কুলতলির গ্রামে খোদাবক্সের পরিবার। ছবি: দিলীপ নস্কর
পঞ্চায়েত ভোটের দিন ব্যস্ত ছিল ছেলে। দল দায়িত্ব দিয়েছিল, ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাঁদের অটোয় করে বুথে আনতে হবে। নিজের বৃদ্ধ বাবা-মাকেও সে ভাবে ভোট দিতে নিয়ে গিয়েছিলেন কুলতলির বালিরচকের বাসিন্দা আরিফ আলি গাজি। বাবা-মাকে বাড়িতে ছেড়ে ফের বেরোন কাজে। আর ফেরেননি। খবর আসে, বুথে গন্ডগোল চলাকালীন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন আরিফ। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই মারা যান।
সেই থেকে বৃদ্ধ খোদাবক্স গাজির আরও চার ছেলে, আরিফের দাদারা বাড়ি ছেড়েছেন। তৃণমূল সমর্থক পরিবারের উপরে ফের হামলা হতে পারে বলে তাঁদের আশঙ্কা। কেন এমন আশঙ্কা? খোদাবক্স জানান, মারা যাওয়ার আগে চার ভাইকে আততায়ীদের নাম বলে গিয়েছিল ছেলে। সেই থেকে চার ছেলের মনে ভয় ঢোকে, তাদের উপরে না আক্রমণ ঘনিয়ে আসে!
খোদাবক্স ও তাঁর স্ত্রী ফতেমা থাকেন ছোট ছেলে অরিফুলের সঙ্গে। খোদাবক্স দেখালেন, চার ছেলে যে খুপরি ঘরগুলোয় থাকত, সেগুলো এখন কেমন সুনসান পড়ে আছে। অভাবের সংসার না চলার মতো করেই চলে। খোদাবক্স নিজে দিনমজুরির কাজ করেন। হতাশ গলায় বললেন, ‘‘ছ’ছটা ছেলে যার, তাকেও এই বয়সে কাজ করে খেতে হচ্ছে।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
তাঁদের পরিবার তৃণমূলের সমর্থক, নিজেই জানালেন খোদাবক্স। ছেলের মৃত্যুর পরে সরকার ক্ষতিপূরণের চেক দিয়েছিল। কিন্তু আরিফের স্ত্রী সেই টাকা পেয়ে আর শ্বশুরের ভিটেমুখো হননি, জানালেন বৃদ্ধ। ছোটছেলে অরিফুল দর্জির কাজ করেন। সামান্য রোজগার। বাপ-বেটার চেষ্টায় কোনও মতে সংসার চলে। ফতিমা প্রায় শয্যাশায়ী। শীর্ণ শরীরটা বিছানার সঙ্গে মিশে গিয়েছে। ছেলের মৃত্যুর পর থেকে মুখে কার্যত কোনও কথা জোগায় না বৃদ্ধার। খোদাবক্স বলেন, ‘‘ডাক্তার বলেছে নার্ভের অসুখ। কিন্তু ওষুধ কেনার টাকা জোটে না। কোনও রকমে দু’বেলা দু’মুঠো ভাত খাই।’’ খোদাবক্স বলেন, ‘‘ভোটের আগে নেতাদের দেখা মেলে। সারা বছর কেউ খোঁজ করে না।’’
তা হলে ভোটটা দিতে যাবেন তো?
এত কষ্টের মধ্যেও শুকনো হাসি খোদাবক্সের মুখে। বললেন, ‘‘আমাদের এখানে ভোট দিতে যেতে হয় না। বাড়ি থেকে নিয়ে গিয়ে ভোট দিয়ে আনে। ভোটের দিন আমাদের খোঁজ ঠিকই পড়বে।’’
‘‘তারপর আর কেউ কোনও খোঁজ নেবে না’’— বললেন খোদাবক্স। যেন সার কথা বুঝে নিয়েছেন বৃদ্ধ!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy