Advertisement
E-Paper

দিদির ডাক, মঞ্চে তাই গদাধর-সাহানেওয়াজ

সরকারি অনুষ্ঠানে বিরোধী দলের বিধায়কেরা ডাক পান না, তৃণমূল আমলে এমন ছবি খুবই পরিচিত। সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জয়দেবের সভাতেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। কিন্তু, ওই সরকারি মঞ্চেই তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে উপস্থিত থাকতে দেখা গেল পাশের বর্ধমানের এক বিধায়ককে।

দয়াল সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০১৬ ০২:০৭
একমঞ্চে। বীরভূমের বিধায়ক ও তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে কেতুগ্রামের বিধায়ক (নীল পাঞ্জাবি)।

একমঞ্চে। বীরভূমের বিধায়ক ও তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে কেতুগ্রামের বিধায়ক (নীল পাঞ্জাবি)।

সরকারি অনুষ্ঠানে বিরোধী দলের বিধায়কেরা ডাক পান না, তৃণমূল আমলে এমন ছবি খুবই পরিচিত। সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জয়দেবের সভাতেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। কিন্তু, ওই সরকারি মঞ্চেই তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে উপস্থিত থাকতে দেখা গেল পাশের বর্ধমানের এক বিধায়ককে। যাঁর দাপুটে নেতা ভাইয়ের সঙ্গে শাসকদলের জেলা সভাপতির দ্বন্দ্বের কথা বাইরের দুনিয়ার কাছে আর অজানা নয়। সেই কেতুগ্রামের বিধায়ক শেখ সাহানেওয়াজকে হাজির করে দলনেত্রী কোন বার্তা দিলেন, তা নিয়ে জেলায় শুরু হয়েছে জোর জল্পনা।

ঘটনা হল, দু’দিন আগেই গত শনিবার কালীঘাটের বাড়িতে বীরভূমের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নিয়ে কড়া বার্তা দিয়েছিলেন মমতা। ঘণ্টা দুয়েকের ওই বৈঠকেতিনি স্পষ্ট করে দেন, কোনও ভাবেই দলে গোষ্ঠী-কোন্দল বরদাস্ত করবেন না। নির্দেশ মানা না হলে সংশ্লিষ্ট নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করার হুঁশিয়ারিও দেন। সেই সঙ্গে ভোটের আগে সভা বা সংবাদমাধ্যমে বেফাঁস মন্তব্য করা যাবে না বলেও জেলার শীর্ষ নেতৃত্বকে সাফ জানিয়ে দেন দলনেত্রী।

বিরোধীদের বক্তব্য, বিধানসভা ভোটের আগে স্থানীয় কারণে অন্তর্দলীয় আকচা-আকচি যে তৃণমূলের পক্ষে যাবে না, তা বুঝতে বাকি নেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তাই ফি শনিবার তিনি এ ভাবেই কালীঘাটের বাড়িতে এক-একটি করে জেলার নেতা-নেত্রীদের ডেকে পাঠাচ্ছেন। বৈঠকে নরমে-গরমে বোঝানো হয়, নিজেদের মধ্যের ‘সমস্যা’ মিটিয়ে ফেলতে। এক বা একাধিক নেতাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়, পরিস্থিতি মেরামতের। সর্বস্তরে বার্তা দেওয়া হয়, ভোটের আগে গোষ্ঠী-কোন্দল যেন দলকে বিপাকে না ফেলে। ভাবমূর্তি রক্ষায় (‌কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের নজরদারির কথাও মাথায় রেখে) বিরোধীদের সঙ্গে সংঘাত, সংঘর্ষের রাস্তায় না হাঁটতেও পরামর্শ দেওয়া হয়। তার পরেও অবশ্য দেখা যায় বীরভূমের বৈঠক শুরুর এক ঘণ্টা আগেই খয়রাশোলে খুন হন এক তৃণমূল কর্মী। দলীয় দ্বন্দ্বেই ওই খুন বলে বিরোধীদের অভিযোগ।


সবাই এসেছেন তো? খোঁজ নিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী।

এ দিন জয়দেবে বাউল উৎসব এবং দেউচা-পাচামি কয়লাখনি প্রকল্পের উদ্বোধনে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের উদ্যোগে এবং জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় হওয়া ওই অনুষ্ঠানের মঞ্চেই আগাগোড়া মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা গেল সাহানেওয়াজকে। নানুরের বাসিন্দা সাহানেওয়াজকে এ জেলায় সরকারি অনুষ্ঠানে শেষ কবে উপস্থিত হতে দেখা গিয়েছে, মনে করতে পারছেন না দলেরই অনেকে। তিনি নিজে মুখে বলছেন, ‘‘আমি বীরভূমের লোক। সরকারি অনুষ্ঠানে ডাক পেয়েছি, তাই গিয়েছি।’’

দলেরই নেতাদের একাংশ অবশ্য জানাচ্ছেন, জেলায় গত তিনটি (‌বোলপুর, ইলামবাজার ও সিউড়ি) মুখ্যমন্ত্রীর সফরে ডাক পাননি দলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের বিরোধী গোষ্ঠীর নেতা বলে পরিচিত নানুরের তৃণমূল নেতা শেখ কাজলের দাদা সাহানেওয়াজ। লাগোয়া বধর্মান জেলার কেতুগ্রামের বিধায়ক শেখ সাহনেওয়াজ এবং তাঁর ভাই কাজল শেখের সঙ্গে অনুব্রত-ঘনিষ্ঠ নানুরের বিধায়ক গদাধর হাজরার পারস্পরিক বিরোধ বহু বার অস্বস্তিতে ফেলেছে দলকে। গত শহিদ দিবসের পরেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নিয়ে খোদ মুখ্যমন্ত্রীর কাছে কড়া বার্তা পান জেলার নেতারা। আর তার পরে দুই গোষ্ঠী প্রকাশ্যে হাত মেলালেও ‘যুদ্ধ-বিরতি’ হয়নি বলেই টিপ্পনী বিরোধীদের। গত সেপ্টেম্বরে কাজলের গাড়িতে হামলা চলে। তার বদলা নিতে গদাধর গোষ্ঠীর তিন জনকে খুনের অভিযোগ ওঠে কাজল-অনুগামীদের বিরুদ্ধে।

সেই কারণেই না কি সাহানেওয়াজকে এত দিন বীরভূমের অনুষ্ঠানে ডাকা হয়নি বলে অভিযোগ। তা নিয়ে একসময় ঘনিষ্ঠ মহলে কেতুগ্রামের বিধায়ক অসন্তোষও প্রকাশ করেছেন। সেই সাহানেওয়াজকে শুধু ডাকাই নয়, অনুষ্ঠানের জন্য সরকারি যে আমন্ত্রণপত্র ছাপা হয়েছে, তাতেও তাঁর নাম দেওয়া হয়েছে। তৃণমূল সূত্রের খবর, কালীঘাটে বৈঠকের পরেই ফের নানুরে ‘যুদ্ধ-বিরতি’র দিকে এগোয় দলীয় নেতৃত্ব। তারই অন্যতম ফল হিসেবে এ দিনের অনুষ্ঠানের সরকারি বিজ্ঞাপনে নাম রাখা হয় সাহানেওয়াজের। দলের এক শীর্ষনেতার দাবি, ‘‘শুক্রবার বীরভূমে এসে দিদি দেখতে না পেয়ে প্রথমেই অনুব্রতদের কাছে সাহানেওয়াজ কেন আসেনি, তার খোঁজ নেন। খবর পেয়ে রাতেই বোলপুরে পৌঁছে গিয়েছিলেন সাহানেওয়াজ।’’

এ দিকে, পাশের জেলার বর্ধমানের বিধায়ক ডাক পেলেও এই সরকারি অনুষ্ঠানেও অতীতের মতোই আমন্ত্রণ পাননি জেলার চার বাম বিধায়কদের কেউ-ই। অথচ সরকারি মঞ্চে দেখা গিয়েছে দুবরাজপুরের শৈলেন মাহাতো, বোলপুরের গগন সরকারের মতো স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের। এমনকী, মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী নিজে নাম নিয়েছেন ওই নেতাদের। কেন এমন হল? মুখে কুলুপ এঁটেছে তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর। সদুত্তর দিতে পারেনি জেলা প্রশাসনও। জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি আধিকারিক গৌতম গঙ্গোপাধ্যায় কেবল বলেন, ‘‘এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না।’’

কোন মুখে প্রশাসনের কর্তারা জবাব দেবেন, প্রশ্ন তুলেছেন দুবরাজপুরের ফরওয়ার্ড ব্লকের বিধায়ক বিজয় বাগদি, সাঁইথিয়ার সিপিএম বিধায়ক ধীরেন বাগদিরা। তাঁদের ক্ষোভ, ‘‘এই আমলে তৃণমূল নেতারা যেমন কোনও সৌজন্য-শিষ্টাচারের ধার ধারেন না, তেমনই আইন মানেন না প্রশাসনের লোকেরাও। তাই পাশের জেলা থেকে বিধায়ক ধরে আনেন, এমনকী তৃণমূল নেতাদেরও মঞ্চে তোলেন। অথচ আমরা বিরোধী রাজনীতি করি বলে কোনও অনুষ্ঠানেই ডাক পাই না।’’

এই পরিস্থিতিতে সরকারি মঞ্চকে মুখ্যমন্ত্রী রাজনৈতিক প্রচারের কাজে ব্যবহার করছেন বলেই অভিযোগ করছেন সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তথা এলাকার প্রাক্তন সাংসদ রামচন্দ্র ডোম। তাঁর বক্তব্য, ‘‘যে পাচামি এলাকায় প্রস্তাবিত কয়লাখনির মুখ্যমন্ত্রী শিলান্যাস করলেন, সেখানকার স্থানীয় বিধায়ককে কেন ডাকা হল না? জেলার অন্যান্য বাম বিধায়কই বা কেন ডাক পেলেন না? আসলে সরকার আর দল এক হয়ে গিয়েছে। নিজেদের গোষ্ঠী-কোন্দলের সমীকরণ বদলানোর জন্য সরকারি মঞ্চকে ব্যবহার করা হচ্ছে।’’ অনুব্রতরা অবশ্য সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

—নিজস্ব চিত্র।

state news mamata banerjee gadadhar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy