মেয়ো রোডে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র।
টাকা নিয়ে কলেজে ভর্তিতে দলের ছাত্র সংগঠনের নাম জড়ানোয় তোলপাড় হয়েছিল তৃণমূলে। ছাত্র সংগঠনের সভানেত্রী জয়া দত্তকে কার্যত বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও চলছে বিভিন্ন পদাধিকারীদের সরানোর কাজও। এমনকী ছাত্র সংগঠনে নতুন প্রধান বাছাইয়ের প্রক্রিয়াও চলছে। এমনই আবহে তৃণমূল নেত্রী তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দেন, ‘‘টাকার কাছে আত্মসমর্পণ করবে না, দলে এমন নিবেদিতপ্রাণ কর্মীই আমি চাই।’’
আগামী ১৫ দিনের মধ্যে টিএমসিপির নতুন কমিটি তৈরি হবে বলে এ দিনের সমাবেশে জানিয়েছেন মমতা। দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়, রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী, যুব সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশাপাশি প্রাক্তন টিএমসিপি সভাপতিরা নতুন সেই কমিটি বাছাইয়ের কাজ করবেন বলে মমতা জানান। তবে এ দিনের সমাবেশ থেকে দলের ছাত্র সংগঠনের নতুন মুখ উঠে আসার কিছু ইঙ্গিত মিলেছে বলে রাজনৈতিক মহল মনে করছে।
কেন? জয়া এ দিন মঞ্চে থাকলেও একবারের জন্যও তাঁর নামোল্লেখ হয়নি। বরং কলকাতা ও বারাসত বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন ছাত্রনেতা রুমানা আখতার, তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য এবং লগ্নজিতা চক্রবর্তী বক্তৃতা করার সুযোগ পেয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী যখন মঞ্চে আসেন তখন বক্তৃতার সুযোগ পান তৃণাঙ্কুর। নেত্রী তাঁর ভাষণ শুনেছেন। ফলে পরবর্তী নেতার নাম নিয়ে গুঞ্জনও বেড়েছে।
সভাপতি হতে অনেক ছাত্র নেতা, নেত্রীই দলের প্রথম সারির নেতাদের সঙ্গে যে দেখা করছেন, সে ঘটনার ইঙ্গিত দিয়ে মমতা বলেন, ‘‘আয়নায় নিজেকে দেখে নিজেই প্রশ্ন কর যে তোমার নিজেকে উপযুক্ত মনে হচ্ছে কি না? তোমার কাজই তোমার পরিচয়। ভাল কাজ করলে সবাই ডেকে নেবে, চিনে নেবে। লোকের কাছে লবি করার প্রয়োজন নেই। আমাদের সময়ে এত নেতাদের বাড়ি যেতাম না।’’
ছাত্রদের উদ্দেশে নেত্রীর উপদেশ, ‘‘টাকার বিকল্প আছে। কিন্তু নিষ্ঠার বিকল্প নেই। টাকা আজ আছে, কাল নেই। তাই যতটুকু প্রয়োজন, ততটুকুই ব্যবহার করবে।’’ টাকার বিনিময়ে ছাত্র ভর্তির ঘটনায় দলের ছাত্র সংগঠন জড়িয়ে পড়ার ঘটনায় তিনি যে উদ্বিগ্ন, তা এ দিনের বক্তৃতায় বারবারই বুঝিয়েছেন মমতা। বলেছেন, ‘‘টাকার কাছে মাথা নত না করে কাজটা করতে হবে তোমাদের। টাকা মাটি, মাটি টাকা। টাকা নিয়ে চরিত্র নষ্ট করতে নেই।’’ ছাত্র পরিষদের নেত্রী হিসেবে তাঁর নিজের অতীতের নানা স্মৃতি রোমন্থন করে ছাত্রদের সমাবেশকে পরামর্শ দেন, ‘‘জীবনে লড়াইয়ের দাম টাকা-পয়সায় হয় না। লড়াইটাই জীবনের ভবিষ্যৎ।’’
আয়ের পথ হিসেবে ছাত্র-রাজনীতিকে পড়ুয়ারা যাতে ব্যবহার না করে, সে ব্যাপারে সতর্ক করে মমতার পরামর্শ, ‘‘লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু। বেশি লোভ করতে নেই।’’ এমনকী মমতা উল্লেখ করেন, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, ক্ষুদিরাম বসু, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের মতো স্বাধীনতা সংগ্রামীরা কেউ টাকার বিনিময়ে রাজনীতি করেননি। তাঁদের পদাঙ্ক অনুসরণ করেই যাতে মানুষের পাশে থেকে ছাত্ররা রাজনীতি করে এবং আগামীর নেতা হয়ে ওঠে, সে জন্য মমতার নির্দেশ, ‘‘মানুষের মতো মানুষ হও। লোভ করে একদিনেই জীবনটাকে ফুরিয়ে ফেলবে নাকি জীবনটাকে অনেক দিন পর্যন্ত নিয়ে যাবে! জীবনটাকে অনেক দিন পর্যন্ত এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।’’
ময়দানে সরাসরি লড়াইয়ের পাশাপাশি বিজেপির মোকাবিলায় সোশ্যাল মিডিয়াতেও ছাত্রদের সক্রিয় হতে নির্দেশ দেন মমতা। বলেন, ‘‘বিজেপি ফেসবুক, টুইটারে তৃণমূলের বিরুদ্ধে একটি কুৎসা করলে, তার জবাবে ১০টা আক্রমণ করবে। এমন জবাব দেবে, যাতে লেজ গুটিয়ে ওরা পালায়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy