Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

‘আমি এখন শান্তিতে মরতেও পারি’

রাজভবনে গোপালকৃষ্ণ গাঁধীকে মাঝখানে রেখে এই সিঙ্গুরই মুখোমুখি বসিয়েছিল তাঁদের দু’জনকে। সিঙ্গুরকে নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ তাঁদের আবার আলাদা করে রাখল রাজনৈতিক মেরু দূরত্বে!

রায় শোনার পরে নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী। বুধবার। ছবি: সুদীপ আচার্য।

রায় শোনার পরে নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী। বুধবার। ছবি: সুদীপ আচার্য।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:৪০
Share: Save:

রাজভবনে গোপালকৃষ্ণ গাঁধীকে মাঝখানে রেখে এই সিঙ্গুরই মুখোমুখি বসিয়েছিল তাঁদের দু’জনকে। সিঙ্গুরকে নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ তাঁদের আবার আলাদা করে রাখল রাজনৈতিক মেরু দূরত্বে!

সিঙ্গুরে টাটার কারখানার জন্য কৃষিজমি অধিগ্রহণ বৈধ ভাবে হয়নি, দেশের সর্বোচ্চ আদালত বুধবার এই রায় দেওয়ার পরে তাঁর রাজনৈতিক মুকুটে গভীর স্বস্তির আরও একটি পালক যোগ করে নিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সিঙ্গুরের কৃষকদের অভিনন্দন জানিয়ে মমতা বলেছেন, ‘‘সিঙ্গুর আন্দোলন থেকেই মা-মাটি-মানুষ স্লোগানটা নিয়েছিলাম।’’ নিজের মুখেই কবুল করেছেন, ২০১১-র নির্বাচনে জেতার পর থেকে একটাই কাজ তাঁর বাকি ছিল— সিঙ্গুরের জমি ফেরত দেওয়া। মমতার স্বস্তি, ‘‘আমি এখন শান্তিতে মরতেও পারি!’’

নবান্নে দাঁড়িয়ে মমতার মুখ যতটা উদ্ভাসিত, আলিমুদ্দিনে ঢোকার সময়ে এ দিন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মুখ ততটাই থমথমে। প্রকাশ্যে একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল বলছে, ক্ষমতা হারানোর পরেও একাধিক বার যিনি বলেছেন সিঙ্গুরে কৃষিও হল না, শিল্পও হল না, তাঁর পক্ষে আদালতের এই ধাক্কা বেশ কষ্টকর। তবে তিনি এখনও বিশ্বাস করছেন, জমি নেওয়ায় পদ্ধতিগত ভুল থাকতেই পারে। কিন্তু রাজ্যকে শিল্পায়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে কোনও ভুল ছিল না।

এমন নয় যে, সিঙ্গুর নিয়ে এই প্রথম ধাক্কা খেতে হল বামেদের। জমি আন্দোলনের পর থেকে সব ধরনের নির্বাচনেই সিঙ্গুর মমতার হাত ভরিয়ে দিয়েছে। কিন্তু জমি ফেরতের প্রতিশ্রুতি দিয়েও এত বছর ধরে তা বাস্তবায়িত না হওয়ায় অস্বস্তি ছিল তৃণমূল নেত্রীর। দু’টাকা কিলো চাল এবং কৃষক পরিবারের জন্য মাসে দু’হাজার টাকা ভাতা দেওয়ার প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে সেই অস্বস্তিতে প্রলেপ দেওয়ার চেষ্টা ছিল। কয়েক মাস আগে মমতা নিজে বলেও ফেলেছিলেন, ‘‘আমার কাজ আমি করে দিয়েছি। জমি ফেরানোর জন্য বিল পাশ করেছি। এ বার আদালতে ৫০ বছর লাগলেও আমার কিছু করার নেই!’’ সেই তৃণমূল নেত্রীর মুখেই এ দিন শোনা গিয়েছে শান্তির কথা!

ঠিক উল্টো দিকে, নির্বাচনে হেরেও বামেরা এত দিন সিঙ্গুরবাসীর কাছে প্রশ্ন তুলতে পারছিল, তাঁরা কী পেলেন? এই রায়ের পরে সেই পথও প্রায় বন্ধ! যে কারণে শিল্পের উপরে বিরূপ প্রভাবের কথাই সামনে নিয়ে আসতে হচ্ছে সিপিএম নেতৃত্বকে। সিঙ্গুর-পর্বে বুদ্ধবাবুর অন্যতম কাণ্ডারী, প্রাক্তন শিল্পমন্ত্রী নিরুপম সেন বলেছেন, ‘‘সারা দেশে এই রায়ের প্রভাব পড়বে। জমি না পেলে শিল্প হবে কী করে?’’ আর দলের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বলছেন, ‘‘এই রায়কে এখনই রাজনৈতিক পরাজয় বলে ধরছি না। সমস্যাটা কঠিন হল, এই পর্যন্ত। মানুষের সঙ্গে কথা না বলে আর জমি নেওয়া হবে না, আগেই বলেছিলাম। তবে এই জমি যদি থাকত এবং আমাদের সরকার ক্ষমতায় ফিরতো, তা হলে কারখানা গড়ারই চেষ্টা করতাম।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

mamata politics singur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE