Advertisement
E-Paper

বলপাহাড়ি নিয়ে নতুন বিবাদে মমতা-ডিভিসি

রাজ্যকে না জানিয়ে বাঁধের জল ছেড়ে ‘ম্যান মেড’ বন্যা ও বাঁধের পলি সরানো নিয়ে এত দিন রাজ্য সরকার ও ডিভিসি-র মধ্যে তরজা চলছিল। এ বার নতুন বিবাদ শুরু হল ঝাড়খণ্ডের বলপাহাড়ি জলাধার নিয়ে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৬ ০৪:১৯

রাজ্যকে না জানিয়ে বাঁধের জল ছেড়ে ‘ম্যান মেড’ বন্যা ও বাঁধের পলি সরানো নিয়ে এত দিন রাজ্য সরকার ও ডিভিসি-র মধ্যে তরজা চলছিল। এ বার নতুন বিবাদ শুরু হল ঝাড়খণ্ডের বলপাহাড়ি জলাধার নিয়ে।

ডিভিসি-কর্তারা বলছেন, বলপাহাড়ি জলাধার তৈরি হলে পশ্চিমবঙ্গে বন্যা পরিস্থিতি আরও ভাল ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যেত। কিন্তু রাজ্য তাতে এখনও খুব একটা উৎসাহ দেখাচ্ছে না। উল্টো দিকে রাজ্যের দাবি, ওই বাঁধ তৈরি হলে রাজ্যের কী উপকার হবে, ডিভিসি-র থেকে সেই জবাব মেলেনি। এই বিবাদ বন্ধ করে পশ্চিমবঙ্গের বন্যা নিয়ে সমস্যার সমাধান খুঁজতে রাজ্য সরকারের সঙ্গে ডিভিসি ও কেন্দ্রীয় জল কমিশনের কর্তাদের আলোচনায় বসতে বললেন কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎমন্ত্রী পীযূষ গয়াল। দিল্লিতে বৈঠক হলে পীযূষ নিজেই তাতে সভাপতিত্ব করতে পারেন। রাজ্য সরকার চাইলে কলকাতাতেও বৈঠক হতে পারে।

দক্ষিণবঙ্গের বন্যাকে ‘ম্যান মেড’ আখ্যা দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ তুলেছেন, বাংলা-ঝাড়খণ্ডের মধ্যেকার বাঁধ, ব্যারাজগুলি থেকে বিনা নোটিসে জল ছাড়া হচ্ছে। প্রয়োজনে তিনি আইনি ব্যবস্থা নেবেন বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। উল্টো দিকে ডিভিসি-র চেয়ারম্যান অ্যান্ড্রু ল্যাংস্টির যুক্তি, কেন্দ্রীয় জল কমিশন, ডিভিসি, পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ডের প্রতিনিধিদের নিয়ে তৈরি দামোদর ভ্যালি রিজার্ভার রেগুলেশন কমিটিই জল ছাড়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়। কাজেই রাজ্যকে না জানিয়ে জল ছাড়ার প্রশ্ন নেই। বাঁধ ও ব্যারাজগুলি থেকে ড্রেজিং করে পলি সরানো নিয়েও দায় ঠেলাঠেলি চলছে রাজ্য ও ডিভিসি-র মধ্যে। মমতার অভিযোগ, ডিভিসি বাঁধের পলি ড্রেজিং না করায় জলাধারগুলির গভীরতা কমে গিয়েছে। ফলে বন্যা হচ্ছে। উল্টো দিকে ডিভিসি-র বক্তব্য, বাঁধের পলি সরানো যেমন কঠিন, তেমনই খরচসাপেক্ষ। তার বদলে রাজ্য সরকার নিজের দায়িত্বে থাকা দুর্গাপুর ব্যারাজ ও তার খালের পলি সরালে বন্যা পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা যেত।

মমতা অবশ্য এই অভিযোগ মানছেন না। ঘনিষ্ঠ মহলে তিনি জানিয়েছেন, তাঁর সরকার খালের সংস্কার করে, নতুন জলাশয় তৈরি করেছেন বলেই প্রতি বছর পুজোর সময় বন্যা হচ্ছে না। নইলে বাম আমলে প্রতি বছরই দুর্গাপুজোর সময় বন্যা হতো। সিপিএম কৌটো হাতে বন্যাত্রাণে চাঁদা তুলত। তবে এই টানাপড়েনের মধ্যেই প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী এ দিন বলেন, ‘‘দিদি বলছেন ম্যান মেড বন্যা, আমি বলছি ওম্যান মেড বন্যা। কারণ ডিভিসি যখন জল ছাড়ে তখন রাজ্যের অনুমতি নিয়েই ছাড়ে।’’ তবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পীযূষ গয়াল মনে করছেন, পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও ডিভিসির মধ্যে এই ভাবে দায় ঠেলাঠেলি চললে সমস্যার সমাধান হবে না। তার বদলে দু’পক্ষ একসঙ্গে আলোচনায় বসে সমাধান সূত্র বের করুক।

ডিভিসি কর্তাদের মতে, মাইথন থেকে ৫২ কিলোমিটার উপরে বলপাহাড়ি জলাধার তৈরি হলে সেখানে সাত লক্ষ একর ফিট জল ধরে রাখা যেতে পারে। এখন প্রবল বর্ষায় মাইথন ও পাঞ্চেত জলাধারে জল ধরে রাখা হয়। বলপাহাড়ি
হলে ওই দু’টির উপর চাপ কমবে। ২০১২ সালে বলপাহাড়ির ‘ডিটেলস প্রজেক্ট রিপোর্ট’ (ডিপিআর)
তৈরির কাজ শুরু করেছিল ‘সেন্ট্রাল ওয়াটার কমিশন’ (সিডব্লিউসি)। ওই অঞ্চলে গিয়ে সমীক্ষা করার পাশাপাশি বরাকর নদীর জল কী ভাবে কোথা থেকে আসবে, কত জল ধরে রাখা সম্ভব হবে— সেই বিষয়গুলি খতিয়ে দেখেই প্রকল্পের নকশা তৈরি করা হয়। গত বছর রাজ্যের অনুমতির জন্য তা প্রস্তাব আকারে জমাও দেওয়া হয়। রাজ্যের সেচ দফতরের পাল্টা যুক্তি, ডিভিসি-র পাঠানো ডিপিআর তারা খতিয়ে দেখেছে। কিন্তু বলপাহাড়ি জলাধার তৈরি করলে রাজ্যের কী উপকার হবে, তার বিস্তারিত কোনও বিবরণ সেখানে নেই। রাজ্য ডিভিসি-র
কাছ থেকে তা জানতে চাওয়া হলেও জবাব মেলেনি।

তবে এই জলাধার নির্মাণের জন্য মোট খরচের অনেকটা এ রাজ্যকেই বহন করতে হবে। ডিভিসি কর্তাদের যুক্তি, সংস্থার নিজস্ব আর্থিক সঙ্কট রয়েছে। এই জলাধার নির্মাণের জন্য প্রাথমিক ভাবে প্রায় ২৫০০ কোটি টাকা খরচ ধরা হয়েছে। যেখানে পাঞ্চেত ও মাইথনের পলি তুলতে এর থেকে বেশি টাকা খরচ করতে হবে। তবে বাঁধ তৈরির কত টাকা পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ডের মধ্যে ভাগাভাগি হবে ও কেন্দ্র কত টাকা দেবে তা ঠিক হয়নি।

belpahari mamata DVC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy