তপনে সরকারি অনুষ্ঠানের মঞ্চে বিপ্লব মিত্রের সঙ্গে কথা বলছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার অমিত মোহান্তের তোলা ছবি।
আগের সফরে অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়ে গিয়েছিলেন। তার অনেক প্রকল্পের কাজ এগোয়নি। কিন্তু এ বারেও দক্ষিণ দিনাজপুর সফরে এসে আজ, মঙ্গলবার তপনের জনসভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী বহু প্রকল্পের উদ্বোধন করলেন। মঙ্গলবার দক্ষিণ দিনাজপুরের তপনে জনসভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী ২৫টি প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। প্রকাশ্য জনসভার শুরুতে তিনি বলেন, ‘‘প্রতি বছর আমি জেলায় এসে ডিএম বিডিওদের সঙ্গে সভা করি। তাদের কলকাতায় ঢুকতে হয় না।’’ তিনি জানান, আগামী ২৭ জানুযারী রাজ্যের ৯কোটি মানুষের মধ্যে ৭কোটি মানুষ দু’টাকা কেজি দরে চাল ও গম পাবেন। আরও ৭০ লক্ষ মানুষ, যারা সাদা ফর্মে আবেদন করেছেন তাদের বাজার দরের চেয়ে অর্ধেক দামে চাল ও গম বিলি করা হবে। তবে গতবার শিলান্যাস করে যাওয়া প্রতি ব্লকে আইটিআই কলেজ, কিসান মান্ডি, কর্মতীর্থের মতো অনেক প্রকল্পের কাজের সুফল এখনও মেলেনি বলে বিরোধীদের অভিযোগ। এ দিন তপনের সভামঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী বালুরঘাট হাসপাতালের বহির্বিভাগের দোতলা ভবনের উদ্বোধন করলেও তার কাজ এখনও শেষ হয়নি। গত বছর জেলায় এসে মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ্য সভায় কী বলেছিলেন, কোন কোন প্রকল্প রূপায়ণের কথা ঘোষণা করেছিলেন—একবার নজর দেওয়া যাক।
আইটিআই: মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী রাজ্যের সব ব্লকে আইটিআই কলেজ হচ্ছে। কোথাও তৈরি হয়ে গিয়েছে। ফলে টেকনিক্যাল ট্রেনিং জেলায় ও ব্লকে বসে ছেলেমেয়েরা নিতে পারবে। এর মাধ্যমে আগামী ৩ বছরে ১০ লক্ষ ছেলেমেয়ে চাকরি পাবে। কিন্তু সব ব্লকে আইটিআই কলেজ তৈরি শেষ হয়নি বলে অভিযোগ।
শিলিগুড়ি সুকনায় হেলিকপ্টার থেকে নামছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র।
কর্মশ্রী: গত বছর গঙ্গারামপুর সভামঞ্চ থেকে নতুন এই প্রকল্পটির নামকরণ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ১০০ দিনের প্রকল্পে এক জন মাটি কাটার কাজে ২০ দিন কাজ পেলেন। তাকে ওই প্রকল্পে বনসৃজন এবং এলাকার দূষণমুক্ত পরিবেশের জন্য সাফাই কাজের মাধ্যমে আরও ২০ থেকে ৩০ দিন কাজ দেওয়া হল। এই ভাবে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করে একত্রীকরণের কাজই হচ্ছে কর্মশ্রী। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি হল, কর্মশ্রী প্রকল্প এ জেলায় সর্বত্র শুরু হয়নি। জেলাশাসক তাপস চৌধুরীর দাবি, ‘‘হর্টিকালচার, পোলট্রি তৈরির মতো বিভিন্ন প্রকল্পে মাটি কাটার কাজের জন্য জবকার্ডধারীদের কাজে লাগানো হয়েছে।’’
কর্মতীর্থ: রাজ্যে ৫০০টি মার্কেট তৈরি করার কথা বলা হয় যাতে গরিব ছেলেমেয়েরা বিনামূল্যে একটি করে দোকান পাবে। এতে ১ লক্ষ ছেলেমেয়ে দোকান পাবে। একটি দোকানে আরও দু’জন করে কর্মচারী যুক্ত হবে। তা হলে মোট ৩ লক্ষ বেকার ছেলেমেয়ে কাজ পাবে। ইতিমধ্যে ৪৮টি মার্কেট হয়ে গিয়েছে। কিন্তু জেলায় ৭টি কর্মতীর্থ তৈরি হলেও মাত্র ১টি চালু করা গিয়েছে।
সিঙ্গাপুর: মুখ্যমন্ত্রী সে দিনের সভায় বলেছিলেন, কয়েক দিনের মধ্যে সিঙ্গাপুর যাচ্ছি। আপনাদের দক্ষিণ দিনাজপুরের স্বনির্ভর মহিলা গোষ্ঠীর তৈরি ব্যাগ এবং উত্তর দিনাজপুরের তুলাইপাঞ্জি চাল সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাব। আমেরিকা, ইউরোপের দেশে বিক্রি হবে। এতে জেলায় স্মল স্কেল ইন্ডাস্ট্রি হবে। প্রকল্পের অগ্রগতির বিষয়ে জেলাশাসকের দাবি, ইতিমধ্যে ৩৭টি ছোট শিল্প গড়ার প্রকল্পে আবেদন পড়েছে, কাজ এগোচ্ছে।
এক্সপোর্ট বাজার: হিলিতে এক্সপোর্ট মার্কেট তৈরি করা হবে বলে মুখ্যমন্ত্রী গতবার ঘোষণা করে যান। বাস্তব পরিস্থিতিটি হল, জায়গা চিহিৃত করা ছাড়া আর কোনও কাজ এগোয়নি। জেলাশাসকের বক্তব্য, হিলিতে এক্সপোর্ট জোনের জন্য প্রায় তিন একর জমি নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। তবে কেন্দ্রীয় সরকার আরও জমি চাইছে।
চিকিৎসক: মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ্য সভায় বলেছিলেন, গত ৩ বছরে রাজ্যের হাসপাতাল গুলিতে ১২,০০০ শয্যা বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু ডাক্তার নেই, নার্স নেই। আরও ৭০০ ডাক্তারকে নিয়মিত করা হচ্ছে। নার্সদের ট্রেনিং দেওয়া হচ্ছে। মেল নার্সের জন্য ছেলেরাও কাজ করতে পারে, তা দেখা হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে তার কিছুই হয়নি বলে অভিযোগ।
পরিষেবা: মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা, গত ৩ বছরে উত্তর দিনাজপুরে মোট জনসংখ্যার ৬০ শতাংশ এবং দক্ষিণ দিনাজপুরে মোট জনসংখ্যার ৫০ শতাংশ মানুষকে ব্যাঙ্ক ঋণ দেওয়া হবে। মৎস্যজীবী, লোকশিল্পীদের ভাতা, পেনশন দেওয়া হবে। মোটর ও নির্মাণ শ্রমিকদের আর্থিক সহায়তা, ভূমিহীনদের জমি, বাড়ি সহ বিভিন্ন সরকারি পরিষেবা দেওয়া হয়েছে।
উর্দু কলেজ: উত্তর দিনাজপুরে উর্দু কলেজ হতে পারে বলে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন। এখনও সেই উর্দু কলেজ তৈরি হয়নি।
গত বছর মুখ্যমন্ত্রী যখন প্রকাশ্য জনসভায় এও অভিযোগ করেছিলেন, ‘‘টাকা নেই। সব টাকা কেন্দ্র কেটে নিয়ে যাচ্ছে। রাজ্য চালাতে হিমশিম অবস্থা। তার মধ্যে ওই সমস্ত প্রকল্প কী করে রূপায়ণ সম্ভব হবে, তার বিস্তারিত তথ্য মুখ্যমন্ত্রী সেসময় দেননি। ফলে এবারে ফের নতুন করে একগুচ্ছ প্রকল্পের শিলান্যাসের চাপে পুরনো প্রকল্পগুলি হারিয়ে যাবে কি না, তা নিয়ে বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy