Advertisement
E-Paper

যুবরাজের দায়িত্ব বাড়িয়ে মমতার চোখ বিধানসভায়

বিধানসভা ভোটের আগে যুবরাজের দায়িত্ব বাড়ল তৃণমূলে। শনিবার কালীঘাটে নিজের বাড়িতে ডাকা বৈঠকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে চারটি জেলায় পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব দিলেন তৃণমূলনেত্রী। বাঁকুড়া, পুরুলিয়ার পাশাপাশি এখন থেকে পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরের দায়িত্বও সামলাবেন অভিষেক। বাঁকুড়া, পুরুলিয়ায় অবশ্য অভিষেকের সঙ্গে যুগ্ম দায়িত্বে থাকবেন সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরে থাকবেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সুব্রত বক্সী।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০১৫ ০৩:২১

বিধানসভা ভোটের আগে যুবরাজের দায়িত্ব বাড়ল তৃণমূলে।

শনিবার কালীঘাটে নিজের বাড়িতে ডাকা বৈঠকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে চারটি জেলায় পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব দিলেন তৃণমূলনেত্রী। বাঁকুড়া, পুরুলিয়ার পাশাপাশি এখন থেকে পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরের দায়িত্বও সামলাবেন অভিষেক। বাঁকুড়া, পুরুলিয়ায় অবশ্য অভিষেকের সঙ্গে যুগ্ম দায়িত্বে থাকবেন সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরে থাকবেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সুব্রত বক্সী। কিন্তু এ দিনের সাংগঠনিক রদবদলে কার্যত মুকুল রায়ের বিকল্প হিসেবেই অভিষেককে তুলে ধরা হলো বলে মনে করছেন অধিকাংশ তৃণমূল নেতা।

কারণ, শুধু চার জেলার দায়িত্ব নয়, গোটা রাজ্যেই সাংগঠনিক নাড়িনক্ষত্রের খোঁজ রাখার দায়িত্ব এ দিন ভাইপোকে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এত দিন যে কাজ করতেন মুকুল। তাঁর কাছে থাকত প্রতিটা ব্লকের অন্তত ১৫ জন সক্রিয় কর্মীর নাম, ঠিকানা ফোন নম্বরের তালিকা। যাতে কোথাও কোনও ঘটনা ঘটলে তৎক্ষণাৎ খবর জোগাড় করা যায়, এবং প্রয়োজনে তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়। দলীয় পদ থেকে বিতাড়িত হওয়ার পরে সেই তালিকা দলকে দেননি মুকুল। মমতা এ দিন ২ মাসের মধ্যে নতুন তালিকা তৈরি করার নির্দেশ দিয়েছেন অভিষেককে।

তৃণমূল নেতাদের একটা বড় অংশ বলছেন, ভাইপোকে যে তিনি নেতৃত্বের পুরোভাগে তুলে আনতে চান সেটা বোঝাতেই শনিবার দলের সাংসদ, মন্ত্রী, জে‌লা সভাপতি এবং শাখা সংগঠনগুলির প্রধানদের নিয়ে বৈঠকে অভিষেকের এই নতুন দায়িত্বের কথা ঘোষণা করেছেন মমতা।

মমতা চাইছেন, ২১ জুলাইয়ের সমাবেশকে সামনে রেখে আগামী বছরের বিধানসভা ভোটের প্রস্তুতি শুরু করে দিতে। সেই লক্ষ্যে আগামী ২০ জুন থেকে নেতা-কর্মীদের জেলাওয়াড়ি প্রচারে বেরোতে বলেছেন তিনি। সেই প্রচারের মুখও যে অভিষেকই হবেন তা স্পষ্ট করে দিয়ে তাঁকে প্রতিটি জেলায় যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মমতা।

অভিষেকের পাশাপাশি এ দিনের রদবদলে দায়িত্ব বেড়েছে সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীরও। শুভেন্দু থাকবেন, না দল ছাড়বেন— তা নিয়ে কিছু দিন আগেও গুঞ্জন ছিল তৃণমূলে। সেই পর্বে দীর্ঘদিনের বিবাদ ভুলে মুকুলের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়েছিলেন শুভেন্দু। কিন্তু মুকুলের ডানা ছাঁটার সময়ই দলে শুভেন্দুর গুরুত্ব বাড়িয়ে দু’জনের মধ্যে দূরত্ব তৈরি করেন মমতা। দলীয় বৈঠকে শুভেন্দুর প্রশংসার পাশাপাশি নিজের গাড়িতে করে তাঁকে নবান্নে নিয়ে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে একান্তে আলোচনার পাশাপাশি সান্ধ্যভ্রমণ সেরেছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের লাগোয়া ছাদ-বাগানে।

এত দিন মালদহ ও মুর্শিদাবাদের দলীয় পর্যবেক্ষক ছিলেন শুভেন্দু। এ দিন তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দক্ষিণ দিনাজপুর। শুধু তা-ই নয়, মুর্শিদাবাদের যুগ্ম দায়িত্ব থেকে গায়ক ইন্দ্রনীল সেনকেও সরিয়ে দিয়েছেন মমতা। তৃণমূলের একাংশের বক্তব্য, মুর্শিদাবাদে দলের সাংগঠনিক শক্তি প্রসারে আরও অনেকের মতো ইন্দ্রনীলও ব্যর্থ হয়েছেন। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর জেলায় কার্যত দাঁত ফোটাতে পারেনি তৃণমূল। এ বার তাই প্রমাণিত দক্ষ সংগঠক শুভেন্দুর উপরে ভরসা রাখলেন দলনেত্রী।

শুধু জেলার গুরুভারই নয়, অভিষেক-শুভেন্দুকে ছাত্র পরিষদ থেকে আগামী দিনের নেতা তৈরির দায়িত্বও সঁপেছেন মমতা। তৃণমূল ছাত্র পরিষদকে রাজ্য জুড়ে কর্মশালা করতে বলেছেন নেত্রী। সেই কর্মশালাগুলিতে বাধ্যতামূলক ভাবে অভিষেক-শুভেন্দুর যে কোনও এক জনকে মূল বক্তা হিসেবে থাকতে হবে।

বিধানসভা ভোটের আগে দলের গোষ্ঠীকোন্দল ঠেকানোর কথাও এ দিনের বৈঠকে বলেছেন তৃণমূলনেত্রী। দলের অন্দরের খবর, সাম্প্রতিক পুরভোটে যে ভাবে রাজ্যের প্রায় প্রতিটি প্রান্তে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মাথাচা়ড়া দিয়েছে, এবং তার জেরে অশান্তি ছড়িয়েছে, তাতে মমতা বিব্রত। বিধানসভা ভোটে তার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে, সে জন্য এ দিন দলকে কড়া বার্তা দিয়েছেন তিনি। পুরভোটে উত্তর কলকাতায় বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে প্রার্থী দেওয়া নিয়ে দলের দুই মন্ত্রী তথা শ্যামপুকুরের বিধায়ক শশী পাঁজা এবং মানিকতলার সাধন পাণ্ডের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসে। দলের জেতা দু’টি আসনই খোয়াতে হয় তৃণমূলকে। তৃণমূল সূত্রের খবর, বৈঠকে সাধনবাবু এবং শশীকে ভর্ৎসনা করে দলনেত্রী বলেছেন, তাঁর কাছে ওই দু’জনের কলহ নিয়ে পুলিশের রিপোর্ট রয়েছে। দুই মন্ত্রীকে নেত্রী সাফ জানিয়ে দেন, কেউ কারও ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করবেন না। সাধনবাবু তখন কিছু বলার চেষ্টা করলে মমতা নির্দেশ দেন, অবিলম্বে নিজেদের মধ্যে ঝগড়া মিটিয়ে নিতে।

শুধু সাধন পাণ্ডে নন, শশী পাঁজার সঙ্গে উত্তর কলকাতার কাউন্সিলর অতীন ঘোষের বিবাদও ক্রমশ তীব্র আকার নিচ্ছে বলে খবর। মমতার কাছে পুলিশের রিপোর্ট গিয়েছে, দুই নেতার অনুগামীদের মধ্যে প্রায়শই গোলমাল হচ্ছে। যে কোনও মুহূর্তে বড় অঘটন ঘটে যেতে পারে। বস্তুত, শুক্রবার পুলিশ কমিশনারের ক্রাইম বৈঠকে এই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন এলাকার একটি থানার ওসি। ফলে এই দুই নেতার রাশ টানাও মমতার মাথাব্যথা।

শিলিগুড়ি পুরসভা দখল করতে না পেরে দলনেত্রীর কাছে ধমক খান উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব। সেখানে দল কেন আরও আগে থেকে ঐক্যবদ্ধ ভাবে ঝাঁপায়নি, তা নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন মমতা। এলাকার নেতাদের সঙ্গে সমন্বয় রেখে গৌতমবাবুকে কাজ করার নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে উত্তর দিনাজপুরে পুরভোটে দলের ফলে যে তিনি অসন্তুষ্ট, তা বুঝিয়ে আরও ঐক্যবদ্ধ ভাবে কাজ করার পরামর্শ দেন ইসলামপুরের বিধায়ক তথা মন্ত্রী করিম চৌধুরী ও ইটাহারের বিধায়ক অমল আচার্যকে। ইসলামপুর পুরসভা এ বারও কংগ্রেসের দখলে। সেখানে কেন দল ভাল ফল করেনি, তা বুঝতে অমলবাবুর সঙ্গে একসঙ্গে বসে কাজ করার পরামর্শ দেন করিমকে।

abpnewsletters Abhishek Bandyopadhyay subhendu adhikari mamata bandopadhyay trinamool tmc assembly
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy