Advertisement
E-Paper

শুভেচ্ছার হিড়িকে ‘মহালয়া’ কম্পমান এ বারেও

ধর্ম বিষয়ক প্রাবন্ধিক চৈতন্যময় নন্দ আবার তর্পণের মন্ত্রের শুভ ভাবটিকে শুভেচ্ছার বার্তাবহ বলেই ধরছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৩:২৯
করোনা-কালে মহালয়ায় পিপিই পরেই তর্পণ করাচ্ছেন পুরোহিত। তর্পণকারীরা অবশ্য অনেকেই বিধি মানেননি। বৃহস্পতিবার হাওড়ার তেলকল ঘাটে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

করোনা-কালে মহালয়ায় পিপিই পরেই তর্পণ করাচ্ছেন পুরোহিত। তর্পণকারীরা অবশ্য অনেকেই বিধি মানেননি। বৃহস্পতিবার হাওড়ার তেলকল ঘাটে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

এ বাঙালির বচ্ছরকার তর্ক। এবং ‘আবার সে এসেছে ফিরিয়া’!

‘শুভ না কি শুভ নয়’ বিশ্লেষণে তাই চলছে সূক্ষ্ম বিচারের কাটাছেঁড়া। এবং শুভেচ্ছারও বলিহারি! রাত ১২টায় মধ্যরাতে বর্ষবরণের আমেজেই ফোনে ঢুকতে শুরু করেছে শুভেচ্ছার ঢল। ‘শুভ মহালয়া’ থেকে ‘হ্যাপি মহালয়া’! মহালয়া আর নতুন বছরে ফারাক নেই! যেন ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’ সম্ভাষণে বিগলিত চিত্ত।

এই শুভেচ্ছা-ভার বহন করতে কখনও বা মনে হয়, ‘মন মোর নহে রাজি’! পাল্টা যুক্তিও ধেয়ে আসে, ‘শুভেচ্ছাতেও আপনার গায়ে ফোস্কা পড়ছে বুঝি’? ‘‘ফোস্কা না-পড়লেও ঔচিত্য শব্দটা কাউকে বোঝাতে হিমশিম খেতে হয়!’’ বলছিলেন নবদ্বীপের কয়েক প্রজন্মের পুরোহিত তথা পৌরোহিত্য পঠনপাঠনের শিক্ষক সুশান্ত ভট্টাচার্য।

‘শুভ মহালয়া’র শুভেচ্ছা-য় ঔচিত্যের ঘাটতি বুঝিয়ে সরস হোয়াটসঅ্যাপ-বার্তা অনেকের ফোনে ফোনে ঘুরছে। তাতে মহালয়ার তর্পণ থেকে দেবীপক্ষ মহিমারও সারমর্ম ব্যাখ্যা। ‘শুভ মহালয়া’ কেন বলা যায় না, বৃহস্পতিবার মহালয়ার দুপুরেই তার ব্যাখ্যা দিলেন প্রবীণ পুরোহিত শম্ভুনাথ ভট্টাচার্য স্মৃতিতীর্থ। তিনি বলছেন, ‘‘এ বার কি তবে প্রিয়জন বিয়োগে সহাস্যে ‘শুভ শ্রাদ্ধ’ বলাও চালু হবে! এ এক অদ্ভুত সময়!’’ স্মৃতিতীর্থমশাইয়ের ধারণা, হয়তো ব্রাহ্মমুহূর্তে আকাশবাণীর ‘মহিষাসুর মর্দিনী’ অনুষ্ঠান, পুজোপুজো গন্ধ মিলিয়েই শুভেচ্ছা জানানোর অভ্যাস জাঁকিয়ে বসেছে। কিন্তু মহালয়ায় শুভেচ্ছা আমাদের পরম্পরা নয়।

ধর্ম বিষয়ক প্রাবন্ধিক চৈতন্যময় নন্দ আবার তর্পণের মন্ত্রের শুভ ভাবটিকে শুভেচ্ছার বার্তাবহ বলেই ধরছেন। তাঁর কথায়, ‘‘কী অপূর্ব মন্ত্র, গোটা ত্রিভুবন, ব্রহ্ম থেকে তৃণগাছিকে স্মরণের রীতি মহালয়ার তর্পণে! ‘আব্রহ্ম স্তম্বপর্য্যন্তং জগত্তৃপ্যতু’! এ যদি শুভ নয় তা হলে শুভ কী!’’

মহালয়ার তর্পণের রীতিতে মহাভারতে কর্ণের কাহিনিও মিশে। ইহলোকে মানুষ যা দেয়, পরলোকেও তাই ফিরে পায়! খিদের চোটে কাহিল দাতা কর্ণ স্বর্গে দেখলেন, তাঁর খাবারের থালায় সাজানো রত্নরাজি। তাঁকে বোঝান হল, দানবীর হলেও তিনি তো পিতৃকুলকে জলদানও করেননি, তা হলে তিনি কী করে অন্য কিছু পাবেন। কর্ণ বুঝিয়ে বলেন, মৃত্যুর এক দিন আগেই তিনি নিজের পিতৃপরিচয় জানতে পেরেছিলেন। অতএব তর্পণের দোষ ক্ষালন করতে ১৫ দিনের জন্য কর্ণের পৃথিবীতে ফেরার অনুমতি মঞ্জুর হল। পিতৃপক্ষের তর্পণপর্ব কর্ণের সেই মর্ত্যে ফেরার স্মারক।

নবদ্বীপের সুশান্তবাবুও প্রিয়জনের শ্রাদ্ধের সঙ্গেই তর্পণের মুহূর্তের তুলনা করছেন। তাঁর কথায়, ‘‘দু’টি আচারই প্রয়াত স্বজনকে নিবেদিত। শ্রাদ্ধে পিণ্ড গ্রহণ করতে আসেন আত্মা। গীতাপাঠ শুনে সংসারের মায়া কাটিয়ে মুক্ত হন। তর্পণে সতিল গঙ্গোদক পান করে তৃপ্ত হয়েও মৃতেরা তাঁদের মহান আলয়ে লীন হন।’’ মহালয়া পিতৃপক্ষ ও দেবীপক্ষের সন্ধিক্ষণও। পুরোহিতমশাইয়ের মতে, ‘‘কন্যারূপে দেবীর আগমনেও এ পৃথিবী তখন মহান আলয় হয়ে উঠবে।’’ সে-দিক দিয়ে মহালয়া শুভ দিন সন্দেহ নেই শাস্ত্রজ্ঞদের। ‘‘তা-বলে কিছু শুভ মুহূর্ত অনুভবের। কথায় কথায় শুভেচ্ছা বিতরণের সামাজিক অভ্যেসে মহালয়ার গভীর ভাবটা লঘু হয়।’’ বলছেন সুশান্তবাবু।

এই আশ্বিনে মল মাস পড়ায় আবার পিতৃপক্ষ শেষ হলেও দেবীপক্ষ পড়ছে না। সোশ্যাল মিডিয়ার উদ্‌যাপনে কিন্তু কানে আসছে দেবীপক্ষেরও হইচই। এই ‘পক্ষকাল’ কি তবে মাসখানেক ধরে চলবে? ‘শুভ মহালয়ার’ মতো দেবীপক্ষ উচ্ছ্বাসেও সন্ত্রস্ত শাস্ত্রজ্ঞেরা।

Tarpana Mahalaya 2020 Happy New Year Social Media Whatsapp
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy