Advertisement
১৬ মে ২০২৪
Mamata Banerjee

চোপড়া, ইসলামপুরে দল যুক্ত নয়, ‘প্রতিবাদ’ হয়েছে ভাঙড়ে, মনোনয়নে হিংসা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা

শুক্রবার মনোনয়ন পেশের শেষ দিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “চোপড়া আর ইসলামপুরে যে সমস্যাটা হয়েছে, তাতে দল কোনও ভাবেই যুক্ত নয়।” একই সঙ্গে তিনি বলেন, “যারা এই কাজ করেছে, তাদের টিকিট দিইনি।”

Mamata Banerjee said TMC has not involved in violence over Panchayat Election

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০২৩ ১৮:০৯
Share: Save:

পঞ্চায়েত নির্বাচনে মনোনয়ন পেশ নিয়ে একাধিক হিংসার ঘটনা প্রকাশ্যে এলেও তার কোনওটির সঙ্গেই তৃণমূলের কেউ যুক্ত নয় বলে জানিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের শাসকদলের বিরুদ্ধে বিরোধী দলগুলি মনোনয়ন পেশে ‘বাধা’ দেওয়ার যে অভিযোগ তুলেছে, তা সরাসরি খারিজ করে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমাদের দলের স্পষ্ট নির্দেশ, যে যার মতো মনোনয়নপত্র জমা দেবে।” মুখ্যমন্ত্রী এ-ও জানান যে, লক্ষাধিক মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে। তাঁর মতে, ‘‘এমনটা কোনও রাজ্যে, কোনও দিন হয়নি।’’

একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, ভাঙড়ে যারা বিরোধী, তাদের ভাঙচুরের ‘প্রতিবাদ’ হয়েছে। মনোনয়ন-পর্বের গোড়ার দিন থেকেই বার বার শিরোনামে উঠে এসেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়। গত কয়েক দিন ধরেই সেখানে হিংসাত্মক ঘটনা ঘটছে। বৃহস্পতিবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।

সেই দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ডায়মন্ড হারবারে দাঁড়িয়েই ভাঙড়ের অশান্তির জন্য নাম না করে ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট (আইএসএফ)-কে দুষেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এ-ও জানিয়েছেন যে, ভাঙচুরের ‘প্রতিবাদ’ করেছে তৃণমূল। তাঁর কথায়, “যারা বিরোধী আছে ওখানে, নতুন জিতেছে, তারাই প্রথম করেছে পরশু দিন (মঙ্গলবার)। ভাঙচুর করেছে, মানুষকে বিপথে চালিত করে, সাম্প্রদায়িক স্লোগান দিয়ে সবাইকে জোগাড় করে ওখানে ভাঙচুর, লুটতরাজ, অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।” তার পরই তিনি বলেন, “আমাদের তরফে কালকে (বুধবার) একটা প্রতিবাদ হয়েছে। যেটা সত্যি আমি বলব।” উল্লেখ্য, ভাঙড়ের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে সেখানকার আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি বুধবারই নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু ‘ব্যস্ততার কারণে’ মুখ্যমন্ত্রী সময় দিতে পারেননি বলে জানান নওশাদ। অনেকে বলছেন, বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রীর এমন ইঙ্গিত রয়েছে যে, ভাঙড়ে গোলমাল আইএসএফ শুরু করেছিল বলেই তিনি নওশাদের সঙ্গে দেখা না-করে থাকতে পারেন। যদিও আনুষ্ঠানিক ভাবে মুখ্যমন্ত্রী বা তাঁর সচিবালয়ের তরফে এমন কিছু বলা হয়নি।

বৃহস্পতিবার উত্তর দিনাজপুরের চোপড়ায় বিডিও অফিসে মিছিল করে মনোনয়ন জমা দিতে যাওয়ার পথে গুলি চলার অভিযোগ ওঠে। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তিন জনকে ইসলামপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁদের মধ্যে এক জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা যায়। স্থানীয় সূত্রে বলা হয়, বাম এবং কংগ্রেস প্রার্থীরা মিছিল করে মনোনয়ন জমা দিতে যাচ্ছিলেন। আচমকা মিছিলের উপর গুলি চালানো হয় বলে অভিযোগ। এতে ছত্রভঙ্গ হয়ে যান মনোনয়ন জমা দিতে যাওয়া বিরোধী প্রার্থীরা। অভিযোগ, তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরাই মিছিল লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছে। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে জোড়াফুল শিবির। অন্য দিকে, মনোনয়ন পেশের শুরুর দিন থেকেই বার বারই হিংসায় উত্তপ্ত হয়েছে ভাঙড়। কখনও তৃণমূলের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ তুলে সরব হয়েছে আইএসএফ, কখনও আইএসএফ-এর বিরুদ্ধে সরব হয়েছে তৃণমূল। বৃহস্পতিবার মনোনয়ন পেশের শেষ দিনেও উত্তপ্ত থেকেছে ভাঙড়।

উত্তর দিনাজপুরের চোপড়া এবং ইসলামপুরে হিংসার ঘটনা নিয়ে মুখ খুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “চোপড়া আর ইসলামপুরে যে সমস্যাটা হয়েছে, তাতে দল কোনও ভাবেই যুক্ত নয়।” একই সঙ্গে তিনি বলেন, “যারা এই কাজ করেছে, তাদের আমরা টিকিট দিইনি। তারা গতকাল (বুধবার) অবধি টিকিট চেয়েছে। কিন্তু তাদের কাজে দল সন্তুষ্ট নয় বলে টিকিট দেওয়া হয়নি।” পাশাপাশিই মুখ্যমন্ত্রী জানান, যাঁরা ‘মানুষের কাজ’ করেননি, তাঁদের এ বারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে টিকিট দেওয়া হয়নি। হিংসার নেপথ্য কারণ হিসাবে পঞ্চায়েত ব্যবস্থার একটি ‘সমস্যা’র কথাও তুলে ধরেন তিনি। তাঁর কথায়, “অনেক সময় একটা বাড়ি থেকে ৩-৪ জন দাঁড়িয়ে যায়। ফলে বাবা-কাকা, ভাই-জ্যাঠা— পারিবারিক সমস্যাগুলো দেখা যায়।” চোপড়ার ঘটনাতেও সেই ‘সমস্যা’ রয়েছে বলেই জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

প্রত্যাশিত ভাবেই বিরোধীদের সমালোচনা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। বিজেপি শাসিত ত্রিপুরার পঞ্চায়েত ভোটের উদাহরণ টেনে তিনি জানিয়েছেন, সেখানে ৯০ শতাংশ আসন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেতে শাসকদল। রাজ্যে বাম আমলের হিংসার প্রসঙ্গও তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। পরিসংখ্যান তুলে ধরে জানান, ২০০৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে ৩৬ জন মারা গিয়েছিলে। ২০১৩ সালে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে নির্বাচন করিয়েও ৩৯ জনের প্রাণ গিয়েছিল বাংলায়। সেই অতীতে ইতিহাসের সঙ্গে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির তুলনা টেনে মমতা বলেন, “৭৩ হাজার বুথের মধ্যে ৩-৪টে বুথে গন্ডগোল হয়েছে। আমি পুলিশ-প্রশাসনকে পদক্ষেপ করতে বলেছি।”

উল্লেখ্য, শুক্রবার তৃণমূলের ‘নবজোয়ার যাত্রা’র শেষ দিন। সে দিন কাকদ্বীপে একই মঞ্চ থেকে ভাষণ দেওয়ার কথা মমতা এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তৃণমূল সূত্রের খবর, ওই মঞ্চ থেকেই আনুষ্ঠানিক ভাবে পঞ্চায়েত ভোটের প্রচার শুরু করে দেবেন তাঁরা। ওই কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকতে শুক্রবারেই ডায়মন্ড হারবারে পৌঁছে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE