কাটেনি-আতঙ্ক: হাসপাতালে স্বপন ভৌমিক। নিজস্ব চিত্র
অসংলগ্ন কথা বললেও নিজের নাম ঠিক মতো বলেন। মানসিক সমস্যা থাকলেও মনে রাখতে পারেন অনেক ঘটনাই।
দিন সাতেক আগের ঘটনা বলতে গিয়ে এখনও কেঁপে উঠছেন বছর ছেচল্লিশের স্বপন ভৌমিক। অ্যাসিডে পুড়ে গিয়েছে মুখের বেশির ভাগ। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে একটা চোখ।
ওই রাতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পথ ভুলে আর ফিরতে পারেননি স্বপন। একদল লোক ঘিরে ফেলে তাঁকে। তার পরে মারধর, শেষে মুখে অ্যাসিড ছোড়া হয়। এই মুহূর্তে যাঁকে পাচ্ছেন, একটাই প্রশ্ন করছেন স্বপন। ‘‘আচ্ছা, বলুন তো, আমি কি ছেলেধরা?’’ তার পরে নিজেই বিড়বিড় করছেন, ‘‘ওরা বলল, আমি নাকি চোর, ছেলেধরা।’’
বুধবার খবরের কাগজে ভাই নিখোঁজ হওয়ার বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন সোনারপুরের বাসিন্দা শৈবাল ভৌমিক। শেষে হ্যাম রেডিয়ো ক্লাবের সাহায্যে ডায়মন্ড হারবার হাসপাতাল থেকে ফিরে পেয়েছেন স্বপনকে।
আরও পড়ুন: ভয়ঙ্কর গুজব ছড়ানো হচ্ছে রাজ্যের কিছু জায়গায়, সতর্ক থাকুন, এ সবই মিথ্যে
স্বপন সোনারপুরের নবতারা স্কুল রোডের বাসিন্দা। শৈবাল জানান, কলেজ জীবনেই ভাইয়ের মানসিক সমস্যা ধরা পড়েছিল। নিয়মিত চিকিৎসা হয় এখন। কিন্তু মাঝেমধ্যেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান স্বপন। ক’দিন পরে ফিরে আসেন। কিন্তু ৫ ফেব্রুয়ারি সকালে বেরিয়ে আর বাড়ি ফেরেননি তিনি। দু’দিন পরে, ৭ তারিখ সোনারপুর থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন শৈবাল।
ডায়মন্ড হারবার সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, দিন পাঁচেক আগে স্থানীয় কয়েক জন বাসিন্দা স্বপনকে হাসপাতালে ভর্তি করেন। তখন প্রায় অচেতন ছিলেন তিনি। হাসপাতাল সূত্রের খবর, স্বপনের মুখ অ্যাসিডে পুড়ে গিয়েছিল। মারধরে জখম হয়েছিলেন তিনি। দিন তিনেকের চিকিৎসায় কিছুটা সুস্থ হলেও ঠিকানা জানাতে পারেননি। তবে রাজপুরের কথা কখনও কখনও বলতেন। শেষ পর্যন্ত হ্যাম রেডিয়ো ক্লাবকে বিষয়টি জানান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিয়ো ক্লাবের সম্পাদক অম্বরীশ নাগবিশ্বাস জানান, তাঁরা রাজপুরের কথা শুনে সোনারপুর থানায় খবর নিয়ে স্বপনের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি জানতে পারেন। মঙ্গলবার রাতে শৈবালের বাড়ি গিয়ে তাঁকে স্বপনের ছবি দেখান। চিনতে পারেন বাড়ির লোকজন। বুধবার সকালে হাসপাতালে গিয়ে ভাইকে ফিরিয়ে আনেন শৈবাল।
শৈবালের কথায়, ‘‘ভাইয়ের কথা শুনে বুঝতে পারছি, ছেলেধরা বা চোর সন্দেহে ওকে পেটানো হয়েছে। মুখে অ্যাসিড ঢালা হয়েছে।’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘স্রেফ সন্দেহের বশে এ ভাবে কি আইন হাতে নেওয়া যায়? ওর সঙ্গে কথা বললেই তো যে কেউ বুঝতে পারত, ওর মানসিক সমস্যা আছে।’’
আনন্দবাজারের বক্তব্য, গুজবে কান দেবেন না। গুজব ছড়াবেনও না। ভুয়ো খবর, ছবি এবং ভিডিয়ো শেয়ার করা কিন্তু আইনের চোখে অপরাধ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy