প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিল মামলায় সুপ্রিম কোর্টে নতুন করে আবেদন করেছিল রাজ্য মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থার কথা মাথায় রেখে তাদের আর্জি ছিল, যাঁরা ‘দাগি’ (টেন্টেড) বা ‘অযোগ্য হিসাবে চিহ্নিত’ নন, আপাতত তাঁদের চাকরি বহাল থাক। বৃহস্পতিবার সেই আর্জিতে পর্ষদের পক্ষে রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। যাকে প্রথমে ‘সাময়িক স্বস্তি’ বলেও পরে ‘বড় স্বস্তি’ বলে উল্লেখ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার নবান্নের সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘শিক্ষকরা স্কুলে যাবেন। এটা বড় স্বস্তির খবর। একটা স্বস্তি হলে তার উপর ভবিষ্যতের স্বস্তি নির্ভর করে।’’
পর্যদের আর্জি প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, ‘দাগি’ (টেন্টেড) নন, এমন শিক্ষকেরা স্কুলে যেতে পারবেন। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্নার বেঞ্চের নির্দেশ, আগামী ৩১ মে-র মধ্যে রাজ্যকে হলফনামা দিয়ে বলতে হবে, চলতি বর্ষশেষের মধ্যেই নিয়োগপ্রক্রিয়া শেষ করা হবে। চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে পরীক্ষা নিয়ে শেষ করতে হবে নিয়োগপ্রক্রিয়া। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘আমি বলেছিলাম, আমরা দেখব যাতে চাকরিহারাদের কোনও অসুবিধা না হয়। আমরা সময় পেয়েছি। ২০২৬ পর্যন্ত বিষয়টা যাবে না। আশা করি, এ বছরের মধ্যেই সমাধান হয়ে যাবে। আশা করি আমরা ভুল করব না। আমি মানুষের কাজে ভুল করি না। নিজের কাজে ভুল করলেও মানুষের কাজে আমার ভুল হয় না।’’
আরও পড়ুন:
-
আপৎকালীন স্বস্তি মিলেছে, তবে শেষ পর্যন্ত দেখব! আইনি লড়াই বাকি, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর বললেন মন্ত্রী ব্রাত্য
-
ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় পেয়েছি, এ বছরের মধ্যেই সমাধান: সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তের পর মমতা, কী বার্তা শিক্ষাকর্মীদের জন্য?
-
‘পার্ট টাইম’ নয়, ৬০ বছর বয়স পর্যন্তই চাকরি করতে চাই! শীর্ষ আদালতে সাময়িক স্বস্তির পরেও বলছেন আন্দোলনরত শিক্ষকেরা
-
পর্ষদের আর্জিতে সাড়া সুপ্রিম কোর্টের, যাঁরা দাগি নন, তাঁরা যেতে পারবেন স্কুলে, পরীক্ষা নিয়ে নতুন নিয়োগ বর্ষশেষে
এক লপ্তে প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিল নিঃসন্দেহে রাজ্য সরকারের কাছে একটা উদ্বেগের বিষয় ছিল। যার পরে মুখ্যমন্ত্রী নিজে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে চাকরিহারাদের ডেকে তাঁদের বার্তা দেন। তিনি বলেছিলেন, প্রথমে যোগ্যদের পাশে সরকার দাঁড়াবে। তার পরে কারা অযোগ্য, তাঁদের কেন অযোগ্য বলা হচ্ছে, সেটাও খতিয়ে দেখবে রাজ্য সরকার। বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আগের রায়ে আদালত বলেছিল, বাতিল হওয়া শিক্ষকদের বেতন দেওয়া যাবে না। সেটি নিয়ে আমরা চিন্তা করছিলাম। বিকল্প পথের সন্ধান করছিলাম। এ বার তাঁদের বেতন দেওয়া যাবে।’’
উল্লেখ্য, সুপ্রিম কোর্ট ‘দাগি নন’ এমন শিক্ষকদের কাজে ফিরতে বললেও শিক্ষাকর্মীদের বিষয়ে কোনও নির্দেশ দেয়নি। সে প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আইনের বিষয়টি আমি দেখে নেব। আমাদের আইনজীবীরা দিল্লি থেকে ফিরুন।’’ শিক্ষাকর্মীদের উদ্দেশে মমতা বলেন, ‘‘চিন্তাটা আমার উপর ছেড়ে দিন। তাড়াহুড়ো করবেন না। সরকারের উপর আস্থা রাখুন। ভরসা রাখুন।’’ সুপ্রিম কোর্টের বৃহস্পতিবারের রায়ের পরেও অনেকের মনে এই মর্মে প্রশ্ন রয়েছে যে, কারা ‘দাগি’ আর কারা ‘দাগি নন’, তা বোঝা যাবে কী ভাবে? তা যদি স্পষ্ট করা যেত, তা হলে তো সমগ্র প্যানেল বাতিল হত না! এই প্রসঙ্গে আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘‘সেটা স্কুল সার্ভিস কমিশনকেই নির্দিষ্ট করে জানাতে হবে। না হলে ফের আদালতের অবমাননা হবে।’’ যদিও মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, আদালতের বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যেই সরকার যা পদক্ষেপ করার করবে।