বেঁচে গিয়েছিলাম বরাত জোরে। ১৯৯২ সালের ২ নভেম্বর বিকেল তিনটে হবে, বিডিও অফিসে জমায়েতে আমরা সবাই রয়েছে। প্রায় হাজার দশেক মানুষ। প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে আগেই কথা হয়েছিল, পুলিশের দু’টি ব্যারিকেড থাকবে, তাও জানতাম। প্রথম ব্যারিকেডটা পঞ্চায়েত অফিসের কাছে থাকার কথা ছিল। মিছিলের সামলের সারিতেই ছিলাম আমরা।
প্রথম ব্যারিকেডে পুলিশ আমাদের বাধা না দেওয়ায় মিছিল এগিয়ে গেল বিডিও অফিসের দিকে। আমি, ইমামুজ্জিন মাস্টার, সত্য মাস্টার (সত্যপদ ঘোষ), মন্টু খান, নিয়ামত, আসরাফ— সকলেই ছিলেন। বিডিও অফিসে পৌঁছে দেখলাম পুলিশে ছয়লাপ। ছিল ইএফআর-ও। তারাই আমাদের বিডিও অফিসে ঢুকতে বাধা দিল প্রথম। শুরু হল পুলিশের সঙ্গে সামান্য ধস্তাধস্তি। হঠাৎই বিডিও অফিসের সামনে একটি বাড়ির ছাদ থেকে একটি ইটের টুকরো এসে পড়ল এক ইএফআর জওয়ানের ঘাড়ে। তখন বিকেল ৩টে পাঁচ মিনিট। হঠাৎ কেউ এক জন বলে ওঠে ফায়ার। কিছু বুঝে ওঠার আগেই কানে এল ফটফট করে ঠাণ্ডা পানীয়ের বোতল খোলার মতো শব্দ। চোখের সামনে দেখলাম শঙ্কর আর রাজ্জাক মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন। আমি তখনও বুঝিনি কেন ওঁরা পড়ে গেলেন। কেউ এক জন চেঁচিয়ে বলল, ‘গুলি, গুলি চলছে’, বুঝলাম মারাত্মক ব্যাপার হয়ে গিয়েছে। তখনও বিক্ষিপ্ত গুলির আওয়াজ।
আমার সামনেই বাকিরা একে একে লুটিয়ে পড়ছেন, মনে আছে। আমনার যে কেন লাগল না গুলি, তা ভেবে কুল পাই না এখনও। হঠাৎই দেখি, এক ইএফআর জওয়ান আমার দিকে বন্দুক তাক করে আছে। সঙ্গে সঙ্গে আমার নিরাপত্তারক্ষী পাল্টা রিভলভার বের করে তাকে নিরস্ত্র করে। তারপর আমাকে টেনে নিয়ে গিয়ে পুলিশের প্রিজন ভ্যানে তুলে দেয়। চার দিকে তখন কাঁদানে গ্যাস, আর বারুদের গন্ধ। পুলিশ তিন চাকার ভ্যানে শঙ্কর, শচীনদের দেহগুলি তুলে নিয়ে সরিয়ে দিল। ২ নভেম্হর বললে এখনও মনে পড়ে, চোখের সামনে এখনও ভাসে নিয়ামত যন্ত্রণায় ছটফট করছে।