শিলিগুড়ি করিডর বা চিকেন’স নেক। ভৌগোলিক অবস্থানের জন্য এই ভূখণ্ডটি ভারতের কাছে অত্যন্ত সংবেদনশীল। যোগাযোগ, অর্থনীতি এবং সামরিক— তিন দিক থেকেই এই ভূখণ্ডের নিজস্ব গুরুত্ব রয়েছে। সেই চিকেন’স নেক-এর নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে এ বার উচ্চপর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়ে গেল শিলিগুড়িতে। পোশাকি ভাষায় এটিকে বলা হচ্ছে ‘স্টেট সাবসিডারি মাল্টি এজেন্সি সেন্টার’ (সংক্ষেপে স্ম্যাক)-এর বৈঠক। সম্প্রতি দিল্লিতে লালকেল্লার কাছে গাড়ি বিস্ফোরণের পর এই বৈঠকের গুরুত্ব আরও বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
শনিবারের এই বৈঠকে শিলিগুড়ি করিডরের সঙ্গে সম্পর্কিত সব পক্ষকে নিয়ে আলোচনা হয়। শিলিগুড়িতে আইবির কার্যালয়ে আয়োজিত ওই ‘স্ম্যাক’ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় সেনা, বায়ুসেনা, সিআইএসএফ, বিএসএফ, এসএসবি, আইটিবিপি, মিলিটারি পুলিশ, আর্মি ইন্টেলিজেন্স (সেনার গোয়েন্দা শাখা)-এর পদস্থ কর্তারা। এর পাশাপাশি আরপিএফ, রেল পুলিশ, রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ-সহ বিভিন্ন নিরাপত্তা সংস্থা এবং গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন বৈঠকে। ‘স্ম্যাক’ বৈঠকে যোগ দেন জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ এবং এশিয়ান হাইওয়ে কর্তৃপক্ষও।
বৈঠক সূত্রে খবর, চিকেন’স নেক-এর নিরাপত্তা এবং সীমান্ত এলাকায় নজরদারি আরও বৃদ্ধি করতে বলা হয়েছে। পুলিশের একাংশ জানাচ্ছে, এটি একটি রুটিন বৈঠক। তবে সাম্প্রতিক ঘটনা পরম্পরার প্রেক্ষিতে এই বৈঠক যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। সম্প্রতি দিল্লিতে লালকেল্লার কাছে গাড়ি বিস্ফোরণের ঘটনায় জঙ্গিযোগের তত্ত্ব উঠে আসতে শুরু করেছে। এ অবস্থায় সীমান্তে নজরদারি বৃদ্ধিতে জোর দেওয়া যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। পাশাপাশি বাংলাদেশেও সামনে নির্বাচন রয়েছে। সে দিক থেকেই শনিবারের কেন্দ্র এবং রাজ্যের প্রতিনিধিদের মধ্যে চিকেন’স নেক-এর নিরাপত্তা সংক্রান্ত এই বৈঠক বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
আরও পড়ুন:
শনিবারের বৈঠকে উপস্থিত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আধিকারিক বলেন, “এই বৈঠকে মূলত প্রত্যেক নিরাপত্তা সংস্থা নিজেদের নিরাপত্তা ও নজরদারি সংক্রান্ত কিছু পরামর্শ রেখেছে। শিলিগুড়ি করিডরের নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তার মধ্যে বেশ কিছু সড়ক, মহাসড়ক, রেলের সেতু, মহাসড়কের সেতু, গুরুত্বপূর্ণ রেল স্টেশন রয়েছে, যেগুলির নজরদারি বাড়াতে বলা হয়েছে। প্রত্যেক সংস্থার আধিকারিকেরা গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য তুলে ধরেছেন।”
বস্তুত, দিল্লিতে লালকেল্লার কাছে গাড়ি বিস্ফোরণের পরে দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা হয়েছে। দেশের সব বিমানবন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে সিআইএসএফ। বাগডোগরা বিমানবন্দরেও তারা নিরাপত্তা বৃদ্ধি করেছে। আরপিএফ এবং জিআরপির তরফে নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে নিউ জলপাইগুড়ি, শিলিগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহারের মতো বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ রেল স্টেশনেও। রাজধানী এক্সপ্রেস, বন্দেভারতের মতো গুরুত্বপূর্ণ দূরপাল্লার ট্রেনগুলিতেও নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।