হুইল চেয়ারে ভোট। নিজস্ব চিত্র
দুধ সাদা পাজামা-পাঞ্জাবি। চোখে হালকা ফ্রেমের চশমা। পায়ে স্নিকার। ডান হাতে ধরা ভোটার কার্ড। হাসি মুখে ঠিক আগের মতোই সকাল সকাল তিনি হাজির ভোট কেন্দ্রে। তফাৎ শুধু একটাই, হেঁটে নয় অসুস্থ পুণ্ডরীকাক্ষ সাহা এ বার ভোট দিতে এলেন হুইলচেয়ারে বসে।
সোমবার সকাল। ঘড়িতে তখনও ন’টা বাজেনি। নবদ্বীপের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ৮৪ নম্বর বুথে ভোটারদের লম্বা লাইন তখন তাঁত কাপড় হাটের চত্বর ছাড়িয়ে রাস্তায় পৌঁছে গিয়েছে। এমন সময় ভোটকেন্দ্রে হাজির তিনি। তাঁর নির্দেশে হুইলচেয়ার গিয়ে থামল অপেক্ষমান জনতার সারির একেবারে পিছনে। হাসপাতাল-বন্দি পুণ্ডরীকাক্ষ সাহা ওরফে নন্দ সাহাকে ভোটের লাইনে দেখে তখন অনেকে অবাক। গত কয়েক মাস যাবত তিনি অসুস্থ হয়ে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সেই মানুষকে ভোট দেওয়ার জন্য আসতে দেখে বিস্মিত অনেকে।
সম্বিৎ ফিরতেই হইহই করে উঠল সকলে। ‘নন্দ দা, আপনি আগে ভোট দিয়ে আসুন।’ চড়া রোদে আধঘণ্টা, পঁয়তাল্লিশ মিনিট ধরে অপেক্ষা করা ভোটারের দল তত ক্ষণে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে তাঁকে জায়গা ছেড়ে দিতে। সকলের অনুরোধে তাঁর হুইলচেয়ার এগিয়ে গেল। লোহার গেটওয়ালা তাঁত কাপড় হাটের বিশাল চত্বরের ভিতরে বুথে ভোট দিতে ঢুকলেন নন্দ সাহা।
তত ক্ষণে তাঁর ভোট দিতে আসার খবর চাউর হয়ে গিয়েছে। একশো মিটারের নিষেধাজ্ঞা ভুলে অনেকেই জড়ো হতে শুরু করেছেন সামনের রাস্তায়।
মিনিট দশেক পর তিনি ভোট দিয়ে বেরিয়ে আসতে কয়েক জন ভোটের লাইন ছেড়ে প্রণাম করার জন্য এগিয়ে যেতেই মৃদু ধমক দিয়ে তাঁদের লাইনে ফেরত পাঠালেন। ভোট কেন্দ্র ছেড়ে ততক্ষণে ধীর গতিতে বাড়ির দিকে এগোতে শুরু করেছেন তিনি। তাঁকে ঘিরে রয়েছেন একদল লোক। চলছে কুশল বিনিময়। কে কেমন আছেন তার খোঁজখবর নেওয়া। খানিকটা গিয়ে একটু ছায়া দেখে দাঁড়ালেন। তাঁকে ঘিরে ভিড়ের বৃত্তটা ঘন হয়ে এল।
কথার ফাঁকে জানালেন বুধবার ফের কলকাতা চলে যাবেন। এখনও টানা দু’মাস থাকতে হবে এসএসকেএমে হাসপাতালের উডবার্ন ওয়ার্ডে। অন্য শারীরিক সমস্যা কমলেও হাঁটাচলায় সমস্যা রয়েছে। তার জন্য লম্বা ফিজিওথেরাপি চলবে যা হাসপাতালে ভর্তি না থাকলে করা অসম্ভব। চিকিৎসকেরদের বিশেষ অনুমতি নিয়ে ভোট দিতে এসেছিলেন তিনি। যাতে বেশি ধকল না পড়ে সে জন্য একদিন আগেই নবদ্বীপে চলে আসেন নন্দ সাহা।
নবদ্বীপে ভোটের ফল কেমন হবে জানতে চাইলে অটুট আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে দু আঙুলে ‘ভি’ দেখিয়ে নিজস্ব ভঙ্গিতে বলেন, “নবদ্বীপের মানুষের উপর আমার বিশ্বাস আছে। এ বারে ফল আরও ভাল হবে।” এই প্রচণ্ড গরমে, শরীরের এই অবস্থার মধ্যে ভোট দিতে আসার ঝুঁকি নিলেন কেন?
নন্দর জবাব, “এ বারের নির্বাচন বাংলা এবং গোটা ভারতের নিরিখে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। তাই সকলেরই ভোট দেওয়াটা খুব জরুরি।”
বুধবার ফিরে যাওয়ার আগে কঠিন এক হোমটাস্ক দিয়ে গেলেন প্রতিটি বুথ এবং ওয়ার্ডের দায়িত্ব প্রাপ্ত নেতাদের। প্রত্যেককে তাঁর বুথ এবং ওয়ার্ড থেকে সম্ভাব্য কত ভোট পেতে পারেন তার আগাম হিসাব দিতে হবে লিখিত আকারে। এবং সেই হিসাব মিলিয়ে দেখা হবে ফল বার হওয়ার পর। নিখুঁত হিসাবের নিরিখে মিলবে পুরষ্কার। আপাতত সেই হিসাবেই মশগুল কর্মীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy