Advertisement
১১ মে ২০২৪
Mamata Banerjee

বদলা নয়, ২০২৪-এ বদল করে দেখাব, কেন্দ্রকে চ্যালেঞ্জ মুখ্যমন্ত্রী মমতার, পাল্টা বিজেপির

মুর্শিদাবাদ থেকে মমতা বলেন, ‘‘রোজ কেন্দ্রীয় দল পাঠিয়ে হয়রান করছেন আপনারা। কিন্তু মনে রাখবেন, বদলা আমি নেব না, কিন্তু বদল আমি আপনাদের করে ছাড়বই!’’ বিজেপির পাল্টা, মমতা স্বপ্ন দেখছেন।

মুর্শিদাবাদের সভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

মুর্শিদাবাদের সভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র।

বিমান হাজরা
সাগরদিঘি শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০২৩ ০৬:৪০
Share: Save:

আগামী লোকসভা নির্বাচনে দেশে ‘বদল’ আনার চ্যালেঞ্জ নিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্রীয় সরকারকে নিশানা করে সোমবার মুর্শিদাবাদের সভা থেকে তিনি বলেন, ‘‘রোজ কেন্দ্রীয় দল পাঠিয়ে হয়রান করছেন আপনারা। কিন্তু মনে রাখবেন, বদলা আমি নেব না, কিন্তু বদল আমি আপনাদের করে ছাড়বই!’’ তাঁর কথায়, ‘‘রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারকে কি আটকানো যায়? মাঝে মধ্যে খাঁচায় ভরে একটু আটকানো যায়, কিন্তু বেশি দিন নয়।’’

বিজেপির তরফে পাল্টা বলা হয়, মমতা স্বপ্ন দেখছেন। ২০২৪ সালেও পদ্মফুলই ফুটবে।

রাজ্যে একাধিক কেন্দ্রীয় প্রকল্প নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। তার মধ্যে রয়েছে একশো দিনের কাজ, আবাস যোজনাও। এই সব প্রকল্পের কাজ কেমন হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখতে একাধিক বার কেন্দ্রীয় দল এসেছে রাজ্যে। আবাস যোজনার তালিকায় ছাড়পত্র দেওয়ার পরেও নিজেদের বরাদ্দ অর্থ দেয়নি কেন্দ্র। বরং আবার কেন্দ্রীয় দল এসেছে রাজ্যে। কেন্দ্র বরাদ্দ না দেওয়ায় রাজ্যও নিজেদের বরাদ্দ দিতে পারছে না। একশো দিনের কাজেও বেশ কিছু দিন ধরে দুর্নীতির অভিযোগে বরাদ্দ বন্ধ করে রেখেছে কেন্দ্র। তার ফলে রাজ্যে গ্রামীণ কর্মসংস্থান বড় ধাক্কা খেয়েছে বলেও দাবি প্রশাসনিক মহলের একাংশের।

এই পরিস্থিতিতে এ দিন মুখ্যমন্ত্রী এক দিকে কেন্দ্রকে আক্রমণের পথ নিয়েছেন। অন্য দিকে, কার্যত মেনেও নিয়েছেন যে, রাজ্যের ভাঁড়ারে অনটন। তিনি এ দিন বলেছেন, ‘‘রাম-বাম-শ্যাম এক হয়েছে, আমাকে ভাতে মারতে। আমাকে ভাতে মারতে গিয়ে তারা কৃষক, শ্রমিক, মহিলা, ছাত্রদেরও ভাতে মারার চেষ্টা করছে। আপনাদের লজ্জা করে না?’’ তার পরেই তাঁর মন্তব্য, ‘‘ক্ষমতা দেখাচ্ছেন? এই ক্ষমতা আজ রয়েছে কাল নেই, এটা মনে রাখবেন। ক্ষমতা না থাকলে আপনারা মস্ত বড় শূন্য (বিগ জ়িরো), এটাও মনে রাখবেন।’’ একই সঙ্গে তিনি যোগ করেন, ‘‘আপনারা বুলডোজার চালালে আমি আপনাদের ‘ক্লোজ়ার’ করে দেব।’’ পাশাপাশি আবার এ-ও বলেছেন, ‘‘কেন্দ্র ন্যায্য টাকা দিচ্ছে না, তাই বিভিন্ন প্রকল্প আটকে রয়েছে। টাকা আটকে রেখেছে। কিন্তু এ ভাবে তো চলে না। এক মাসের মাইনে না পেলে পরের মাসে চলবে কী করে!’’

কেন্দ্রের এই অবস্থানের পিছনে তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যাওয়া নেতারা আছেন বলেও প্রকারান্তরে অভিযোগ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তৃণমূলের হয়ে একসময়ে মুর্শিদাবাদ জেলার দায়িত্বে ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। এখন তিনি বিজেপির বিধায়ক। এ দিন জাকির হোসেনের বাড়িতে আয়কর হানা প্রসঙ্গে মমতা বলেন, ‘‘আমি এই জেলায় এক জনকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম। সে বিভিন্ন লোকের বাড়িতে লোক পাঠাচ্ছে।’’ জাকিরের পক্ষ নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘জাকির এক জন বিড়ি শিল্পপতি। তাঁর অনেক কর্মচারী। তাঁদের নগদে মজুরি মেটাতে হয়। ক’জন বিড়ি শ্রমিক, ক’জন চাষির ব্যাঙ্কে আমানত রয়েছে? যে হেতু জাকির তৃণমূল করেন, তাই তাঁকে এই হয়রানি করা হচ্ছে। এর আগে জাকিরকে প্রাণে মারারও চেষ্টা হয়েছে।’’ এর পরেই তাঁর মন্তব্য, ‘‘বিজেপির নেতাদের বাড়িতে আগে অভিযান হোক। ইডি, সিবিআই, আইটি-কে বলুন সে সব বাড়িতে যেতে।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘আমাদের এখানে একটা চকলেট বোমা ফাটলে এনআইএ আসে। বিজেপির কর্মীদের পোকায় কামড়ালে বা বাড়িতে জোনাকি পোকা ঢুকলেও কেন্দ্রীয় দল চলে আসে।’’ তার পরেই তিনি বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলির দিকে আঙুল তুলে প্রশ্ন করেন, সেখানে কেন কেন্দ্রীয় দল যায় না?

রাজ্যের প্রতি কেন্দ্রের ‘অবিচারের’ অভিযোগ এনেই ক্ষান্ত হননি মুখ্যমন্ত্রী, উদাহরণও দিয়েছেন। তিনি দাবি করেন, সম্প্রতি দিল্লির বঙ্গভবনের সব সিসিটিভি-র ফুটেজ দিল্লি পুলিশের সাহায্যে গুজরাত পুলিশ নিয়ে গিয়েছে এবং তৃণমূলের এক সমাজসেবীকে বঙ্গভবন থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘অনুমতি ছাড়া কেউ যাতে বঙ্গভবনে প্রবেশ করতে না পারে, সে জন্য ব্যবস্থা নিতে বলব মুখ্যসচিবকে। যদি কেউ অনুমতি ছাড়া ঢোকে তা হলে আইনি পদক্ষেপ করা হবে।’’ যদিও বঙ্গভবন ও রেসিডেন্ট কমিশনার দফতরের আধিকারিকেরা এ নিয়ে মুখ খুলতে চাননি। দিল্লি পুলিশ সূত্রের বক্তব্য, এ বিষয়ে যাবতীয় পদক্ষেপ আইন মেনেই হয়েছে। তদন্তের প্রয়োজনে পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করতে পারে।

তবে এ সব করে তাঁকে ঠেকিয়ে রাখা যাবে না বলেই মমতার দাবি। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘আমাকে জব্দ করা খুব মুশকিল। আপনারা আমার একশো দিনের কাজ বন্ধ করেছেন, গরিব মানুষের কাজ বন্ধ করেছেন, জানেন তো আমি কেমন! ভাল করে বললে সব কাজ করে দেব। শুধু আপনারা কেন সারা পৃথিবী এক হয়ে গেলেও আপনারা আমায় ভাতে মারতে পারবেন না।’’

রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘স্বপ্ন দেখা ভাল। স্বপ্ন দেখলে শরীর, মন ভাল থাকে। উনি প্যারাশুটে করে নামা রাজনীতিক নন। উনি পোড়খাওয়া রাজনীতিক। উনি ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের দেওয়াল লিখন পড়ে ফেলেছেন। উনিও জানেন, লোকসভা নির্বাচনে প্রতীচীর বাগানেও পদ্মফুলই ফুটবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mamata Banerjee Lok Sabha Election BJP TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE