মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে ভোটের লড়াইকে মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধীর ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনের সঙ্গে তুলনা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বুধবার পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরার সভায় প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি, ‘‘১৯৪২ সালে মহাত্মা গাঁধী ডাক দিয়েছিলেন, ইংরেজ ভারত ছাড়ো। আজ বাংলা বলছে, মোদী তুমি গদি ছাড়ো। ক্ষমতা ছাড়ো।’’
একই সঙ্গে মমতার কটাক্ষ, ‘‘আমাদের দেশভক্তি শেখাচ্ছে। স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় কোথায় ছিল নরেন্দ্র মোদীর দল? গাঁধীকে খুন করেছিল কারা? যে নাথুরাম গডসে গাঁধীকে মেরেছিল, আজ তার নামে দেশে জিন্দাবাদ বলা হচ্ছে।’’
এ দিন মেদিনীপুরের ডেবরায় একটি এবং পুরুলিয়ার হুড়া ও কোটশিলায় দু’টি সভা করেন মমতা। প্রতিটি সভা থেকেই স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে মোদীকে সরাসরি আক্রমণের রাস্তা বেছে নেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীকে ‘দাঙ্গাবাজ’ বলে অভিহিত করে মমতার বক্তব্য, ‘‘ওঁর ব্লক স্তরের কাউন্সিলর হওয়ারও কথা নয়। টাকা দিয়ে, দাঙ্গা করে প্রধানমন্ত্রী হয়ে গেলেন। লোকে ভেবেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী হয়ে হয়তো উনি খানিকটা বদলাবেন। কিন্তু তিনি বদলাননি। পাঁচ বছর ধরে সকলকে ধমকেছেন। চমকেছেন।’’
ডেবরার জনসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দুই প্রার্থী দীপক অধিকারী (দেব) এবং মানস ভুঁইয়া। বুধবার। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল
কিছু দিন আগে রাজ্যে এসে মোদী বলেছিলেন, আগে তৃণমূলনেত্রীকে তিনি ‘স্বচ্ছ ভাবমূর্তি’র বলে মনে করতেন। কিন্তু ক্ষমতায় এসে মমতা তাঁর সেই ধারণা বদলে দিয়েছেন। পর্যবেক্ষকদের একাংশের অভিমত, এ দিন মোদীকে সেই মন্তব্যেরই জবাব দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। শুধু মোদী নন, বিজেপির বিরুদ্ধেও এ দিন হিংসায় প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ তুলে মমতা বলেন, ‘‘বিজেপি খালি দাঙ্গা লাগাতে চায়। হিন্দুর সঙ্গে মুসলিমের। আদিবাসীর সঙ্গে মাহাতোর। এ ভাবে দেশ চলবে কী করে? আমরা সকলকে এক সঙ্গে থাকার কথা বলি।’’ জনতাকে সতর্ক করে এর পরেই তাঁর মন্তব্য, ‘‘তোতা পাখির ভোঁতা বুলি, তেতো বুলি আর শুনবেন না।’’
প্রতিটি নির্বাচনী বক্তৃতাতেই মোদীর বিরুদ্ধে ‘চোখ রাঙানি’র অভিযোগ তুলছেন মুখ্যমন্ত্রী। এ দিনও সে প্রসঙ্গ টেনে এনে বলেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদীদের আমি ভয় পাই না। আমি সিপিএমের বিরুদ্ধে অনেক লড়াই করেছি। তুমি চাইলে আমার গলা কেটে নিতে পার। কাউকে না কাউকে সাহস করে এগোতে হয়। যখন সবাই চুপচাপ ছিল, আমরা এগিয়ে এসেছিলাম। বলেছিলাম নরেন্দ্র মোদীর কোনও প্রয়োজন নেই।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘দেশে জরুরি অবস্থা চলছে। কারও মুখ খোলার ক্ষমতা নেই। আমরা বলি কারণ, আমরা ওদের কেয়ার করি না।’’
এর আগে ডেবরার সভাতেও মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘বেড়ালের গলায় কাউকে না কাউকে ঘণ্টা বাঁধতে হয়। সেই ঘণ্টা আমরা বেঁধে দিয়েছি।’’
২০১৯-এ দেশের সরকার গড়ার ক্ষেত্রে তৃণমূল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে বলে গোড়া থেকেই দাবি করছিলেন মমতা। জানিয়ে দিয়েছিলেন, কেন্দ্রে বাংলার নেতৃত্বে আঞ্চলিক ‘বন্ধু’ দলগুলির সহযোগিতায় সরকার তৈরি হবে। এ দিনও সে কথা মনে করিয়ে মমতা বলেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদী আসবেন না। নরেন্দ্র মোদী বিদায় নেবেন। এটা আমাদের শপথ। বন্ধু দলগুলিকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাই সরকার গড়বে।’’
প্রতিদিনের মতো এ দিনও একগুচ্ছ উন্নয়নের খতিয়ান দিয়েছেন মমতা। দাবি করেছেন, তাঁর আমলেই মাওবাদী সমস্যার সমাধান হয়েছে। জঙ্গলমহলে উন্নয়ন হয়েছে। সেখানে ফের পর্যটক আসতে শুরু করেছেন। জঙ্গলমহলে পর্যটন শিল্প যাতে আরও উন্নত হয়, তারও ব্যবস্থা করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন মমতা।
তবে একই সঙ্গে তাঁর সতর্কবার্তা, ‘‘জঙ্গলমহলে বিজেপি বিভেদ তৈরির চেষ্টা করছে। টাকা ছড়াচ্ছে। আম, লিচু খাওয়ানোর চেষ্টা করছে। কেউ কিছু খেতে দিলে খেয়ে নেবেন। কিন্তু ওদের ভোট দেবেন না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy