বৃহস্পতিবার পুরুলিয়ায় মোদীর জনসভায়। ছবি: সুজিত মাহাতো।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হেলিকপ্টার নামতে তখনও দেরি। নিরাপত্তার জন্য সভা-মঞ্চের সামনে বেশ কিছুটা ফাঁকা জায়গা রাখা। তার পরের একটা অংশ সাংবাদিকদের জন্য। সেখানে ক্যামেরা বসাচ্ছিলেন এক বৈদ্যুতিন মাধ্যমের চিত্র সাংবাদিক। হঠাৎ বাঁশের লক্ষ্মণরেখা পেরিয়ে পিছনের ভিড় থেকে উড়ে এল লাল চেয়ার। তার পরে আরও একটা নীল। চেয়ারের পরে চেয়ার উড়ে আসতেই থাকল ক্রমাগত।
মঞ্চ থেকে এক বিজেপি নেতা বলে চলেছেন, ‘‘কেউ চেয়ার ছুঁড়বেন না। শান্ত হয়ে বসুন। মোদীজি এসে পড়বেন।’’ কে শোনে, কার কথা! ব্যারিকেড টপকে তখন বাঁধভাঙা জলের মতো জনতা ক্রমে ঘেরাটোপের মধ্যে চলে আসছে। ফাঁকা জমি প্রায় চোখের পলকে ভিড়ে ঠাসা হয়ে গেল।
বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর সভা উপলক্ষে পুরুলিয়ার রায়বাঘিনী মাঠে এমনই দাঁড়াল পরিস্থিতি। ঘণ্টা কয়েক পরে জেলার শিমুলিয়ার কালীপুর ফুটবল ময়দানের সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কটাক্ষ করলেন, ‘‘এটা আপনার মিটিংয়ে শোভা পায়? একটা মিটিং অর্গানাইজ় করতে পারেন না, দেশ অর্গানাইজ় করবেন?’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
বৃহস্পতিবার মোদীর সভার মাঠে, মাঠের পথে থিকথিকে ভিড়। কাছ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে দেখবেন বলে সাতসকালে এসে জায়গা দখল করেছিলেন অনেকে। সঙ্গে মোদীর মুখোশ, ‘কাটআউট’। মাথায় ‘চৌকিদার’ লেখা গেরুয়া টুপি। বেলা সওয়া ১১টা নাগাদ মঞ্চে বিজেপির রাজ্য এবং জেলা স্তরের নেতারা বক্তৃতা করছিলেন। এমন সময়ে চেয়ার উড়ে আসতে শুরু করে দর্শকদের বসার জায়গা থেকে। নেতারা পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছেন যখন, শোনা গেল কেউ কেউ বলছেন, ‘‘চেয়ার সরিয়ে দিলে, অনেকের দাঁড়ানোর জায়গা হবে।’’
এরই মধ্যে আবার অন্য বিপত্তি। মঞ্চ যাঁদের চোখের আড়াল হয়ে গিয়েছে, তাঁদের একাংশ জলের ‘পাউচ’ আর খালি বোতল ছোড়া শুরু করেন। চেঁচিয়েও সামাল দিতে না পেরে পুলিশকর্মী এবং সিভিক ভলান্টিয়ারেরা হাতের ইশারায় জনতাকে বসানোর চেষ্টা করেন।
বেলা পৌনে ১২টা নাগাদ যখন মোদী সভাস্থলে এলেন, তখন নিরাপত্তার জন্য ছেড়ে রাখা জায়গা ভিড়ের দখলে। মোদী বললেন, ‘‘যে যেখানে আছেন, সেখানেই দাঁড়ান। এগোবেন না। দেখুন, মহিলাদেরও সমস্যা হচ্ছে।’’ তাঁর সংযোজন: ‘‘আপনাদের এই বিপুল ভালবাসা দেখে আমি অভিভূত। উন্নয়নের মধ্যে দিয়ে এই ভালবাসার প্রতিদান দেব।’’
ভিড় আর ‘সিকিওরিটি জ়োন’-এর মাঝের ফাঁকে হেলমেট মাথায়, লাঠি হাতে পুলিশ দাঁড়িয়ে। জেলার পুলিশ সুপার আকাশ মাঘারিয়া হন্তদন্ত হয়ে ছুটছেন ঘেরাটোপের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে।
সভার পরে বিজেপির জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আসলে মোদীজিকে দেখার আবেগ থেকেই হট্টগোল হয়েছিল। তবে সভা ভাল ভাবেই শেষ হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy