বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার ঘটনা বিজেপির ‘পূর্ব পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র’ বলে বুধবার অভিযোগ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আগরপাড়ার সভা মঞ্চ থেকে এ দিন একটি অডিয়ো চালিয়ে মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন, মঙ্গলবার বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহের রোড শো থেকে হামলা চালানোর আগাম পরিকল্পনা করে রেখেছিল বিজেপি। তার জন্য ভিন্ রাজ্য থেকেও লোক আনা হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘ভিন্ রাজ্য থেকে গুন্ডা এনে বিজেপি বিদ্যাসাগর কলেজে ঢুকে মূর্তি ভেঙেছে। রাজস্থান, দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ঝাড়খণ্ড থেকে গুন্ডা আনা হয়েছিল।’’
এর পরেই ‘‘গেরুয়া হামলা চলছে দেখুন’’ বলে নিজের ফোন থেকেই একটি ভিডিয়ো চালিয়ে দেখান মমতা। বলেন, ‘‘বাইরের গুন্ডা আমদানি করেছে। যদি এরা বাংলারই লোক হয়, রবীন্দ্রনাথ, নেতাজি, নজরুলকে জানবে না? বিদ্যাসাগরকে চিনবে না? বাইরের গুন্ডা জোর করে কলেজে ঢুকে বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙেছে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের মেরেছে। আমার কাছে তথ্য আছে। ওরাই যে ভাঙছে, সেটাও ভিডিয়োতে স্পষ্ট যাচ্ছে।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
পাশাপাশি একটি অডিয়ো ক্লিপও শোনান মমতা। সেখানে শোনা যায়, সদ্য কংগ্রেস থেকে বিজেপিতে যোগ দেওয়া রাকেশ সিংহ বিজেপি কর্মীদের কোনও একটি অনলাইন গ্রুপকে বলছেন, মঙ্গলবার ঝামেলা হতে পারে। কর্মীরা যেন তৈরি হয়ে আসেন। যদিও এই অডিয়ো ক্লিপের সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার পত্রিকা।
বিজেপি অবশ্য দাবি করেছে, তৃণমূলই বিদ্যাসাগর কলেজে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটিয়েছে। এ প্রসঙ্গে তৃণমূল নেত্রীর পাল্টা প্রতিক্রিয়া, ‘‘তৃণমূল কোথায় ছিল? বাংলার সংস্কৃতিকে নষ্ট করার লক্ষ্যেই বিজেপি এই কাজ করেছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘মনীষীদের অসম্মান করা মানে আমাদেরও অসম্মান। এ কাজ আমরা করতে দেব না। সিপিএম-ও এক সময়ে রবীন্দ্রনাথ, নজরুলকে তুলে দিয়েছিল। কিন্তু আমরা লেনিন মার্কসকে অসম্মান করি না।’’
পায়ে পায়ে: বেলেঘাটার গাঁধী ভবন থেকে শ্যামবাজার পর্যন্ত পদযাত্রায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য
শাহের র্যালিকেও এ দিন কটাক্ষ করেছেন মমতা। তাঁর বক্তব্য, বিজেপি কলকাতার লোককে পাশে পায় না বলেই বাইরে থেকে লোক নিয়ে আসে। এই প্রসঙ্গে বিজেপির কেন্দ্রীয় মুখপাত্র তাজিন্দর সিংহ বাগ্গার নাম উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘দুর্গাপুজোর সময়েও বাংলায় এসে দাঙ্গা করার চেষ্টা করেছিল ছেলেটি। আমরা আসতে দিইনি। এখন কলকাতায় এসে বসে আছে। সঙ্গে গুন্ডা নিয়ে এসেছে।’’
একই সঙ্গে অমিত শাহের রোড শো’কে ‘অরাজনৈতিক’ চড়কের মিছিল বলেও মন্তব্য করেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, ‘‘সঙ সাজিয়ে কিছু লোককে রাস্তায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল।’’
এ দিন একই সভায় শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, মঙ্গলবার বিদ্যাসাগর কলেজের তালা ভেঙে বিজেপিই ভিতরে ঢুকেছিল। অমিত শাহ, বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এবং দলের কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিংহের উপস্থিতিতে সমস্ত ঘটনা ঘটেছে। শিক্ষা দফতর থেকে কলেজে যা সম্পত্তি নষ্ট হয়েছে তা সব মেরামত করে পুরনো অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, এ দিন যে মাঠে মুখ্যমন্ত্রীর সভা হয়, তার নামও ‘বিদ্যাসাগর ক্রীড়াঙ্গন’। সভার শুরুতে বিদ্যাসাগরের মূর্তিতে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন মমতা। বলেন, ‘‘বিদ্যাসাগরের এই অপমানের গণতান্ত্রিক ভাবে বদলা নিতে হবে ভোটের মাধ্যমে।’’
পাশাপাশি এ দিন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর পাশে দাঁড়িয়েছেন অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নায়ডু। মঙ্গলবারের ঘটনার জন্য শাহের বিরুদ্ধে তোপ দেগে তিনি বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে গেরুয়া দল অস্তিরতা তৈরি করার চেষ্টা করছে।’’
নির্বাচনী প্রচারে উত্তর কলকাতায় এদিন মমতার পদযাত্রার কর্মসূচি ছিল পূর্বনির্ধারিত। তবে বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার পরিপ্রেক্ষিতে তা কার্যত প্রতিবাদ মিছিলের চেহারা নেয়। বেলেঘাটায় গাঁধী ভবনে গাঁধীজির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পদযাত্রা শুরু করেন মুখ্যমন্ত্রী। নির্বাচনী প্রচার ও প্রতিবাদ মিলিয়ে বেলেঘাটা থেকে শ্যামবাজার—প্রায় সাত কিলোমিটার রাস্তায় শক্তির প্রমাণও দিলেন তিনি।