পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনিতে জিন্দলগোষ্ঠীর তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের শিলান্যাস করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই অনুষ্ঠানে তাঁর সঙ্গে ছিলেন বাংলার ‘ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর’ সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ও। দিদি-দাদার ‘যুগলবন্দি’তে শুধু তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র নয়, ২০০০ একরের শিল্পপার্কেরও শিলান্যাস হল শালবনিতে।
চলতি বছরের বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে শালবনিতে তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ার ঘোষণা করেছিল জিন্দল গোষ্ঠী। সোমবার সেই প্রকল্পের শিলান্যাস করে ‘ঐতিহাসিক’ বলে আখ্যা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। তাঁর প্রশংসায় পঞ্চমুখ জিন্দল গোষ্ঠীর কর্ণধার সজ্জন জিন্দল। তাঁর কথায়, ‘‘লাখো নেতার মধ্যে এমন নেতা একজনই মেলে।’’ সৌরভও বললেন, ‘‘জিন্দলেরা এসে শালবনির পরিবেশ পাল্টে দিয়েছেন। আগামী পাঁচ বছরে অনেক উন্নতি হবে শালবনির। মুখ্যমন্ত্রী সব সময় পাশে থাকেন। শালবনির তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য গোটা রাজ্যেরই সার্বিক উন্নয়ন হবে।’’
শালবনিতে ৮০০ মেগাওয়াটের দু’টি বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ে তুলতে ১৬,০০০ কোটি টাকা লগ্নি করছে সজ্জনের সংস্থা ‘জেএসডব্লিউ এনার্জি’। সোমবার প্রকল্প শিলান্যাসের মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, ‘‘শালবনির এই প্রকল্প বাংলার ল্যান্ডমার্ক প্রকল্প। তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য রাজ্যের ২৩টি জেলাই উপকৃত হবে। উৎপাদিত বিদ্যুৎ রাজ্য কিনে নেবে। ইতিমধ্যেই সেই চুক্তি স্বাক্ষর হয়ে গিয়েছে। এমন প্রকল্প পূর্ব ভারতে কখনও হয়নি। এটা পরিবেশবান্ধব প্রকল্প।’’

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
শালবনিতে ইস্পাত প্রকল্পের জন্য যে জমি জিন্দলদের হাতে ছিল, সেখানেই গড়ে উঠবে বিদ্যুৎ প্রকল্প। বাম আমলে ওই জমিতে একটি বৃহৎ ইস্পাত কারখানা গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেওয়া হলেও ২০০৮ সালের ২ নভেম্বর মাওবাদী হামলার পর তা স্থগিত হয়ে যায়। সে দিন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য একটি কর্মসূচিতে যোগ দিতে শালবনি থেকে মেদিনীপুরে গিয়েছিলেন। ফেরার পথে তাঁর কনভয়ে ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণ ঘটায় মাওবাদীরা। ঘটনাচক্রে, সেই কনভয়ে শামিল ছিল কেন্দ্রীয় ইস্পাত মন্ত্রী রামবিলাস পাসওয়ানের গাড়িও। এর ফলে সন্ত্রাসের আবহে থেমে যায় শিল্প স্থাপনের প্রক্রিয়া। তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের ঘোষণায় নতুন করে আশার আলো দেখতে শুরু করেছেন শালবনি এবং পার্শ্ববর্তী প্রায় ৩০টি গ্রামের মানুষ, যাঁরা এক সময় জমি দিয়েছিলেন বড় কারখানার আশায়।
আরও পড়ুন:
মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, শালবনির বিদ্যুৎকেন্দ্রে অন্তত ১৫ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। জিন্দল গোষ্ঠীর কর্তা জিন্দলও বার্তা দিয়েছেন যে, এই প্রকল্পে স্থানীয়েরা কাজ পাবেন। তিনি বলেন, ‘‘শালবনিতে গত ১০ বছরে অনেক উন্নতি হয়েছে। দেখে মনে হয়, এ রকমই হওয়া উচিত। এখানকার জমি কৃষকদের। তাই তাঁরা যাতে উপকৃত হন, সেটা আমাদের দেখতে হবে। দিদিও আমাকে সে কথা বার বার বলেছেন। এই তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে কোনও দূষণ হবে না, এটা আমরা নিশ্চিত করব।’’
শালবনির মঞ্চে আরও কয়েকটি ঘোষণা করেছেন মমতা। তিনি জানিয়েছেন, বক্রেশ্বর-দুর্গাপুরে ৬৬০ মেগাওয়াটের দু’টি বিদ্যুৎকেন্দ্র হবে। ৮০০ মেগাওয়াটের আরও দু’টি বিদ্যুৎকেন্দ্র হবে সাঁওতালডিতেও। বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে আরও ৪৮ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হবে। এ ছাড়াও মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘বাংলায় ছ’টি ইকনমিক করিডর তৈরি হচ্ছে। পুরুলিয়ায় বিনিয়োগ করবে পাঁচটি বড় শিল্প সংস্থা। রাজ্য স্কিল ট্রেনিং সেন্টারও তৈরি করবে।’’