শাস্তি না দেওয়ার অনুরোধ করে ভোটকেন্দ্রের পরিকাঠামো তৈরিতে নিজেদের অপারগতার কথাই জানিয়ে দিল পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অধীনস্থ ম্যাকিনটোশ বার্ন লিমিটেড। রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের (সিইও) দফতরকে লিখিত ভাবে ওই সংস্থা জানিয়েছে, তারা ইচ্ছাকৃত ভাবে নিজেদের সরিয়ে নিচ্ছে এমন নয়। সংস্থার বর্তমান পরিকাঠামোয় রাজ্য জুড়ে থাকা প্রায় ৮১ হাজার ভোটকেন্দ্রের পরিকাঠামো নির্মাণের কাজ স্বল্প সময়ের মধ্যে করা সম্ভব নয়। বিষয়টি সংস্থার বোর্ড অব ডিরেক্টরস-এর বৈঠকে জানানো হয়েছিল বলেও জানিয়েছে সংস্থা।
কলকাতা-সহ বিভিন্ন জায়গায় নানা স্থাপত্য শতাব্দীপ্রাচীন এই সংস্থার মুকুটে একের পর এক পালক যোগ করেছে। ফলে প্রশ্ন উঠছে, সংস্থার সেই দক্ষতা কি এখনও বজায় আছে! আবার রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা তৃণমূল নেতা শঙ্কর চক্রবর্তী সংস্থার বোর্ড অব ডিরেক্টরস-এর চেয়ারম্যান।
এই সিদ্ধান্তের নেপথ্যে রাজনৈতিক কোনও তাৎপর্য থাকতে পারে কি না, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়েও। গত শনিবার যোগাযোগ করা হয়শঙ্কর চক্রবর্তীর সঙ্গে। মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত তিনি ফোন ধরেননি, জবাব দেননি এ নিয়ে পাঠানো মোবাইল-বার্তারও।
বিধানসভা ভোটের আগে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে উপযুক্ত পরিকাঠামো (পানীয় জল, প্রবীণ ও বিশেষ ভাবে সক্ষম ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে প্রবেশের জন্য ঢালু পথ, ছাউনি, ভোট-কক্ষের প্রয়োজনীয় সংস্কার, দরজা-জানলার সুরক্ষা ইত্যাদি) প্রস্তুত করতে অর্থ দফতরের সম্মতিতে ম্যাকিনটোশকে দায়িত্ব দিয়েছিল সিইও দফতর। কিন্তু সেই দায়িত্ব পাওয়ার মাস তিনেকের মাথায় সংস্থা জানিয়ে দেয়, সে কাজ তারা করতে পারবে না। সিইও কার্যালয় পাল্টা হুঁশিয়ারি দেয়, সংস্থার আধিকারিকদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ হবে। আর্থিক জরিমানা এবং দরকারে কালো তালিকাভুক্তও করা হতে পারে সংস্থাকে। সংস্থার পর্ষদ-কর্তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি পদক্ষেপও করতে পারে কমিশন।
জবাবে সিইও দফতরকে সংস্থা লিখিত ভাবে জানিয়েছে, তাদের পরিকাঠামোয় গোটা কাজের সমীক্ষা, খরচের হিসাব, নির্মাণ-সামগ্রী সংগ্রহ, এজেন্সি নিয়োগ এবং নির্মাণ-কাজ করা সম্ভব নয়। তাদের ইচ্ছাকৃত অবহেলা, উদ্দেশ্য বা ইচ্ছার অভাব, আইন ভাঙার মনোভাব এর নেপথ্যে নেই। কোনও চুক্তি বা আলোচনা চূড়ান্ত না হওয়ায় সংস্থার বিরুদ্ধে চুক্তিভঙ্গের অভিযোগ ওঠাও অনুচিত। তাই সংস্থা অথবা তার আধিকারিকদের বিরুদ্ধে আর্থিক বা শাস্তিমূলক কোনও পদক্ষেপ না করার আর্জি জানিয়েছে ম্যাকিনটোশ। বোর্ড-অব-ডিরেক্টরসের বৈঠক ডেকে বিষয়টি যে জানানো হয়েছে, এই সূত্রে তা-ও স্পষ্ট করে দিয়েছে সংস্থা।
প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, “নির্দিষ্ট জায়গায় কোনও স্থাপত্য তৈরিতে সমস্যা হয় না। কিন্তু গোটা রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা পরিকাঠামো তৈরিতে যত লোকবল প্রয়োজন, তা নেই সংস্থার।” তবে আধিকারিকদের কেউ কেউ বলছেন, “গত জুলাইয়ে সংস্থাকে যখন এই কাজের কথা বলা হয়েছিল, তখনও তো এই পরিস্থিতিই ছিল। তখন কেন সংস্থা আপত্তি করেনি।”
বহু বিখ্যাত ভবন এবং সেতু তৈরির সঙ্গে প্রাক-স্বাধীনতা যুগের এই সংস্থার নাম জড়িয়ে রয়েছে। রাজ্যের তরফে পরিকাঠামো উন্নতির দাবিতেও জুড়ে যায় এই সংস্থার ভূমিকা। বহু ধরনের কাজের বরাতও পেয়ে আসছে তারা। সেখানকার ইঞ্জিনিয়রদের অভিজ্ঞতাও প্রশাসনে প্রশংসিত। সেই তুলনায় ভোটকেন্দ্রগুলির পরিকাঠামো-সমীক্ষা এবং নির্মাণের কাজ নেহাতই সামান্য। অভিজ্ঞতা এবং পরিকল্পনার হাত ধরেই তা অনায়াসে উতরে দেওয়া সম্ভব বলে মনে করেন আধিকারিকদের অনেকে।
কমিশন সূত্রের বক্তব্য, যে সময়ে সংস্থা দায়িত্ব পেয়েছিল, তখন থেকে আগামী ভোট হতে অন্তত মাস সাতেক সময় ছিল। যা বোর্ড অব ডিরেক্টরস-এর অজানা থাকারও কথা নয়। তাই প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত শুধুই প্রশাসনিক ছিল কি না, তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। কমিশনের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে, এখনও অস্পষ্ট তা-ও।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)