Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

এক ‘অর্জুন’ গৃহবন্দি, ছুটছেন অন্য অর্জুন

প্রসূন বলেন, ‘‘আসলে এই অপমান সহ্য হচ্ছে না। লজ্জা লাগছে। আমি কি চোর না ডাকাত যে এ ভাবে ওঁরা মারবেন? ’’

খড়্গপুরে এক নির্বাচনী সভায় অর্জুন সিংহ। (ডান দিকে) কী ভাবে তাঁকে মারধর করা হয়েছিল, দেখাচ্ছেন       প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার। নিজস্ব চিত্র

খড়্গপুরে এক নির্বাচনী সভায় অর্জুন সিংহ। (ডান দিকে) কী ভাবে তাঁকে মারধর করা হয়েছিল, দেখাচ্ছেন প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার। নিজস্ব চিত্র

দেবাশিস দাশ ও সুপ্রকাশ মণ্ডল
শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০১৯ ০২:৩৫
Share: Save:

দু’জনেই অর্জুন। এক জন নামে। আর এক জন খেতাবে। এক জন ‘বাহুবলী’ পরিচয়ে খুশি। আর এক জন নিজের নামের আগে অর্জুন বসাতে পছন্দ করেন। কারণ তিনি অর্জুন পুরস্কার জয়ী ফুটবল খেলোয়াড়। এক জন ব্যারাকপুরের বিজেপি প্রার্থী অর্জুন সিংহ। অন্য জন, হাওড়া সদরের গত দু’বারের বিজয়ী প্রার্থী তৃণমূল সাংসদ প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়।

গত ৭ মে নির্বাচনের দিন দু’টি ঘটনায় সংবাদ শিরোনামে উঠে এসেছিলেন এই দুই হেভিওয়েট প্রার্থী। অর্জুন সিংহ মানেই যেখানে মারমার-কাটকাট ব্যাপার, সেখানে সোমবার তামাম বাংলা টিভির পর্দায় দেখল, সেই তিনি জনতার ঘায়ে রক্তাক্ত ঠোঁট নিয়ে ছুটলেন দিনভর। কংক্রিটের রাস্তায় পড়ে গিয়ে জখম হলেন। অন্য দিকে, নিজের কেন্দ্রে একটি বুথে ঢুকতে গিয়ে কেন্দ্রীয় বাহিনীর চালানো বেপরোয়া লাঠির ঘায়ে আহত হলেন প্রসূন ও তাঁর ব্যক্তিগত সচিব-সহ দেহরক্ষী। লাঠির ঘায়ে তিন জনের শরীরের বিভিন্ন অংশে কালশিটে পড়ে গেল।

দু’টো ঘটনাই মানুষ টিভির পর্দায় দেখেছেন বা খবরের কাগজে পড়েছেন। কিন্তু অর্জুনকে এ ভাবে দেখার পরে ব্যারাকপুর-সহ বিভিন্ন মহলে ঘুরছে একটাই প্রশ্ন। তা হল, এমন দৃশ্য কি তাঁর দীর্ঘদিনের ইমেজে চিড় ধরাল? ব্যারাকপুরের বিজেপি প্রার্থী যদিও বলছেন, “না না, তা কেন হবে? এক বার পড়ে গেলে কি ইমেজ ঘা খায়? আমার ইমেজ ঠিকই আছে।”

কেন ইমেজ অবিকৃত, সেই ব্যাখ্যাও দিয়েছেন অর্জুন। তিনি বলেন, “কে ভিড়ের মধ্যে থেকে আচমকা হাত চালিয়ে দিল, তাতে কিছু প্রমাণ হয় না। সাহস থাকলে সামনে এসে লড়ত, বুঝে নিতাম। আর আমি যে পড়ে গিয়েছিলাম, তা মার খেয়ে পড়িনি। পা হড়কে গিয়েছিল।’’

সোমবার ভোট মিটে যাওয়ার পরেও অবশ্য ছুটি মেলেনি। অর্জুন এখনও সেই ভোট নিয়েই লড়ে যাচ্ছেন। কারণ, ভাটপাড়া বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন। যে কেন্দ্রের চার বারের বিধায়ক ছিলেন তিনি। তাঁর ছেড়ে আসা কেন্দ্রে এ বার বিজেপি প্রার্থী অর্জুনেরই ছেলে পবন। ছেলেকে নানা সময়ে পরামর্শ দিচ্ছেন। যদিও অর্জুন জানেন যে, লড়াইটা একান্ত তাঁরই। তাই অবসর নেই তাঁর।

অন্য দিকে সোমবারের ঘটনার পরে নির্বাচন শেষ হওয়া পর্যন্ত হাওড়ার বিভিন্ন বুথে যন্ত্রণা নিয়েও ঘুরে বেড়িয়েছেন প্রসূন। কিন্তু মঙ্গলবার থেকে কেমন যেন ‘চুপ’ করে গিয়েছেন তিনি। দলের নেতারা সারা দিন যেমন তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও পারেননি, তেমনই সংবাদমাধ্যমও তাঁর নাগাল পায়নি। এমনকি বুধবারও তাঁর দু’টি ফোনই ছিল বন্ধ।

শেষে মধ্য হাওড়ার সুরকিকলে তাঁর ব্যক্তিগত সচিব ইন্দ্রনীল বসুর বাড়িতে গিয়ে দেখা মিলেছে প্রসূনের। এখনও যথেষ্ট খুঁড়িয়ে হাঁটছেন। বললেন, ‘‘ওষুধ চলছে। ব্যথা যেন বেড়েই চলেছে। বাঁ পায়ে আর কোমরের নীচে এত মেরেছে যে বসতেও কষ্ট হচ্ছে।’’

কিন্তু ফোন বন্ধ করে আত্মগোপন কেন? প্রসূন বলেন, ‘‘আসলে এই অপমান সহ্য হচ্ছে না। লজ্জা লাগছে। আমি কি চোর না ডাকাত যে এ ভাবে ওঁরা মারবেন? লোকজন বারবার ফোন করে মারধরের ঘটনাটা জানতে চাইছে। তাই ফোনটা বন্ধ রেখে চুপ করে থাকতে চেয়েছি।’’

প্রসূনের দাবি, তিনি ভোটের দিন কেন্দ্রীয় বাহিনীর সঙ্গে কোনও অভব্য ব্যবহার করেননি বা খারাপ কথা বলেননি। তা সত্ত্বেও তাঁকে মারা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘শরীরের ব্যথা হয়তো কমে যাবে কিন্তু মনের ব্যথা কমবে না। নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানানোর পাশাপাশি আমি ওঁদের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করবই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE