E-Paper

এক পয়সাও নিইনি, দাবি করলেন মমতা

২০১৪ সালে ডায়মন্ড হারবার লোকসভা আসনে প্রথম সাংসদ নির্বাচিত হন অভিষেক। তখন থেকেই মমতা-অভিষেককে নিয়ে বিরোধী শিবির পরিবারতন্ত্রের কথা তুলেছিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০২৩ ০৭:১৭
Mamata Banerjee.

নামখানার নারায়ণপুরে অভিষেককে উপহার মমতার। ছবি: সমরেশ মণ্ডল

শাসকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি এখন রাজ্য রাজনীতিতে সব চেয়ে বড় বিষয়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিবার সেই অভিযোগের অন্যতম নিশানা। এই পরিস্থিতিতে মমতা এ বার তাঁর পরিবারের ‘অর্থের উৎস’ নিয়ে মুখ খুললেন। পঞ্চায়েত নির্বাচনের মুখে দলীয় সভায় বিরোধীদের লক্ষ্য করে শুক্রবার তিনি বলেন, ‘‘আমরা যাঁরা তৃণমূল করি, তাঁদের পরিবারকে কুৎসিত ভাষায় আক্রমণ করা হয়। আমাকে কী না বলে! অভিষেককেও কী না বলে!’’

তৃণমূল এবং তাঁর পরিবারের দিকে বিরোধীদের তোলা দুর্নীতির অভিযোগের জবাব দেন মমতা। তাঁর বক্তব্য, ‘‘যাঁরা ছোট ছিল ( পরিবারে) বড় হয়েছে। সবাই নিজের মতো কাজ করছে। ছেলেমেয়েরা চাকরি করছে। নিজেরা নিজেদের মতো থাকে। আমার কাছ থেকে কিছু আশাও করে না। তবুও বলছে, ওর এত টাকা হল কী করে?’’ নিজের আর্থিক উপার্জনের খতিয়ান তুলে তৃণমূল নেত্রীর দাবি, ‘‘আজ পর্যন্ত কেউ বলতে পারবে না, আমি কারও কাছ থেকে এক পয়সা খেয়েছি। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মাসে দেড়- দু’লক্ষ টাকা মাইনে পেতে পারি। নিইনি। সাত বারের সাংসদ হিসেবে সেখানকার পেনশন মেলালে মাসে আড়াই-তিন লক্ষ টাকা রোজগার হয়ে যায়। নিই না। আমি একা মানুষ। আমার কে খাবে? ১২৫ টি বই লিখেছি। তার রয়্যালটিতে আমার চলে যায়।’’

পরিবারতন্ত্রের অভিযোগ তুলে লাগাতার মমতাকে নিশানা করছে বিরোধী দলগুলি। বিশেষ করে তারা আক্রমণ করে থাকে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক উত্থান নিয়ে। এ দিন মমতা বলেন, ‘‘অনেকে বলে, ওই তো দিদি এসে ভাইপোকে এমপি করে দিয়েছে। ওই তো পরিবারতন্ত্র। আপনারা অনেকেই জানেন না, ও রাজনীতি করে দু’বছর বয়স থেকেই।’’

২০১৪ সালে ডায়মন্ড হারবার লোকসভা আসনে প্রথম সাংসদ নির্বাচিত হন অভিষেক। তখন থেকেই মমতা-অভিষেককে নিয়ে বিরোধী শিবির পরিবারতন্ত্রের কথা তুলেছিল। তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার সময় ‘পিসি-ভাইপো’র দল বলে ওই কটাক্ষ করেছিলেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর মতো নেতারাও। এ দিন দলের অন্যতম ‘মুখ’ হিসেবে অভিষেকের ৫০ দিনের জনসংযোগ কর্মসূচি শেষে কাকদ্বীপের সভামঞ্চে তাঁকে পাশে বসিয়েই মমতা বলেন, ‘‘ও আজকে রাজনীতি করছে না।’’

ছোটবেলা থেকে অভিষেক যে রাজনীতি সচেতন এবং তাঁর (মমতা) রাজনৈতিক লড়াইয়ের ইতিহাস জানেন, তা মনে করিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। মমতার কথায়, ‘‘১৯৯০ সালে সিপিএম যখন আমাকে মেরে চৌচির করে দিয়েছিল, আমি হাসপাতাল থেকে বাড়ি এসেছি, মা জিজ্ঞাসা করছিল, কী করে সে সব ঘটেছিল, অভিষেকের তখন ২ বছর বয়স। মার কোলে বসে সব ঘটনা শুনেছে। তার পর দিন থেকেই একটা ঝাণ্ডা নিয়ে বলত, দিদিকে মারলে কেন সিপিএম জবাব দাও। প্রতিদিন মিছিল করত। তার পর থেকে করেই এসেছে।’’ সেই সময়ের একটি পারিবারিক ছবিও সভামঞ্চে অভিষেকের হাতে তুলে দেন তৃণমূল নেত্রী।

অভিষেক দু’বছর থেকে রাজনীতি করছেন— মমতার এই মন্তব্যকে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি বিরোধীরা। রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘এটা দুর্ভাগ্যের কি না জানি না। তবে অবাক লাগছে, মুখ্যমন্ত্রীর কথা বলার মতো দলের কেউ নেই। আজ তাঁকেই আত্মপক্ষ সমর্থন করতে হচ্ছে।’’ সিপিএমের সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ওই বয়সে রাজনীতিতে! গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস-এ জায়গা পাবেন ওঁরা। যখন সুকুমারবৃত্তি শেখা উচিত, তখন রাজনীতি শিখেছেন!’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Mamata Banerjee TMC

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy