Advertisement
০৪ মে ২০২৪
Crime

ভোটে সুবিধা পেতেই কি ষড়যন্ত্র, প্রশ্ন মমতার

রাজ্যে এসে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ অবশ্য বলেছেন, মন্ত্রীর উপরে হামলার ঘটনায় সিবিআই তদন্ত করানোর জন্য কেন্দ্রীয় সরকার তৈরি।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৫:৩৭
Share: Save:

জাকির হোসেনের উপরে হামলার পিছনে ‘বড় ধরনের ষড়যন্ত্র রয়েছে’ বলে মনে করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কে বা কারা এই ষড়যন্ত্রে জড়িত, তা নিয়ে সরাসরি কারও নাম করেননি তিনি। তবে ইঙ্গিত দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার পৈলানে দলীয় কর্মিসভায় মমতা বলেন, ‘‘আমার ধারণা, এরা কলকাতা, মালদহ এবং মুর্শিদাবাদ দিয়ে ভোট শুরু করবে। তাই জাকিরকে খুন করে সরিয়ে দেওয়া ছিল ওদের টার্গেট।’’ কারণ? ‘‘জাকির হোসেন খুব জনপ্রিয় নেতা,’’ তাঁর বক্তব্য। এই ঘটনায় ‘গাফিলতির’ যাবতীয় দায় তিনি চাপিয়েছেন রেলের উপরে। তিনি জানিয়েছেন, রাজ্য সরকারের ‘সিট’ বা বিশেষ তদন্তকারী দলের অন্যতম লক্ষ্যই হবে, কেন স্টেশনে আলো ছিল না, কেন ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরে রেলের কারও দেখা মেলেনি— এই সব প্রশ্নের জবাব খোঁজা।

রাজ্যে এসে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ অবশ্য বলেছেন, মন্ত্রীর উপরে হামলার ঘটনায় সিবিআই তদন্ত করানোর জন্য কেন্দ্রীয় সরকার তৈরি। রাজ্য সরকার চাইলে সিবিআইয়ের সাহায্য নিতে পারে। কলকাতায় এবিপি নিউজের কনক্লেভ অনুষ্ঠানে এই নিয়ে প্রশ্নের জবাবে এ দিন শাহ বলেছেন, ‘‘এক জন মন্ত্রীর উপরে এমন হামলা অত্যন্ত উদ্বেগজনক ঘটনা। রাজ্য সরকার চাইলে ঘটনার সিবিআই তদন্ত করাতে পারে। কেন্দ্রীয় সরকার প্রস্তুত আছে।’’

রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় আবার চাইছেন, ঘটনার এনআইএ তদন্ত হোক। এসএসকেএমে জাকিরকে দেখে বেরনোর সময়ে তিনি বলেন, ‘‘যে ধরনের বিস্ফোরণ হয়েছে, তাতে এনআইএ দিয়ে তদন্ত করানো উচিত।’’ এনআইএ-কে তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সরকারের। খাগড়াগড়ের ক্ষেত্রেও কেন্দ্রের নির্দেশে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা তদন্ত শুরু করেছিল। এ ক্ষেত্রেও এমন কিছু ঘটবে কিনা, তার সম্ভাবনা উস্কে দিয়েছেন রাজ্যপাল।

মমতার নিশানায় এ দিন ছিল রেল। সকালে তিনি যখন এসএসকেএমে জাকিরকে দেখতে যান, তখন মন্ত্রীর অস্ত্রোপচার চলছে। বেরিয়ে এসে তিনি বলেন, ‘‘ওই বিস্ফোরণের ঘটনা রেলের এলাকায় হয়েছে। সেখানে রাজ্য পুলিশের কোনও ভূমিকা নেই। ওইখানে গাফিলতি ছিল।’’ তাঁর কথায়, ‘‘রেলের তরফে কোনও নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়নি। রেলের কোনও ঘটনা ঘটলে জিআরপি রাজ্য পুলিশকে জানিয়ে অভিযোগ দায়ের করে। কিন্তু রেলের এলাকায় কেন্দ্রীয় সংস্থা তদন্ত করে।’’ তখনই তিনি জানিয়ে দেন, ‘‘গভীর ষড়যন্ত্র হয়েছে, সিট তা তদন্ত করবে।’’ পরে পৈলানে কর্মিসভাতেও তিনি বলেন, ‘‘জাকির রেলে যাবে, নিশ্চয়ই তারা (রেল) জানত। তা সত্ত্বেও কোনও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়নি। রেলের ভিতরের সব রেল পুলিশের অধীনে থাকে, রাজ্যের পুলিশের অধীনে থাকে না।’’

মুখ্যমন্ত্রীর এই কথার রেল অবশ্য প্রতিবাদ করেছে। রেল মন্ত্রকের পক্ষ থেকে এ দিন বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, ‘আইনশৃঙ্খলা রাজ্যের বিষয় এবং তা রক্ষার দায় রাজ্য পুলিশের। রেলওয়ে প্ল্যাটফর্মের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব রাজ্যের রেল পুলিশ জিআরপি-র অধীনে।’ রেলের দাবি, ‘গোটা ঘটনায় তাদের উপরে সরাসরি কোনও দায় বর্তায় না।’

বিজেপির নেতা-মন্ত্রীরাও এ দিন ঘটনার জন্য রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দিকে আঙুল তুলেছেন। দুর্গাপুরের ফরিদপুর (লাউদোহা) থানার গৌরবাজারে এক কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় বলেন, ‘‘এটা তো গোয়েন্দা ব্যর্থতা। এমন একটা ঘটনা ঘটতে চলেছে বা এক জন মন্ত্রীর উপরে সুপরিকল্পিত ভাবে রিমোট কন্ট্রোলে বোমাবাজি করা হবে, এর কোনও খবর পুলিশের কাছে পৌঁছল না, এটা মেনে নেওয়া খুবই শক্ত।’’ তিনি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীকে বলব, পুলিশের সঙ্গে খোঁজার চেষ্টা করুন, কেন এমন ঘটল। শুধু শুধু রেলের উপরে দোষ চাপিয়ে দায়িত্বহীনতার মতো কাজ করবেন না।’’ বর্ধমানে বিজেপির ‘পরিবর্তন যাত্রা’য় যোগ দিয়ে মধ্যপ্রদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নরোত্তম মিশ্রও বলেন, ‘‘বাংলায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এত খারাপ হয়ে গিয়েছে যে, কেউ সুরক্ষিত নয়। মন্ত্রীর উপরেও হামলা হচ্ছে। তা-ই পশ্চিমবঙ্গে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা উচিত বলে আমি মনে করি।’’ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী এবং বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী জাকিরের উপরে হামলার কড়া নিন্দা করে অপরাধীদের গ্রেফতার দাবি করেছেন।

ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব নিয়ে সরাসরি মন্তব্য এড়িয়ে গিয়েছেন মুর্শিদাবাদের বেশির ভাগ তৃণমূল নেতা। দলের জেলা কো-অর্ডিনেটর সৌমিক হোসেন বলেছেন, ‘‘জাকিরের উপরে কেউ হামলার ষড়যন্ত্র করবে, এটা ভাবা যায় না। পুলিশ তদন্ত করছে। সঠিক তথ্য উঠে আসবে।’’ প্রাক্তন বিধায়ক ও দলের সহ-সভাপতি ইমানি বিশ্বাসের কথায়, ‘‘ষড়যন্ত্র আছে কিনা, তা নিয়ে তদন্তের আগে কিছু বলা ঠিক হবে না।’’ তবে জেলা তৃণমূল সভাপতি আবু তাহের খান ষড়যন্ত্রের কথা উড়িয়ে দেননি। কিন্তু সরাসরি এই নিয়ে কারও দিকে আঙুল তোলেননি।

কংগ্রেসের ফরাক্কার বিধায়ক মইনুল হক কিন্তু এর জন্য তৃণমূলের গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বকেই দায়ী করেছেন। তাঁর কথায়, “এই প্রথম নয়। জাকিরের বাড়িতে একাধিক বার হামলা হয়েছে অতীতে। মুড়ি-মুড়কির মতো বোমা পড়েছে। আমি তার বাড়িতে ছুটে গেছি।’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘কারা করেছে সে সব? জাকিরের নিজেরই উচিত সে সব খুলে বলা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

mamata banerjee Violence Crime Jakir hossain
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE