গোটা রাজ্যের জন্য শিল্পের বার্তা। আর শিল্প ছেড়ে কৃষিতে ফেরা সিঙ্গুরের জন্য বার্তা পাশে থাকার।
বুধবার সিঙ্গুরের সানাপাড়ায় জাতীয় সড়কের উপরে বাঁধা ‘বিজয় উৎসবের’ মঞ্চ থেকে আরও এক বার বাজেমেলিয়া, খাসেরভেড়ি, গোপালনগর, সিংহেরভেড়ির হাজার একর জমি আগের চেহারায় ফেরানোর প্রতিশ্রুতি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সঙ্গে চাষিদের জন্য ঘোষণা করলেন এক গুচ্ছ প্যাকেজ।
মমতা বলেন, ‘‘জমিতে ৪টি গভীর নলকূপ ছিল। সেগুলো ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। তার বদলে চেক ড্যাম ও ছোট ছোট অগভীর নলকূপ বসানোর ব্যবস্থা করছি। শুরু হয়েছে মাটি পরীক্ষারও।’’ চাষ শুরু হলে গোড়ায় চাষিদের সার ও উচ্চমানের বীজ সরকার দেবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সঙ্গে চাষের যন্ত্রপাতি কেনার জন্য এককালীন ১০ হাজার টাকা দেওয়া হবে। মুখ্যমন্ত্রী জানান, পশ্চিমবঙ্গ কৃষিজ শিল্প নিগমের উদ্যোগে সিঙ্গুরে ‘কাস্টমস হায়ারিং সেন্টার’ খোলা হবে। সেখান থেকে চাষিরা যেমন চাষের যন্ত্রপাতি কিনতে পারবেন, তেমনই ২৬ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে পারবেন। তৈরি হবে কৃষক প্রশিক্ষণ ও সমীক্ষা কেন্দ্র।
সিঙ্গুরবাসীর একাংশের আশঙ্কা ছিল, জমি ফেরানোর পরেই বন্ধ হয়ে যাবে সরকারি চাল ও ভাতা। আর তখন চাষ শুরু করতে না পারলে তাঁরা বিপাকে পড়বেন। এ দিন তাঁদের খানিকটা আশ্বস্ত করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। জানিয়েছেন, জমি পুরোপুরি চাষযোগ্য না-হওয়া পর্যন্ত সব পরিবারকে মাসে দু’হাজার টাকা এবং বিনামূল্যে ১৬ কেজি চাল দিয়ে যাবে সরকার।
সরকারি সাহায্য
• মাটি পরীক্ষা, বীজ ও সার
• চেক ড্যাম, ছোট নলকূপ
• যন্ত্র কিনতে ১০ হাজার
• চাষের যন্ত্র বিক্রির কেন্দ্র
• ২৬ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ
• মাসে ২ হাজার টাকা
• বিনামূল্যে চাল মাসে ১৬ কেজি
এত ঘোষণাতেও অবশ্য পুরোপুরি আশ্বস্ত নয় সিঙ্গুর। ন্যানো কারখানার জন্য অধিগৃহীত জমি আগের মতো উর্বর করে তোলা সম্ভব কিনা, এই প্রশ্নটাই এখন ঘুরে ফিরে আসছে সিঙ্গুরবাসীর মনে। মুখ্যমন্ত্রীর কথার সূত্র ধরে মুখ্যসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন বলেন, ‘‘কৃষকেরা যাতে কৃষিজমি ফেরত পান, সে ব্যাপারে সরকার দায়বদ্ধ এবং সেই জমিকে চাষযোগ্য করে তুলতে সরকারি অফিসারেরা বদ্ধপরিকর। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ এবং সর্বোচ্চ আদালতের রায় মেনে যত শীঘ্র সম্ভব সিঙ্গুরের এই জমিতে চাষিরা ফের চাষ করতে পারবেন।’’
কিন্তু ভূমি ও কৃষি দফতরের কর্তারা সংশয়ী। কারখানার জমির হাল ফেরাতে এ মাসের গোড়া থেকে কাজ করছেন ৩০০ অফিসার। প্রকল্প এলাকায় পাঁচিল থেকে রাস্তা, সাব-স্টেশন থেকে শেড, জলাশয় থেকে জঙ্গল সরিয়ে কী ভাবে জমিকে ফের চাষযোগ্য করা যাবে, ভেবে পাচ্ছেন না তাঁদের অনেকেই।
চাষের ব্যাপারে খুব আশাবাদী নন কৃষকদেরও একাংশ। সে নিয়ে জল্পনা যেমন রয়েছে, তেমনই জল্পনা মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য নিয়েও। এ দিন যে তিনি বলেই রেখেছেন, ‘‘জমি ফেরাব। তার পরে তাঁরা কী করবেন, তাঁদের ব্যাপার।’’ ফলে ক্ষতিপূরণ, পরচা পেয়েও সিঙ্গুর ফের ‘সিঙ্গুর’ হবে কিনা, কিঞ্চিৎ অস্বস্তি থেকেই যাচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy