Advertisement
০৮ মে ২০২৪

নতুন ভোটারেরা স্বস্তিতে রাখেনি কোনও পক্ষকেই

গত পাঁচ বছরে নানা ঘটনায় প্রগাঢ় ছাপ পড়েছে জনজীবনে। কখনও খুশি, কখনও ক্ষোভ, কখনও আশঙ্কা দুলিয়ে দিয়েছে দেশকে। ভোটের মুখে কতটা ফিকে সেই সব ছবি, কতটাই বা রয়ে গিয়েছে পুরনো ক্ষতের মতো? খোঁজ নিচ্ছে আনন্দবাজার। 

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সুস্মিত হালদার
শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০১৯ ০২:৪২
Share: Save:

ধর্ম বা আর্থিক দুর্নীতি নয়, লোকসভা ভোটে নতুন ভোটারদের সমর্থন পাওয়ার ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান প্রধান ফ্যাক্টর হয়ে উঠবে বলে মনে করা হচ্ছে।

বছরে দু’কোটি চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু তাঁর সময়েই নোট বাতিল আর জিএসটির ধাক্কায় কাজ হারিয়েছেন অনেকে। আবার এসএসসি-র মতো অনেক চাকরির পরীক্ষা বন্ধ আছে। প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, ডব্লিউবিসিএসে নিয়োগের ক্ষেত্রে অনিয়ম আর স্বজনপোষণের অভিযোগ আছে এই রাজ্যে। কলেজে অস্থায়ী শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য, সেট-নেট পরীক্ষায় পাশ করে বছরের পর বছর চাকরি না-পাওয়ার মতো বিষয় নিয়েও নতুন প্রজন্মের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। সংখ্যালঘু তরুণ-তরুণীরাও চাইছে শিক্ষা ও চাকরির সুযোগ। ফলে নতুন প্রজন্মের ভোটারদের নিয়ে কোনও দলই স্বস্তিতে নেই।

এর পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলে শাসক দলের স্থানীয় কিছু নেতার দাদাগিরি এবং দুর্নীতি নতুন প্রজন্মের ভোটারদের মধ্যে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। তাই তাঁদের অনেকেই শাসক দলের বিকল্প খুঁজতে শুরু করেছে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মত। সেই বিরুদ্ধ ভোট কার বাক্সে জমা হয় সেটা অবশ্য লাখ টাকার প্রশ্ন। এ বার প্রচারের প্রথম থেকেই বিজেপির মিছিলে যথেষ্ট সংখ্যায় নতুন প্রজন্মের উপস্থিতি নজর কেড়েছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনে বহু জায়গায় ভোট দিতে না-পারা এবং শাসক দলের কিছু নেতার সম্পদ বৃদ্ধি তরুণ ভোটারদের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। ধর্মীয় ভাবাবেগও নতুন ভোটারদের একাংশকে প্রভাবিত করছে।

আবার পঞ্চায়েত ভোটের আগে থেকেই সিপিএমে নতুন প্রজন্মের ঝকঝকে কিছু মুখ দেখা যাচ্ছে। দলের ছাত্র সংগঠন এসএফআই-এর কর্মীরা গিয়েছেন গ্রামে-গ্রামে। পড়ুয়াদের পাশাপাশি অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলেছেন তাঁরা। শিক্ষাক্ষেত্রে অরাজকতা, ভর্তি-দুর্নীতি, পঠনপাঠনের মানের অবনমন, চাকরির আকাল ও চাকরি পাওয়া নিয়ে দুর্নীতির মতো বিষয় নিয়ে তাঁরা কথা বলেছেন, জনমত তৈরি করেছেন। নিজেদের সংগঠনে সেই সময় অনেক নতুন সদস্যকেও টানতে পেরেছেন। তবে ঠিকাদারি থেকে শুরু করে ছোটখাট চুক্তিভিত্তিক কর্মসংস্থানের আশায় নতুন প্রজন্মের একটা অংশ সক্রিয় ভাবেই তৃণমূলের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। বিভিন্ন জায়গায় গড়ে ওঠা নির্মাণ সিন্ডিকেট, অটো-টোটো সংগঠনেও নতুন প্রজন্মের সদস্যেরা অধিকাংশ শাসকদলপন্থী।

চাপড়ার সিপিএমপন্থী পরিবারের অমল ঘোষ তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। এখন বিজেপির পতাকা নিয়ে ঘুরছেন। তাঁর কথায়, “তৃণমূলকে হটাতে হবে। চাকরি নেই। নেতারা ফুলে ফেঁপে উঠছে। দাদাগিরি চালাচ্ছে। এর থেকে মুক্তি চাই। সিপিএম পারবে না। দেখি বিজেপি পারে কিনা।” আবার কৃষ্ণনগরের বাসিন্দা বছর একুশের তন্ময় সরকার বলেন, “আমাদের রাজ্যে ধর্মের নামে বিভাজনের রাজনীতি ছিল না। তৃণমূল আর বিজেপি সেটা আমদানি করছে। ওই দুই দলই কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরিতে ব্যার্থ।” তাঁর ভোট সিপিএমের দিকে।

নতুন প্রজন্ম এ বার সব দিক বিচার করেই রায় দিতে তৈরি হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE