Advertisement
১৮ মে ২০২৪
general-election-2019-west-bengal

কয়লা মাফিয়াকে প্রার্থী করেছে তৃণমূল: মোদী

বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ার রাঙামাটিতে কয়লা মাফিয়াকে ঘিরে বিতর্ক বহু দিনের। রাঢ়বঙ্গের ওই দুই কেন্দ্রে ভোটের তিন দিন আগে জোড়া সভা থেকে মাফিয়া-তৃণমূল আঁতাঁতের অভিযোগ নিয়ে সরব হলেন মোদী।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

সন্দীপন চক্রবর্তী
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ১০ মে ২০১৯ ০২:৪৫
Share: Save:

লোকসভা ভোট যত শেষের দিকে এগোচ্ছে, বাংলায় তৃণমূলের প্রতি নরেন্দ্র মোদীর আক্রমণ তত তীব্র হচ্ছে। রাঢ়বঙ্গের দুই জেলা বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ায় এসে প্রধানমন্ত্রী এ বার রাজ্যের শাসক দলকে নিশানা করলেন কয়লা মাফিয়াদের সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগ এনে। তাঁর অভিযোগ, কয়লা মাফিয়ারা বাংলার সরকারের অংশীদার হয়ে উঠেছে! মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘গণতান্ত্রিক থাপ্পড়’ মন্তব্যও হাতিয়ার হল প্রধানমন্ত্রীর। কটাক্ষ করেই তিনি বলে গেলেন, ‘‘দিদির থাপ্পড় আমার জন্য আশীর্বাদ হবে!’’

বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ার রাঙামাটিতে কয়লা মাফিয়া-চক্র ঘিরে বিতর্ক বহু দিনের। ওই দুই কেন্দ্রে ভোটের তিন দিন আগে জোড়া সভা থেকে মোদী এ বার মাফিয়া-তৃণমূল আঁতাঁত নিয়ে সরাসরি সরব হয়েছেন। বাঁকুড়ায় তিনি বলেছেন, ‘‘এই এলাকার কয়লা খাদানে তৃণমূলের মাফিয়ারা কী রকম কারবার চালাচ্ছে, আপনারা ভাল জানেন। মাফিয়ারা তৃণমূলকে টাকা পাঠাচ্ছে। অথচ কয়লা থাদানের মজদুরেরা মজুরি পাচ্ছেন না।’’ পরে পুরুলিয়ায় তাঁর সংযোজন, ‘‘এই এলাকা কালো সোনার উপরে দাঁড়িয়ে আছে। তৃণমূল সেখানে মাফিয়াদের নিয়ে চলছে। তাদের সরকারের অংশীদার করে ফেলা হয়েছে।’’ স্থানীয় মানুষের মন পেতে এর পরে বাংলায় প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য, ‘‘মাফিয়া, অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ে রাজনীতি করতে এই সরকার এত ব্যস্ত যে, আদিবাসী-জনজাতিদের দিকে মন নেই।’’

গত কয়েক দিনে নানা প্রচার-সভা থেকে মোদীর বিরুদ্ধে ক্রমাগত সুর চড়িয়েছেন মমতা। বাঁকুড়ার কমলাডাঙা ও পুরুলিয়ার রায়বাঘিনী ময়দানে প্রবল দাবদাহের মধ্যেও উপচে পড়া ভিড়ের সামনে বৃহস্পতিবার মোদী বোঝাতে চেয়েছেন, রাজ্যপাটে টান পড়ার দুশ্চিন্তা থেকেই মুখ্যমন্ত্রীর ভাষা লাগামছাড়া হচ্ছে। মাফিয়া-প্রসঙ্গের সঙ্গেই প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য, ‘‘মোদী এই কথাগুলো বলে বলেই দিদির রাগ হয়ে যায়! দেশের ১৩০ কোটি মানুষের ভালবাসা মোদীর সঙ্গে আছে। দিদির বরং বাংলার কোটি কোটি মানুষের হতাশা, ক্রোধ নিয়ে চিন্তা করা উচিত। দিদির দলের দাদাগিরি, বাংলায় গুন্ডাতন্ত্র কত দিন চলবে?’’

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ বাংলায় এসে তৃণমূলকে ‘তোলাবাজ, সিন্ডিকেটের দল’ বলে আক্রমণ করছেন এবং তার জেরে তাঁদের ‘গণতান্ত্রিক থাপ্পড় দেওয়ার কথা বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। কটাক্ষ ফিরিয়ে মোদী এ দিন বাঁকুড়ায় বলেছেন, ‘‘দিদি এত হয়রান হয়ে আছেন, তাঁর ভাষা থেকে আন্দাজ পাওয়া যাচ্ছে! আমাকে পাথর পাঠানোর কথা বলেন, থাপ্পড় মারতে ওঁর মন চায়। মোদী তো সব রকম গালি হজম করার শক্তি অর্জন করে ফেলেছে।’’ পরে পুরুলিয়ায় যোগ করেছেন, ‘‘দিদি, থাপ্পড় আমার জন্য আশীর্বাদ হবে। কিন্তু চিট ফান্ডে যারা লক্ষ লক্ষ টাকা লুট করেছে, যারা তৃণমূল-তোলা-ট্যাক্স (টিটিটি) তুলছে, তাদের যদি থাপ্পড় মারার হিম্মত দেখাতেন, তা হলে কালি আপনার গায়ে লাগত না! এত রাগও আপনার হতো না!’’

ইদানীং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বলছেন, মোদীর তৃণমূলের ব্লক সভাপতি বা কাউন্সিলর হওয়ারও যোগ্যতা নেই। বাঁকুড়়ার তামলিবাঁধ ময়দানে এ দিনও মমতা বলেছেন, ‘‘ছিল চা-ওয়ালা। কাউন্সিলর হওয়ার যোগ্যতা নেই, টাকা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী হয়ে গিয়েছে।’’ প্রধানমন্ত্রীর পাল্টা দাবি, ‘‘দিদির আস্থা নেই সংবিধানেও। প্রকাশ্যে বলছেন, প্রধানমন্ত্রীকে মানেন না! ঘূর্ণিঝড়, দুর্যোগের পরে দেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলা উচিত বলে তাঁর মনে হয় না। ক্ষয়ক্ষতি বোঝার জন্য ভারত সরকার আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক ডাকলেও তিনি তাঁদের যেতে দিতে অস্বীকার করেন। এই অহঙ্কার দিদিকে নিয়ে ডুববে!’’

এর সঙ্গেই মোদীর খোঁচা, ‘‘দেশের প্রধানমন্ত্রীকে মানেন না। কিন্তু পুলওয়ামা, বালাকোটের পরে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীকে প্রধানমন্ত্রী বলতে তাঁর গর্ব হয়!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE