ছবি: পিটিআই।
বিজেপির বিরুদ্ধে আগেই টাকা ছড়িয়ে ভোট কেনার অভিযোগ করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার ভোটযন্ত্রে কারচুপি আশঙ্কা জানিয়ে তৃণমূল কর্মীদের স্ট্রংরুম পাহারার নির্দেশ দিলেন তিনি। জানালেন, ‘‘পাড়ার ছেলেরা রাত জেগে পাহারা দিলে তাঁদের ভবিষ্যতের দায়িত্ব আমার। যাঁরা এই কাজ করবেন, তৃণমূল তাঁদের পুরস্কৃত করবে।’’
নির্বাচন কমিশনের নতুন আদেশে বৃহস্পতিবারই ছিল এ রাজ্যের প্রচারের শেষ দিন। দক্ষিণ ২৪ পরগনার মথুরাপুর ও ডায়মন্ডহারবারে এদিন পরপর দুটি সভা করেন মমতা। সেখানেই তাঁর অভিযোগ, ‘‘মেশিন বদলের পরিকল্পনা করছেন নরেন্দ্র মোদী। দিল্লি থেকে আমার কাছে খবর এসেছে।’’
মথুরাপুরের সভায় দলীয় কর্মীদের তিনি বলেন, ‘‘আমার কাছে খবর আছে ওরা (বিজেপি) মেশিন বদলের চেষ্টা করবে। ইভিএম মেশিন যেখানে থাকবে, তার পাশে ক্যাম্প করে আপনারা থাকবেন।’’ তাঁর আরও নির্দেশ, ‘‘আটঘন্টা করে ডিউটি করবেন। অন্য কেউ জল, খাবার কিছু দিলে খাবেন না। ঘুমের ওষুধ খাইয়ে দিতে পারে।’’ পরে ডায়মন্ডহারবারের সভায়ও এ সম্পর্কে মমতা বলেন, ‘‘বাংলার সব স্ট্রংরুম পাহারা দেবেন। পুলিশ হঠিয়ে দিলেও থাকবেন।’’ সভায় উপস্থিত মহিলাদের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমার মহিলা বাহিনী চাই। গণনার দিন পর্যন্ত বাড়িতে রান্নার পাশাপাশি মা-বোনেদেরও একটু বেশি দায়িত্ব নিতে হবে। নজর রাখবেন মধ্যরাতে কী হচ্ছে। ছবি তুলে আমাকে পাঠাবেন।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
নিয়ম যেমন
কমিশন সূত্রের খবর, স্ট্রংরুম পাহারা দিতে ব্যবহার করা হয় ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তা বলয়। প্রথম ধাপে থাকে রাজ্য পুলিশ। দ্বিতীয় ধাপে রাজ্যের সশস্ত্র পুলিশ থাকে। শেষ ধাপ, অর্থাৎ মূল দরজার পাহারায় থাকে কেন্দ্রীয় বাহিনী। সব ঠিকঠাক আছে কি না, তা দেখতে দিনে দু’বার যান রিটার্নিং অফিসার বা অ্যাসিস্টান্ট রিটার্নিং অফিসার। সপ্তাহে দু’বার যান ডিস্ট্রিক্ট ইলেকশন অফিসার। স্ট্রং রুমের ভিতরে কারা যাচ্ছেন, তার রেজিস্টার থাকে।
কারচুপি নিয়ে বিজেপিকে চ্যালেঞ্জে করে আইনি পথে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বলেন, ‘‘আমি দেখব নরেন্দ্র মোদীর কত ক্ষমতা। কেন্দ্রীয় বাহিনীর কত ক্ষমতা। ভয় দেখিয়ে, ইভিএম বদলে জিতবেন! আইনি পথে যতদূর যেতে হয় যাব।’’ বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ অবশ্য এই অভিযোগে আমল দিতে চাননি। তিনি বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুঝে গিয়েছেন, সারা রাজ্যে তৃণমূল হারবে। তাই ফল ঘোষণার আগেই হারের ব্যাখ্যা তৈরি করে রাখছেন।’’
এ রাজ্যে নির্বাচন কমিশনের কাজে অসন্তোষ জানিয়ে আসছিল তৃণমূল। বুধবার রাজ্যে ৩২৪ ধারা প্রয়োগের পর কমিশনের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতের পথই নিয়েছে তৃণমূল। এদিনও কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে সরাসরি প্রশ্ন তুলে মমতা এ দিন বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশন বিক্রি হয়ে গেছে।’’
এদিন কলকাতার আমহার্স্ট থানার ওসি এবং ডায়মন্ডহারবারের এসডিপিও-কে বদল করে দেওয়াকেও তৃণমূল ‘রাজনৈতিক অভিসন্ধি’ বলে মনে করছে। দলের এক শীর্ষনেতা বলেন, ‘‘বিজেপি এবং তাদের আদেশে চলা নির্বাচন কমিশন যদি ভেবে থাকে পুলিশের ভরসায় তৃণমূল ভোট লড়ে তাহলে ভুল করবেন। মানুষের জোরে আমাদের দল বারবার জয়ী হয়। হবেও। যাদের চারপাশে পুলিশি নিরাপত্তা নিয়ে নির্বাচনী সভা করতে আসতে হয় এবং টাকা ছড়িয়ে ভোট করতে হয়, হামলা করে, বাংলার ঐতিহ্য সংস্কৃতির উপর আঘাত করে বহিরাগতদের দিয়ে ভোট লুঠের ছক কষতে হয়, তারা পুলিশ এবং অফিসারদের বদলি করে আত্মতুষ্টিতে ভুগতে পারেন। ফল বেরোবে ফল পাবেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy