিজেপির কর্মীরা। ঘটনাস্থলে পাথর ছুড়তে দেখা যায় বিক্ষোভকারীদের। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে বিশাল পুলিশ বাহিনী, র‌্যাফ। কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে পুলিশ। কিন্তু বিক্ষোভ থামানো যায়নি। কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবিতে বিক্ষোভ চলতেই থাকে চোপড়ায়।সকাল থেকে গোলমালের ৪ ঘণ্টা পর চোপড়ায় কেন্দ্রীয় বাহিনী পৌঁছলে গ্রামবাসীরা বিক্ষোভ প্রত্যাহার করেন। ভোটের লাইনে দাঁড়িয়েছেন তাঁরা।

ইসলামপুরে সিপিএম প্রার্থী মহম্মদ সেলিমের গাড়িতে ভাঙচুরের অভিযোগ। ভোট পক্রিয়া দেখতে আসার সময় এই হামলা হয় বলে জানিয়েছেন তিনি। ঘটনার খবর পাওয়ার পরই নির্বাচন কমিশনের কাছে রিপোর্ট চাইল সিইও দফতর। প্রাথমিকভাবে যা খবর, ইসলামপুরের পাটাগড়ায় ওই বুথে ছাপ্পার অভিযোগ পান মহম্মদ সেলিম। খবর পেয়ে প্রার্থী মহম্মদ সেলিম সেখানে ছুটে যান। তখনই দুষ্কৃতীরা পালানোর সময় তাঁর গাড়িয়ে হামলা চালায় বলে অভিযোগ।

নির্বাচন কমিশন এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন প্রদেশ কংগ্রেসের সমন্বয় কমিটির চেয়ারম্যান ও সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য। এ দিনের ভোট নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘নির্বাচন নির্বিঘ্নে না করার জন্য রাজ্য সরকারের মন্ত্রীরা উঠেপড়ে লেগেছেন। এঁদের বিরুদ্ধে আজ বিরোধী দলকে লড়তে হচ্ছে। যেখানে বাহিনী পাঠানোর দরকার ছিল অনেক জায়গাতেই সেখানে বাহিনী দেয়নি নির্বাচন কমিশন।’’ নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর, দুপুর ৩টে পর্যন্ত দার্জিলিঙে ভোট পড়েছে ৬৩.১৪% এবং রায়গঞ্জে ৬১.৮৪% এবং জলপাইগুড়িতে ৭১.৩২%।

আরও পড়ুন: লাইভ: ছত্তীসগঢ়ে বুথের মধ্যেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে পোলিং অফিসারের মৃত্যু

ধূপগুড়ির বারঘুড়িয়ায় ভোট ঘিরে অশান্তির খবর পাওয়া গিয়েছে। এক তৃণমূল সমর্থকের খড়ের গাদায় আগুন লাগানোর অভিযোগ বিজেপির বিরুদ্ধে।

মালবাজারের কুমলাই গ্রামে আক্রান্ত বিজেপি কর্মী। বিজেপির নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুর করে আগুন লাগানোর অভিযোগ তৃণমূলের বিরুদ্ধে। অভিযোগ অস্বীকার তৃণমূলের।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানানো হয়েছে, সকাল ৯টা পর্যন্ত জলপাইগুড়িতে ভোট পড়েছে ১৬.৮৬%, দার্জিলিঙে ১৬.১৪%, রায়গঞ্জে ১৭.৪৫%। সব মিলিয়ে এই তিন আসনে সকাল ৯টা পর্যন্ত গড় ভোট পড়েছে ১৬.৭৮%।

ভোটদানে বাধা দেওয়ার অভিযোগ জানাচ্ছেন এক বাসিন্দা। আঙুল তাক করে অভিযুক্তকে দেখাচ্ছেন তিনি। চোপড়ায়।

গোয়ালপোখরের কাটা ফুলবাড়িতে ভোটদানে বাধা দেওয়ার খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে আক্রান্ত হয় সংবাদমাধ্যম। বাঁশ, লাঠি দিয়ে মেরে মাথা ফাটানো হল সাংবাদিকের। ভেঙে দেওয়া হয়েছে ক্যামেরাও। গোয়ালপোখরের কাটা ফুলবাড়িতে ভোটদানে বাধা দেওয়া হচ্ছে ভোটারদের। এই অভিযোগ পেয়েই সেই খবর সংগ্রহে করতে যান তাঁরা। সেখানেই বেধড়ক মারা হয় তাঁকে। আহত হয়েছেন তাঁর সঙ্গে থাকা চিত্র সাংবাদিকও। গোটা ঘটনার রিপোর্ট তলব করেছে নির্বাচন কমিশন। জেলাপ্রশাসনকে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ কমিশনের।

হেমতাবাদের মহজমপুরে কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবিতে বিক্ষোভ বাসিন্দাদের। পুলিশের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন গ্রামবাসীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পৌঁছেলে কুইক রেসপন্স টিম।

ভোট দিচ্ছেন দীপা দাশমুন্সি।

সকালে ভোট দিতে গিয়ে ইভিএম বিভ্রাটের মুখে পড়তে হয় রায়গঞ্জের কংগ্রেস প্রার্থী দীপা দাশমুন্সিকে। পরে নতুন ইভিএম আসায় ১০ মিনিট পরে ভোট দেন তিনি। এ দিকে ইসলামপুরে ১৩৫ নম্বর বুথে ভিভিপ্যাট বিকল হয়ে পড়ায় তৃণমূলপ্রার্থী কানাইয়ালাল আগরবালকে অনেকক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। ইভিএম খারাপের অভিযোগ আসে শিলিগুড়ি বুথেও। ফলে ভোট শুরু হতে ১ ঘণ্টা দেরি হয় সেখানেও।

আব্দুলঘাটার ১৮৫ নম্বর বুথে সকাল থেকে বাসিন্দারা বিক্ষোভ দেখাতে শুরে করেছেন। বাসিন্দাদের অভিযোগ, ওই বুথে আধা সেনা থাকলেও কোনও ভোটকর্মী নেই। সে কারণেই বাসিন্দারা বিক্ষোভ দেখান। আব্দুলঘাটার ১৮৫ নম্বর বুথে তালা লাগিয়ে দেন তাঁরা

আজ ২০১৯ লোকসভা ভোটের দ্বিতীয় দফার ভোটগ্রহণ। এই দফায় ১৩টি রাজ্যের সঙ্গে এ রাজ্যেও তিনটি আসনের ভোট। দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি এবং রায়গঞ্জ কেন্দ্রের ভোটগ্রহণের চূড়ান্ত প্রস্তুতি সারা হয়ে গিয়েছে। তিন কেন্দ্রের ভোটগ্রহণে নজর রয়েছে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদেরও। দ্বিতীয় দফার ভোটগ্রহণে সকাল থেকেই বুথে পৌঁছে গিয়েছেন ভোটকর্মীরা। সেই সঙ্গে রয়েছেন নিরাপত্তা কর্মীরা। অন্য দিকে গতকাল বুধবার থেকেই উত্তেজনাপ্রবণ বুথগুলির দখল নিয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। এ ছাড়াও রয়েছে নির্বাচন কমিশনের পর্যবেক্ষকরা।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

কোন ৯৫ জন যাবেন সংসদে? আজ মানুষের রায় নেবেন ১৫৯৬ জন

ভৌগোলিক অবস্থান এবং ভোটারদের চরিত্রগত দিক থেকে বাংলার অন্যান্য আসনের চেয়ে দার্জিলিং বরাবরই আলাদা। একদিকে যেমন রয়েছে দার্জিলিং, কালিম্পং, কার্শিয়াঙের মতো পাহাড়ি এলাকা, তেমনই সমতলের শিলিগুড়ি, মাটিগাড়া-নকশালবাড়ি এবং ফাঁসিদেওয়া বিধানসভা কেন্দ্রও এই লোকসভার অন্তর্গত। আবার আলাদা জেলা উত্তর দিনাজপুরের চোপড়াও এই লোকসভার মধ্যে পড়ে। ফলে রাজনৈতিক দিক থেকেও বৈচিত্রে ভরা এই কেন্দ্র। গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার বিনয় তামাং গোষ্ঠী এ বার ভোটে তৃণমূলকে সমর্থন করেছে। বিমল গুরুং গোষ্ঠী পাহাড়ছাড়া হলেও তাঁর অনুগামীদের প্রভাব এখনও যে কিছুটা রয়েছে, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। এক সময় পাহাড়ের একছত্র অধিপতি সুবাস ঘিসিংয়ের জিএনএলএফ-এর প্রভাবও রয়েছে। তাঁর ছেলের নেতৃত্বে জিএনএলএফ এবং বিমল গুরুং গোষ্ঠী বিজেপি প্রার্থীকে সমর্থন করেছেন। ফলে দার্জিলিং, কার্শিয়াং, কালিম্পঙে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সম্ভাবনা।

রায়গঞ্জ এক সময় কংগ্রেসের শক্তি ঘাঁটি ছিল। প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির খাসতালুকের ভোট ঘিরে রাজনৈতিক শিবিরে কৌতুহল তুঙ্গে। কিন্তু প্রিয়রঞ্জন অসুস্থ হওয়ার পর থেকেই ক্ষমতা খর্ব হতে থাকে কংগ্রেসের। ২০১৪ সালে তাঁর স্ত্রী দীপা দাশমুন্সি এই কেন্দ্রে প্রার্থী হন। কিন্তু মহম্মদ সেলিমের কাছে মাত্র হাজার দেড়েক ভোটের ব্যবধানে হেরে যান দীপা। এ বারও দু’জনই প্রার্থী। তৃণমূল প্রার্থী কানাইয়ালাল আগরওয়াল এবং বিজেপির দেবশ্রী চৌধুরীকে নিয়ে এ বারও চতুর্মুখী লড়াই রায়গঞ্জ কেন্দ্রে।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

আরও পড়ুন: কাটাকুটির জটিল অঙ্ক কষে চলছেন সকলেই

জলপাইগুড়ি লোকসভা কেন্দ্রের রাজনীতিতে চা বাগান বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। অনেক সময় নির্নায়ক শক্তিও হয়ে ওঠেন চা-বাগানের ভোটাররা। বাঙালির পাশাপাশি আদিবাসী এবং নেপালি মিলিয়ে মিশ্র ভোটারের সংখ্যাও নেহাত কম নয় এই এলাকায়।

—নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE