জ্যোতি বসুর প্রয়াণের পরে বামফ্রন্টের প্রবীণতম নেতা তিনিই। দলই যে হেতু বহু দিন ধরে তাঁর পরিবার, তাই দলীয় মহলেই প্রতি বছর পালন করা হয় তাঁর জন্মদিন। এ বার সেই জন্মদিনের অবসরেই প্রবীণ বাম নেতা অশোক ঘোষের কাছে বার্তা পৌঁছে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের ফোন বা বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুর নিজের হাতে রাঁধা পায়েস অগ্রজ নেতার কাছে পৌঁছনোর আগেই বৃহস্পতিবার পৌঁছে গেল মমতার বার্তা! ফোনে শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশিই সশরীর অশোকবাবুর সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন তৃণমূল নেত্রী। আগামী বিধানসভা নির্বাচন মাথায় রেখে রাজনৈতিক নানা সমীকরণ নিয়ে চর্চা যখন তুঙ্গে, সেই সময়েই বাম নেতার প্রতি তৃণমূল নেত্রীর এই শুভেচ্ছা-বার্তা নতুন জল্পনারও জন্ম দিয়েছে!
ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সম্পাদক অশোকবাবুর ৯৪তম জন্মদিন যখন কলকাতায় পালিত হচ্ছে, তৃণমূল নেত্রী তখন দার্জিলিঙের পথে। ধস-বিধ্বস্ত পাহাড়ি এলাকা সরেজমিনে দেখতে ব্যস্ত। সেখান থেকেই তিনি ফোনে ধরেছিলেন অশোকবাবুকে। প্রবীণ নেতাকে শুভেচ্ছা জানিয়েই তাঁর কাছে এসে কথা বলার ইচ্ছাও প্রকাশ করেছেন তিনি। অশোকবাবুর কথায়, ‘‘মমতা বলেছেন, ওঁর ইচ্ছা ছিল আজই আমার কাছে এসে দেখা করার। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে জরুরি ভিত্তিতে তাঁকে উত্তরবঙ্গে চলে যেতে হয়েছে। উনি জানিয়েছেন, কলকাতায় ফিরে পরে এক দিন এসে দেখা করতে চান।’’ ফোনে বার্তা পাঠানোর পরে মুখ্যমন্ত্রীর তরফে দূত মারফত ফুল-মিষ্টিও পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে ফ ব-র রাজ্য দফতরে। পরে রাজ্য দফতর প্রাঙ্গনেই প্রয়াত নেতা হেমন্ত বসুর একটি মূর্তির উদ্বোধন করেছেন অশোকবাবু।
বাম জমানার শেষ দিকে অশোকবাবুর সঙ্গে তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতার সম্পর্ক মসৃণই ছিল। নন্দীগ্রাম-পর্বে টানা সংঘর্ষ বন্ধ করার লক্ষ্যে অশোকবাবুর উদ্যোগে ফ ব দফতরে গিয়ে তাঁর সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন তৃণমূল নেত্রী। মহাজাতি সদনে সর্বদল বৈঠকেরও আয়োজন করেছিলেন অশোকবাবু। যাতে শাসক সিপিএম এবং বিরোধী তৃণমূলকে এক টেবিলে বসানো যায়। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরেই রেড রোডে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিন পালন নিয়ে রাজ্য সরকারের সংঘাত বেধেছিল ফ ব-সহ বাম নেতৃত্বের। তার পরে আবার পারস্পরিক সম্পর্কে সৌহার্দ্য ফেরাতে এ বার উদ্যোগী হলেন মমতাই। তৃণমূলকে রুখতে কংগ্রেস এবং মুকুল রায়ের সঙ্গেও নৈকট্য গড়ে তোলার প্রস্তাব যখন উঠতে শুরু করেছে বাম শিবির থেকে, সেই সময়ে বর্ষীয়ান বাম নেতার প্রতি মমতার বার্তায় ভিন্ন তাৎপর্য দেখছেন কেউ কেউ।
তৃণমূলের এক রাজ্য নেতা অবশ্য বলছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী সব সময়েই সৌজন্য এবং প্রবীণদের প্রতি শ্রদ্ধায় বিশ্বাস রাখেন। রাজনৈতিক বিরোধ সত্ত্বেও জ্যোতিবাবুকে ব্যক্তিগত ভাবে তিনি শ্রদ্ধা জানাতেন। এটাও নিখাদ সৌজন্য। এর মধ্যে অন্য জল্পনা খোঁজা অর্থহীন!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy