ভাল রেজাল্ট হোক বা কোনও উৎসব— উপহারের তালিকায় থাকত বইয়ের চাহিদা। অবসর সময়ে তো বটেই, বইয়ের দোকানে গিয়েও পাতা উল্টে দেখতে ভালবাসেন তিনি। সেটাই তার নেশা। বইকে সর্বক্ষণের সঙ্গী করেই এ বারের আইএসসি পরীক্ষায় দেশে তৃতীয় স্থান পেলেন বোলপুর মকরমপুরের সেন্ট টেরেজা স্কুলের ছাত্র তিয়াস সাহু। তাঁর এই ফলে স্কুলের পাশাপাশি বাবা-মা, বন্ধুরা সকলেই খুশি।
রেজাল্ট বেরনোর পর তিয়াসের প্রতিক্রিয়া, ‘‘এই ফল যে হবে আশা করেছিলাম। তাই আলাদা করে কোনও উচ্ছ্বাস নেই। এর পরের ধাপে কী ভাবে এগোব তাই নিয়েই চিন্তা করছি।’’ ভবিষ্যতে গবেষণা করতে চান তিনি। আপাতত অর্থনীতি বিষয়েই স্নাতক পড়ার কথা ভাবছেন তিয়াস।
আইএসসি পরীক্ষায় মোট ৪০০ নম্বরের মধ্যে তিয়াস পেয়েছে ৩৯৮। তার বিষয়ভিত্তিক নম্বর হল, ভূগোল ১০০, সমাজবিদ্যা ১০০, ইংরেজি ৯৯, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ৯৯, গণিত ৯৯, অর্থনীতি ৯৭। সর্বোচ্চ চারটি বিষয়ের নম্বর যোগ করে মোট নম্বর ঠিক করা হয়েছে। তার ভিত্তিতেই দেশে তৃতীয় স্থান পেয়েছেন তিনি। এর আগে ২০১৭ সালে আইসিএসই পরীক্ষায় দেশে পঞ্চম হয়েছিলেন তিয়াস। সে বারও পশ্চিমবঙ্গে তৃতীয় স্থান ছিল তার।
ভাল রেজাল্ট করার ধারা এ ভাবে ধরে রাখায় খুশি তিয়াসের বাবা গোকুল সাহু। তিনি লাভপুর শম্ভুনাথ কলেজের গণিতের অধ্যাপক। গোকুলবাবুর কথায়, ‘‘দশম শ্রেণির পরীক্ষায় ভাল রেজাল্ট করার পরে তিয়াস যখন কলাবিভাগে পড়তে চেয়েছিল তখন আমরা কোনও ভাবেই ওকে বাধা দিইনি। একই ভাবে দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষাতেও ও ভাল ফল করেছে। আমরা খুশি।’’ যদিও ছেলে গণিতে ১০০ না পাওয়ায় কিছুটা মনমরা হয়েছেন গোকুলবাবু। তিয়াসের মা শতাব্দী মজুমদার সাহু সেন্ট টেরেজা স্কুলেরই বাংলার শিক্ষক। তিনি বললেন, ‘‘ছেলের এই রেজাল্টে স্কুলের সহযোগিতা আমরা কোনও দিন ভুলব না। প্রত্যেক পড়ুয়ার দিকেই এই স্কুল খুব ভাল ভাবে নজর দেয়।’’
এই কথা স্বীকার করেছেন তিয়াস নিজেও। তিনি জানান, স্কুলের বাইরে একগুচ্ছ টিউশন পড়তে হয়নি তাঁকে। দু’জায়গায় শুধু আলাদা করে পড়তেন। এর বাইরে স্কুলেই বিভিন্ন সময় মক-টেস্ট, একাধিক পরীক্ষার ফলে বোর্ড পরীক্ষার জন্য কোনও ভয় ছিল না তাঁর। পড়ারও কোনও নির্দিষ্ট সময় বা নিয়ম ছিল না। যখন ইচ্ছা করত, যে বিষয় নিয়ে পড়তে ইচ্ছা করত, সে ভাবেই পড়তেন। সামনের বছরের পরীক্ষার্থীদের জন্য তাঁর একটাই বার্তা, ‘‘বোর্ডের রেজাল্টটা কোনও বিষয় নয়। জীবনে লক্ষ্য স্থির করতে হবে। সেই লক্ষ্যে পৌঁছনোর জন্য যতটা সম্ভব চেষ্টা করতে হবে।’’
তিয়াসের বাবা-মারও ছেলেকে নিয়ে কোনও উচ্চাকাঙ্খা নেই। তাঁদের কথায়, ‘‘ছেলে ভাল মনের মানুষ হোক, সেটাই চাইব।’’
তিয়াসের এই ফলে খুশি তার স্কুলও। স্কুলের অধ্যক্ষ সিস্টার অর্চনা ফার্নান্ডেজ বলেন, ‘‘খুবই ভাল লাগছে যে আমাদের ছাত্র দেশে তৃতীয় হয়েছে। আমাদের অন্য পড়ুয়ারাও ওর থেকে অনুপ্রেরণা পাক।’’
দ্বাদশ শ্রেণিতে তিয়াসের শ্রেণিশিক্ষক ছিলেন সুজাতা দাস রায়। তাঁর কথায়, ‘‘পরীক্ষায় খাতা পাওয়ার পরে থেকে জমা দেওয়া পর্যন্ত ওকে কখনও মাথা তুলতে দেখিনি। ভীষণ বাধ্য, সংযমী ছেলে। পড়াশোনায় ভাল তো বরাবরই।’’ যে ইনস্টিটিউশনে তিয়াস পড়ত, সেই ইনস্টিটিউশনের পক্ষে শিক্ষক তারক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, ‘‘স্কুলের পাশাপাশি আমাদের প্রতিষ্ঠানও ওর এই ফলে গর্বিত।’’