Advertisement
E-Paper

বুলবুলের দাপটে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পুনর্গঠনে জোড়া টাস্ক ফোর্স মমতার

রবিবার সকাল থেকেই উদ্ধার ও পুনর্গঠনের কাজ শুরু হয়েছিল। সোমবার সন্ধ্যাতেও দুই ২৪ পরগনার বহু রাস্তা থেকে ভেঙে পড়া গাছ তোলা যায়নি। বকখালি, সাগরদ্বীপ, পাথরপ্রতিমা, কাকদ্বীপ, গোসাবা, বাসন্তী, হিঙ্গলগঞ্জ ও সন্দেশখালির কিছু এলাকায় যান চলাচলও শুরু হয়নি।

শুভাশিস ঘটক

শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৯ ০৩:৩৪
বুলবুল-তাণ্ডবে মৃত মৎস্যজীবী সঞ্জয় দাসের পরিবারের পাশে মুখ্যমন্ত্রী। সোমবার কাকদ্বীপে। ছবি: সুমন বল্লভ

বুলবুল-তাণ্ডবে মৃত মৎস্যজীবী সঞ্জয় দাসের পরিবারের পাশে মুখ্যমন্ত্রী। সোমবার কাকদ্বীপে। ছবি: সুমন বল্লভ

বুলবুলের দাপটে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পুনর্গঠনে মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে দু’টি টাস্ক ফোর্স গঠন করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একটি টাস্ক ফোর্স রাজ্যস্তরে কাজ করবে, দ্বিতীয়টি জেলাস্তরে। সোমবার হেলিকপ্টারে দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপ মহকুমার বিধ্বস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন তিনি। পরে কাকদ্বীপ স্পোর্টস কমপ্লেক্সের অডিটোরিয়ামে জেলা ও রাজ্য প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে তিনি বলেন, ‘‘হেলিকপ্টার থেকে যা পরিস্থিতি আমি দেখেছি, তা ভয়াবহ। বুলবুলের দাপটে রাজ্যে প্রায় ২ লক্ষ বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ‘বাংলা আবাস যোজনা’ প্রকল্পের মাধ্যমে ওই বাড়িগুলি পুনর্নির্মাণ করতে হবে।’’ মুখ্যসচিব রাজীব সিংহকে অবিলম্বে এ ব্যাপারে বৈঠকের নির্দেশও দেন মুখ্যমন্ত্রী।

বিপর্যয়ের পরিস্থিতিতে বিক্ষোভ তৈরি করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর চেষ্টা হতে পারে, এই আশঙ্কা প্রকাশ করে বিষয়টি সম্পর্কে এডিজি(দক্ষিণবঙ্গ) সঞ্জয় সিংহকে সতর্ক থাকতে বলেন তিনি। তাঁর দাবি, সময় মতো বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ফলেই প্রাণহানি বেশি হয়নি। কেন্দ্রও যে রাজ্যের ভূমিকার প্রশংসা করেছে, তা-ও জানান মুখ্যমন্ত্রী। প্রশাসনিক বৈঠকের পরে জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গেও পৃথক বৈঠক করেন তিনি।

রবিবার সকাল থেকেই উদ্ধার ও পুনর্গঠনের কাজ শুরু হয়েছিল। সোমবার সন্ধ্যাতেও দুই ২৪ পরগনার বহু রাস্তা থেকে ভেঙে পড়া গাছ তোলা যায়নি। বকখালি, সাগরদ্বীপ, পাথরপ্রতিমা, কাকদ্বীপ, গোসাবা, বাসন্তী, হিঙ্গলগঞ্জ ও সন্দেশখালির কিছু এলাকায় যান চলাচলও শুরু হয়নি। তাতে ত্রাণ বণ্টন ব্যাহত হয়েছে। গ্রামগুলি এখনও বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন। বিদ্যুতের অভাবে পাম্প না-চলায় হিঙ্গলগঞ্জের কিছু এলাকায় পানীয় জলের সমস্যা দেখা দিয়েছে। সুন্দরবনের বেশির ভাগ পর্যটন কেন্দ্রের পরিকাঠামোর ক্ষতি হয়েছে। কবে সেগুলি আগের অবস্থায় ফিরবে, তা জানা যায়নি। সোমবার বিকেলে নামখানার ঈশ্বরীপুরে হাতানিয়া-দোয়ানিয়া নদীর জল বাঁধ ছাপিয়ে ঢুকতে শুরু করায় আতঙ্ক ছড়ায়। তবে পঞ্চায়েত জানিয়েছে, কোনও এলাকা প্লাবিত হয়নি। বাঁধ নিচু বলে সেখানে ছাপিয়ে জল ঢুকেছে।

আরও পড়ুন: মালিকের অতি লোভে এই হাল, ক্ষিপ্ত ধীবরেরা

বুলবুলের ক্ষয়ক্ষতি দেখতে কেন্দ্রের দল আসবে। রাজ্য অবশ্য জানিয়েছে, তার আগে নিজেরাই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হিসেব করবে। এ দিন মুখ্যমন্ত্রী জেলা প্রশাসনের কর্তাদের উদ্দেশে বলেন, ‘‘কেন্দ্রের প্রতিনিধিদল কয়েক দিনের মধ্যেই পরিস্থিতি দেখতে আসতে পারে। প্রাথমিক পর্যায়ে যা হিসেব পাওয়া গিয়েছে, পরে তা বাড়তে পারে। এখনও সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকার অনেক ক্ষয়ক্ষতির হিসেব আসেনি। সেই বিষয়টি মাথায় রেখেই হিসেব করতে হবে।’’ মুখ্যমন্ত্রী এ-ও বলেন, ‘‘বন দফতরের সঙ্গে আলোচনা করে সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভের অবস্থা দেখতে হবে। বিপর্যয়ের পরিস্থিতিতে সমাজের সবাইকে নিয়ে ক্ষয়ক্ষতি পূরণে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। জনপ্রতিনিধি ও বিভিন্ন দফতরের কর্তাদের একসঙ্গে সব কাজ করতে হবে। আমাদের গরিবের সরকার, এরই মধ্যে সব মানিয়ে-গুছিয়ে নিয়ে কাজ করতে হবে।’’ তাঁর নির্দেশ, সুন্দরবনে ফুটবল প্রতিযোগিতায় যোগ দেওয়া ক্লাবগুলির সদস্যদের ১০০ দিনের প্রকল্পে কাজে লাগানো হোক।

প্রাথমিক পর্যায়ে চাল, ত্রিপল ও পানীয় জলের সরবরাহ যাতে ঠিক থাকে, তা নিয়ে বিশেষ নজরদারির নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। ঝড়ের দাপটে বহু পুকুরের জল নষ্ট হয়েছে। তা পরিষ্কার করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। তিনি জেলাশাসক পি উলগানাথনকে প্রশ্ন করেন, ‘‘কোনও দফতরে কর্মীর অভাব রয়েছে কি?’’ জেলাশাসক বলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত নেই।’’

আরও পড়ুন: সমাবর্তনে রীতি ভাঙা নিয়ে প্রশ্ন

ঝড়ে ট্রলার উল্টে সঞ্জয় দাস নামে এক মৎস্যজীবীর মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘ট্রলারের মালিক পাহারা দেওয়ার জন্য ওই মৎস্যজীবীদের রেখেছিলেন। তাই এক জনের মৃত্যু হয়েছে। বিষয়টি আমরা দেখছি।’’ সঞ্জয়ের স্ত্রী ববিতা দাসের হাতে ২ লক্ষ টাকার ক্ষতিপূরণের চেক তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী। ববিতাকে চাকরির আশ্বাসও দেন।

যদিও মুখ্যমন্ত্রীর আকাশপথে কাকদ্বীপ যাওয়াকে কটাক্ষ করে সিপিএমের জেলা সম্পাদক শমীক লাহিড়ী এ দিন অভিযোগ করেন, মুখ্যমন্ত্রী দুর্গতদের সঙ্গে কথা বলেননি। সরকার ত্রাণের জন্য যথেষ্ট অর্থ বরাদ্দ করছে না বলেও সুর চড়ান তিনি।

Cyclone Bulbul Mamata Banerjee Task Force Nabanna
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy