—ফাইল চিত্র।
বিজেপির দুই শীর্ষ নেতার আক্রমণের ‘জবাব’ দেওয়াই নয়, বৃহস্পতিবার সিউড়ির চাঁদমারি মাঠের নির্বাচনী সভা থেকে ঝাঁঝালো প্রতি আক্রমণের পথে হাঁটলেন তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সোম ও বুধবার জেলায় পরপর দু’টি নির্বাচনী সভা করেছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। দু’জনেই মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণের নিশানা করেছেন। তীব্র সমালোচনা করেছেন রাজ্যের শাসকদলের। মোদীর সভার ২৪ ঘণ্টা পরেই জেলা সদরে মুখ্যমন্ত্রীর জনসভা থাকায় রাজনৈতিক তাপ চড়চড় করে বাড়ছিল। মোদীর আক্রমণের জবাব কী ভাবে দেন মুখ্যমন্ত্রী, তার দিকে তাকিয়ে ছিলেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। এ দিন সিউড়ির নির্বাচনী সভা থেকে মোদী-শাহের প্রতিটি আক্রমণের উত্তর দিয়েছেন ঝাঁঝালো ভাবে। তাঁর নিজস্ব অননুকরণীয় ভঙ্গিতে।
নরেন্দ্র মোদী ইলামবাজারের সভা থেকে অভিযোগ করেন, বোলপুরে পর্যটনের অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু, যতদিন তৃণমূলের ‘গুন্ডাগিরি’ থাকবে, ততদিন পর্যটন বাড়বে না বা নতুন উদ্যোগ আসবে না। এমনকি গুরুদেবের শান্তিনিকেতনকেও এখন গুন্ডারা অশান্ত করে তুলেছে। মমতা এ দিনের সভায় তার জবাবে বলেন, ‘‘শান্তিনিকেতনে আমরা নাকি গুন্ডা তৈরি করেছি! গতকাল মোদী এসব বলে গিয়েছেন। ওঁর মাথা ঠিক আছে তো? মাথাটা দ্রুত পরীক্ষা করানো উচিত।’’ মুখ্যমন্ত্রীর সংযোজন, ‘‘শান্তিনিকেতন আমাদের সকলের সম্মানের জায়গা, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের স্বপ্নভূমি। আমাদের শিক্ষা সংস্কৃতি ভূমি। আমাদের শান্তির শান্তিনিকেতন। সেখানে গুন্ডা তৈরি হবে কোত্থেকে?’’ প্রধানমন্ত্রীকে তাঁর কটাক্ষ, শান্তিনিকেতন গুন্ডার জায়গা নয় মোদীবাবু। আপনি একটা হোমওয়ার্ক করেও আসেন না!
মোদীর প্রধান সেনাপতি অমিত শাহ মহম্মদবাজারে গণপুরের সভা থেকে আধুনিকীকরণের নামে তারাপীঠ শ্মশান নিয়ে তৃণমূল সরকারকে কটাক্ষ করেছিলেন। অমিতের অভিযোগ, তারাপীঠ শ্মশানের পবিত্রতা উন্নয়নের নামে নষ্ট করা হয়েছে। জনস্বার্থে মামলা করে বিষয়টি আটকানো হয়েছে বলেও দাবি করেন। বিজেপি ক্ষমতায় ফিরলে তারাপীঠ শ্মশানের পবিত্রতা এবং সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনার আশ্বাসও দেন। এ দিন সেই অভিযোগের উত্তর দেন মমতা। বলেন, ‘‘তারাপীঠে যান। গিয়ে দেখবেন কী ভাবে তারপীঠ পাল্টে গিয়েছে। মোদীবাবু শ্মশান তৈরি করবেন? আপনাদের ভিক্ষা চাই না।’’ মুখ্যমন্ত্রীর কটাক্ষ, ‘‘আপনার মানুষকে মেরে শ্মশানঘাটে পাঠান। দাঙ্গা বাধান। আর আমরা শ্মশানঘাট, কবরস্থানের মানোন্নয়ন করি।’’ তাঁর দাবি, বক্রেশ্বর ডেভেলপমেন্ট অথিরিটি, দক্ষিণেশ্বর, মা তারা, তারকেশ্বর থেকে পাথরচাপুড়ি, ফুরফুরা শরিফ—সব জায়গায় তৃণমূলের সরকার প্রভূত উন্নয়নের কাজ করেছে। পাঁচ বছরে প্রতিশ্রুতি দিয়েও রামমন্দির তৈরি করতে পারেনি বিজেপি বলে টিপন্নী করেন মমতা।
এ দিন সিউড়ি চাঁদমারি ময়দানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চপার এসে পৌঁছয় দেড়টা নাগাদ। জেলার দুই লোকসভা আসনের দলীয় প্রার্থী শতাব্দী রায়, অসিত মাল, জেলা তৃণমূলর সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল-সহ ছোট বড় সব নেতাই হাজির ছিলেন। মাঠ ভরে উঠেছিল মমতা আসার ঢের আগে। সভায় প্রাথমিক ভাবে দু’চার কথা বলেই মমতা বলেন, ‘‘গতদিন নরেন্দ্র মোদী বলে গিয়েছিলেন আমি নাকি উন্নয়ন করি না। গত সাত বছরে আমি বীরভূমের জন্য যা করেছি, তার যদি হিসেব দিই এবং আমি যে কথাগুলো বলছি, সেটা যদি মিথ্যা কথা হয়, আমি চ্যালেঞ্জ করছি মোদী ও বিজেপিকে প্রমাণ দিন। তৃণমূল সরকার আসার পরে ৯৯ শতাংশ মানুষকে কিছু না কিছু সুবিধা দিয়েছি।’’
গত কয়েকটি সভা থেকে ক্রমাগত মোদী মমতাকে ‘স্পিডব্রেকার দিদি’ হিসাবে কটাক্ষ করছেন। বুধবার মোদীর কটাক্ষ ছিল, ‘‘বাম ও কংগ্রেসের এত বছরের শাসনের পরে আপনারা দিদির উপর ভরসা করেছিলেন। দিদি কী করেছেন। অনুপ্রবেশ। দাদাগিরিকে টপ গিয়েরে তুলেছেন। আর বিকাশে স্পীডব্রেকার লাগিয়ে দিয়েছেন।’’ বৃহস্পতিবার সভার শুরুতেই তার তীব্র প্রতিবাদ করেন মমতা। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে গত আট বছরে জেলায় কোথায় কী কী উন্নয়ন হয়েছে, তার বিশদ খতিয়ান এ দিন সভামঞ্চ থেকে তুলে ধরেন। জনতার উদ্দেশে মমতা বলেন, ‘‘শুনে রাখুন একটা কাজও পাঁচ বছরে করেনি মোদী সরকার। মনে রাখবেন, এটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইলেকশন নয়, যে মমতা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তার কৈফিয়ত দেবে। আপনাকে (মোদী) কৈফিয়ত দিতে হবে আপনি পাঁচ বছরে কী কাজ করেছেন। তারপর বড় বড় কথা বলবেন!’’
মোদী সরকারের অসহযোগিতা তুলে ধরতে মহম্মদবাজারের ডেউচা-পাঁচামি এবং দেওয়ানগঞ্জ হরিণসিঙ্গা কয়লা প্রকল্পের উদাহরণ তুলে ধরেন মমতা। তাঁর দাবি, ‘‘দেশের সর্ববৃহৎ কয়লা খনি তৈরি হবে। কেন বারবার অনুরোধ করা সত্বেও শুধুমাত্র একটি মৌ স্বাক্ষরের জন্য তিন বছর ধরে সেটা ফেলে রেখেছেন। অথচ ১২ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প। প্রচুর মানুষের কর্মসংস্থান হত। বাংলাকে বঞ্চিত করার জন্যই সেটা করেনি আপনার সরকার।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy