Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
মমতাকে নালিশ কর্মাধ্যক্ষ, সদস্যদের

পুরুলিয়ার সভাধিপতিকে সমন্বয় রেখে কাজ করার নির্দেশ

জেলা পরিষদের সভাধিপতি সৃষ্টিধর মাহাতোকে সকলের সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করার বার্তা দিয়ে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সভাগৃহে প্রশাসনিক বৈঠক শেষে বাঁকুড়া রওনা হওয়ার আগে মুখ্যমন্ত্রী ওই বার্তা দিয়ে যান সভাধিপতিকে। বৈঠক শেষ করে গাড়িতে ওঠার আগে মমতা জেলা পরিষদের কয়েক জন সদস্যের সঙ্গে কথা বলেন। তখনই তাঁদের কয়েক জন একটি অভিযোগপত্র মুখ্যমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন।

বৈঠক সেরে ফেরার পথে মমতা। ছবি: সুজিত মাহাতো।

বৈঠক সেরে ফেরার পথে মমতা। ছবি: সুজিত মাহাতো।

প্রশান্ত পাল
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ১২ মে ২০১৫ ০৩:৩৩
Share: Save:

জেলা পরিষদের সভাধিপতি সৃষ্টিধর মাহাতোকে সকলের সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করার বার্তা দিয়ে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সভাগৃহে প্রশাসনিক বৈঠক শেষে বাঁকুড়া রওনা হওয়ার আগে মুখ্যমন্ত্রী ওই বার্তা দিয়ে যান সভাধিপতিকে।

বৈঠক শেষ করে গাড়িতে ওঠার আগে মমতা জেলা পরিষদের কয়েক জন সদস্যের সঙ্গে কথা বলেন। তখনই তাঁদের কয়েক জন একটি অভিযোগপত্র মুখ্যমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন। জেলা পরিষদেরই একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই অভিযোগপত্রে বেশ কয়েকজন কর্মাধ্যক্ষ ও সদস্য স্বাক্ষর করেছেন। তাতে অনেক কাজকর্মের ক্ষেত্রেই সদস্য ও কর্মাধ্যক্ষদের এড়িয়ে সভাধিপতি একক ভাবে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন বলে অভিযোগ আনা হয়েছে। পাশাপাশি কিছু কাজকর্মে দুর্নীতি ও স্বৈরতান্ত্রিক আচরণের কথাও উল্লেখ রয়েছে অভিযোগপত্রে। জেলা পরিষদে সভাধিপতির ঘরে ‘অবাঞ্ছিত’দের ভিড় খাকায় অনেক ক্ষেত্রেই নির্বাচিত সদস্যদের সমস্যায় পড়তে হয় বলেও অভিযোগ।

এক কর্মাধ্যক্ষের কাছে মুখ্যমন্ত্রী সভাধিপতি কেমন সমন্বয় রেখে চলছে জানতে চান। ওই কর্মাধ্যক্ষ বিশেষ ভাল কিছু বলেননি সভাধিপতিকে নিয়ে। মুখ্যমন্ত্রী তখন ঐ কর্মাধ্যক্ষকে সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে কাজ করতে বলেন। এর পরই গাড়িতে ওঠার আগে মুখ্যমন্ত্রী সৃষ্টিধর মাহাতোকে সবার সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করার নির্দেশ দিয়ে যান। সৃষ্টিধরবাবু বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী আমাকে সকলকে নিয়ে কাজ করতে বলেছেন। সেটাই তো স্বাভাবিক। এ রকম কথা তো আমরাও বলি। তবে মুখ্যমন্ত্রী জেলা পরিষদের কাজে খুশি। এ দিনের বৈঠক থেকে তেমনই বুঝতে পেরেছি।’’ সভাধিপতি জানান, তিনি চেকড্যাম ও পুকুর খননের কথা বৈঠকে বলেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী সেই বিষয়টিই আমলাদের কাছে জানতে চান। আমলাদের পক্ষ থেকে কতটা কাজ করা সম্ভব, কতটা সম্ভব নয় তা বলা হচ্ছিল। তখন মুখ্যমন্ত্রী বললেন, যতটা সম্ভব বেশি কাজ করতে হবে। তবে, জেলা পরিষদে তৃণমূলের দলনেতা সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সভাধিপতিকে সকলের সঙ্গে সমন্বয় রেখে মিলেমিশে কাজ করতে বলে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।’’

পুরুলিয়ায় জলের সমস্যার কথা মাথায় রেখে জেলা জুড়ে ‘জল ধরো জল ভরো’ প্রকল্পে ফের জোর দেওয়ার কথা বৈঠকে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। বৈঠকেই মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের মুখ্যসচিবের কাছে পরুলিয়া জেলার চেকড্যামের বিষয়ে জানতে চান। মুখ্যসচিব জানান, ৪৯৭টি চেকড্যামের মধ্যে ২৬৮টিতে কাজ হতে পারে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, দেখতে হবে যতটা বেশি কাজ করা যায়। পরে বৈঠক থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েও পানীয় জলের সমস্যার কথা স্বীকার করেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘এখানে পানীয় জলের সমস্যা রয়েছে। ১০৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে জাইকা প্রকল্পে পানীয় জল প্রকল্পের কাজ চলছে জেলার দশটি ব্লকে। ২০১৮ সালের মধ্যে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।’’ জেলায় পর্যাপ্ত সংখ্যায় ব্যাঙ্ক না থাকায় একশো দিনের কাজের প্রকল্পে শ্রমিকদের মজুরি পেতে সমস্যার কথাও এ দিন তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, ‘‘এখানে ব্যাঙ্কের সমস্যা রয়েছে। না থাকায় গরিব মানুষদের একশো দিনের কাজের টাকা পেতে সমস্যা হচ্ছে। কী ভাবে এই সমস্যার সমাধান করা যায়, তা নিয়ে ব্যাঙ্কগুলির সঙ্গে বৈঠক করতে হবে।’’


পাশাপাশি। বাঁকুড়ার প্রশাসনিক বৈঠকে সাংসদ মুনমুন সেন ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: অভিজিৎ সিংহ।

বৈঠকে তিনি কন্যাশ্রী প্রকল্পের খোঁজ খবর নেন। বৈঠকে উপস্থিত জেলা স্কুল পরিদর্শককে নির্দেশ দেন, যারা এই প্রকল্পের আওতাভুক্ত হওয়ার যোগ্য, তাদের কেউ যেন প্রকল্পের বাইরে না থাকে। বৈঠকে উপস্থিত পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো বলেন, ‘‘এই জেলার মানুষের আবাসনের সমস্যা রয়েছে। মানুষ যাতে মাথা গোঁজার মত একটা ছোট বাড়ি পায়, সে দিকে নজর দিতে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। একশো দিনের কাজের প্রকল্পে প্রত্যেক স্কুল পরিষ্কার করার জন্য এক জনকে নিয়োগ করার কথাও বলেছেন।’’

প্রশাসন সূত্রের খবর, বিভিন্ন বিষয়ে মমতা যখন কাজে গতি বাড়ানোর নির্দেশ দিচ্ছেন, তখন উপস্থিত আমলাদের কেউ কেউ আমলাতান্ত্রিক সমস্যার কথা তোলেন। কেউ অনলাইন সমস্যার কথাও বলেন। তখন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমি ও-সব বুঝি না। প্রয়োজনে আমলাতান্ত্রিক ফাঁস শিথিল করে গরিব মানুষকে কাজ দিতে হবে। মানুষ অত শত বোঝেন না। সরকারকে বোঝেন।’’ পরে অবশ্য সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে জেলায় ইন্টারনেট সংযোগের সমস্যার কথা বলেন মমতা। বৈঠকে শান্তিরামবাবুকে অযোধ্যা পাহাড়ের গ্রামগুলিকে রাস্তা গড়ে সংযুক্ত করার কথাও বলেন। বৈঠকে জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তী জানান, পাহাড়ে ইতিমধ্যেই প্রশাসন পাঁচটি প্রধান রাস্তা তৈরি করেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE