Advertisement
E-Paper

সাম্প্রদায়িক বিষও সন্ত্রাস, বার্তা মমতার

বাংলায় উৎসবের মরসুমে সম্প্রীতির সুরটি চিরকালীন। তার নানা উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত গত কয়েক দিন ধরেই ধরা পড়ছে জেলায় জেলায়। এই পরিবেশটি যাতে অক্ষুণ্ণ থাকে, সেই বার্তাই সোমবার রাজ্যবাসীর কাছে তুলে ধরলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সাম্প্রদায়িকতাকে সন্ত্রাসবাদেরই রকমফের বলে বর্ণনা করলেন তিনি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০১৬ ০৪:২৫
ভরসার হাত। নবান্নে মিতা মণ্ডলের বাবা ও দাদা। উলুবেড়িয়ার গৃহবধূ মিতার মৃত্যু-তদন্তের ভার সোমবার সিআইডির হাতে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এ দিন রাতেই গ্রেফতার করা হয়েছে মিতার দেওর রাহুল মণ্ডলকে।—নিজস্ব চিত্র

ভরসার হাত। নবান্নে মিতা মণ্ডলের বাবা ও দাদা। উলুবেড়িয়ার গৃহবধূ মিতার মৃত্যু-তদন্তের ভার সোমবার সিআইডির হাতে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এ দিন রাতেই গ্রেফতার করা হয়েছে মিতার দেওর রাহুল মণ্ডলকে।—নিজস্ব চিত্র

বাংলায় উৎসবের মরসুমে সম্প্রীতির সুরটি চিরকালীন। তার নানা উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত গত কয়েক দিন ধরেই ধরা পড়ছে জেলায় জেলায়। এই পরিবেশটি যাতে অক্ষুণ্ণ থাকে, সেই বার্তাই সোমবার রাজ্যবাসীর কাছে তুলে ধরলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সাম্প্রদায়িকতাকে সন্ত্রাসবাদেরই রকমফের বলে বর্ণনা করলেন তিনি।

এক টুইট বার্তায় মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বলেন, ‘‘শান্তি, সমৃদ্ধি ও সুস্থিতিকে বিপন্ন করে সন্ত্রাসবাদ। তাই আমরা এর নিন্দা করি। একই ভাবে নিন্দা করি সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসবাদকেও (কমিউনাল টেররিজম)। কারণ তা অন্য সব কিছুর তুলনায় বেশি বিপজ্জনক।’’

কাশ্মীরে লাগাতার অশান্তি এবং বিশেষ করে উরি হামলার পরে সন্ত্রাসের প্রশ্নে নতুন করে আন্তর্জাতিক মঞ্চে সরব হয়েছে ভারত। চলতি ব্রিকস সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী সেই সরবতার পর্দা চড়িয়েছেন। এ রাজ্যেও সম্প্রতি জেএমবি-র ছয় জঙ্গি ধরা পড়েছে। ফলে সন্ত্রাসের বিপদ নিয়ে উদ্বিগ্ন পশ্চিমবঙ্গও। মমতা এ দিন তাঁর সেই উদ্বেগ প্রকাশ করার পাশাপাশিই অঙ্গুলিনির্দেশ করেছেন সাম্প্রদায়িকতার বিপদের দিকে। তাঁর মতে, সাধারণ মানুষের জীবনে সেই বিপদটি কম নয়, বরং বেশি।

মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সূত্রে বলা হচ্ছে, মমতার এই উদ্বেগ নতুন নয়। রাজ্যে সম্প্রীতি ও সুস্থির পরিবেশ যাতে বজায় থাকে, সে জন্য মুখ্য প্রশাসকের এই উদ্বেগ স্বাভাবিকও বটে। তবে ইদানীং মুখ্যমন্ত্রীর সেই চিন্তা কিছুটা বেড়েছে। কারণ, এক দিকে প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশে সম্প্রতি বড় ধরনের সন্ত্রাসবাদী হামলা হয়েছে। লাগোয়া ভূখণ্ড বলে তার প্রভাব থেকে বাংলাকে মুক্ত রাখাটা চিন্তার বিষয় বই কি! তবে তার থেকেও বেশি তাঁর উদ্বেগের কারণ হল, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে বিজেপি বাংলায় বিভাজনের রাজনীতির বিষ ছড়াতে উঠেপড়ে লেগেছে বলে মনে করছেন মুখ্যমন্ত্রী। হাতেনাতে তার কিছু নমুনাও গত লোকসভা ভোটের পর থেকে দেখা যাচ্ছে। একে তো দিলীপ ঘোষরা উগ্র হিন্দুত্বের কথা প্রচার করছেন। সেই সঙ্গে গো-সুমারির মতো রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে একেবারে গ্রামে গ্রামে-পাড়ায় পাড়ায় সাম্প্রদায়িকতার বীজ ছড়াতে নেমে পড়েছে আরএসএস এবং বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ও তাদের কিছু শাখা সংগঠন। বস্তুত দ্বিতীয় বার মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেওয়ার পর থেকে ধারাবাহিক ভাবে বিজেপি-র এই রাজনীতি নিয়ে বাংলার মানুষকে সতর্ক করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিধানসভায় তাঁর প্রথম বক্তৃতা থেকে শুরু করে একুশে জুলাইয়ের শহিদ সমাবেশের মঞ্চ, এমনকি জেলায় জেলায় প্রশাসনিক বৈঠকে গিয়েও পাখি পড়ানোর মতো সম্প্রীতি রক্ষার কথা বলছেন তিনি।

তৃণমূলের শীর্ষ নেতাদের মতে, এর পরেও মুখ্যমন্ত্রীর আশঙ্কা কাটছে না। কারণ, বাংলায় সাম্প্রদায়িক সদ্ভাব অটুট রাখার স্বার্থে মুখ্যমন্ত্রী যেমন ধারাবাহিক চেষ্টা চালাচ্ছেন, তেমনই বিজেপি-ও তাদের রাজনীতিতে ধারাবাহিকতা রাখছে। তৃণমূলের দাবি, কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকার সুযোগ নিয়ে পুরোদস্তুর মেরুকরণের রাজনীতি চালিয়ে যাচ্ছেন নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহরা। কোনও ফাঁকফোকরই তাঁরা ছাড়ছেন না। গোয়ায় ব্রিকস সম্মেলন চলছিল। ওই সম্মেলনের জন্য ‘লোগো’টি পদ্মফুলের আকারে করা হয়েছে। সূত্রের খবর, ব্রিকস-এর ওই লোগো দেখেও ক্ষুব্ধ তৃণমূল নেত্রী। তিনি মনে করছেন, উত্তরপ্রদেশে ভোটের কথা মাথায় রেখে এ হেন মেরুকরণের রাজনীতিতে হাওয়া দিচ্ছে বিজেপি। সে জন্য যেমন ইচ্ছাকৃত ভাবে ‘তিন তালাক’ বিতর্ক খুঁচিয়ে তুলছে মোদী সরকার, তেমনই অযোধ্যায় ‘রামায়ণ মিউজিয়াম’ গড়ে তোলার ভাবনা সামনে আনছে।

এ রাজ্যের দুই প্রধান বিরোধী দলের অবশ্য অভিযোগ, রাজনীতির মেরুকরণের স্বার্থে তৃণমূল ও বিজেপি, দু’দলই পরস্পরকে মদত দিচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীর মাথায় হিজাব পরে ইদের নমাজে যাওয়া এবং রেড রোডে দুর্গা কার্নিভ্যাল করা, সবই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে অভিযোগ করছে সিপিএম। দলের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, ‘‘যারা সম্প্রীতি নষ্ট করার চেষ্টা করবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হাত কাঁপবে কেন? গলা শুকিয়ে যাওয়ার তো কিছু নেই। এখানে তো এমন ছিল না আগে!’’ একই ভাবে মুখ্যমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন,‘‘উগ্র সাম্প্রদায়িকতার সঙ্গে বাংলা পরিচিত ছিল না। রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে পরস্পরের সঙ্গে আঁতাঁত করে সেই পরিবেশ তৈরি করেছে তৃণমূল-বিজেপি। তবে এটা ইতিবাচক যে, মুখ্যমন্ত্রী এর বিপদ আঁচ করতে পারছেন।’’

বিজেপি অবশ্য আঁতাঁতের অভিযোগ অস্বীকার করছে। তবে তাদেরও দাবি, বাংলায় বিভাজনের রাজনীতির পরিবেশ তৈরি হচ্ছে তৃণমূল সরকারের নীতির কারণেই। দলের কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিংহ এ দিন বলেন,‘‘তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ! তৃণমূলের তোষণমূলক রাজনীতিই বাংলায় সম্প্রীতির পরিবেশের পরিপন্থী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগে সেই রাজনীতির পথ বর্জন করুন।’’

communal mamata bandopadhyay
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy